‘ভারতের বিপক্ষে পার্থক্য গড়ে দেবে হামজা’


‘ভারতের বিপক্ষে পার্থক্য গড়ে দেবে হামজা’
তার সময়ে জাতীয় ফুটবল দলে প্রবাসী ফুটবলারদের আসা শুরু। প্রথমে জামাল ভূঁইয়া। সবশেষ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরী। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ইংলিশ ফুটবলারের জাতীয় দলে যোগ দেওয়া নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাবেক সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।প্রশ্ন : অবশেষে হামজা চৌধুরী বাংলাদেশে এসেছেন। আপনার অনুভূতি কী?কাজী সালাউদ্দিন : খুব ভালো লাগছে। তিন বছর আগে থেকে আমরা হামজাকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য চেষ্টা করেছি। সেই কষ্ট সার্থক হয়েছে। অবশেষে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পারছে সে।প্রশ্ন : কোন ভাবনা থেকে হামজাকে পছন্দ করেছিলেন?সালাউদ্দিন : বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা অনেক ভেবেছি। আমাদের চোখ ছিল ইউরোপে। শেষ পর্যন্ত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লেস্টার সিটিতে খেলা হামজার খোঁজ পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, ইউরোপে খেলা একজন ফুটবলার আমাদের দেশে খেলবে, এটা অনেক গর্বের বিষয়। অবশেষে সেই ভাবনা বাস্তবে রূপ নিয়েছে।প্রশ্ন : হামজা আসায় বাংলাদেশ দলের শক্তি কতটা বাড়বে?সালাউদ্দিন : অনেক বাড়বে। আমার মনে হচ্ছে না যে, ভারতের এবারের দলটি শক্তিশালী। কারণ তারা অবসরে যাওয়া ৪০ বছর বয়সি ফরোয়ার্ড সুনীল ছেত্রীকে ফিরিয়েছে। ৪০ বছর বয়সি একজন ফুটবলারকে কখন ফেরাতে হয়, যখন দলটি দুর্বল। এতদিনেও তারা সুনীলের পরিবর্তিত ফুটবলার খুঁজে পায়নি। ভারতের ফ্রন্টলাইন দুর্বল হয়ে পড়েছে। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হামজা বাংলাদেশের জন্য খুবই ভালো হবে। এই পজিশনে বাংলাদেশ দুর্বল ছিল। ভারতের বিপক্ষে হামজা পার্থক্য গড়ে দেবে বলে আমার বিশ্বাস।প্রশ্ন: হামজার মতো এমন আরও দু-একজন ফুটবলার এলে বাংলাদেশ দল কি আরও শক্তিশালী হবে?সালাউদ্দিন : হামজার মতো এমন দুর্দান্ত প্রবাসী ফুটবলার ইউরোপে আর কেউ খেলছে বলে আমার জানা নেই। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে হামজাই টপ পজিশনে। এরকম আরও দু-একজন ফুটবলার এলে আমাদের শক্তি বেড়ে যাবে বহুগুণে।প্রশ্ন: অনেকে আশা করছেন হামজা আসায় আমরা এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের পরবর্তী পর্বে কোয়ালিফাই করতে পারব। আপনারও কি তাই মনে হয়?সালাউদ্দিন : আমি অনুমান করে বলতে পারি, আশা করি, যেতে পারব। কারণ, দল সৌদি আরবে অনুশীলন করেছে। সবাই একসঙ্গে খেলছে অনেকদিন ধরে। আশা করা যায় পরবর্তী পর্বে যেতে পারবে।প্রশ্ন : আমরা দেখেছি ডেনমার্ক প্রবাসী মিডফিল্ডার জামাল ভূঁইয়া আসায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এখন হামজা আসায় আরও হবে। আপনিও কি তাই মনে করেন?সালাউদ্দিন : আশা ছিল বলেই তিন বছর আগে থেকে আমরা ওর পেছনে দৌড়েছি। সমস্যার মধ্যেও এগিয়েছি। ভালো হবে বলেই করেছি। বিএফএফের নির্বাহী কমিটির অনেক সদস্য আমাকে গালাগাল করেছে হামজাকে আনার বিষয়ে। বিরোধিতা করেছে। এখন তারাই দৌড়ে গেছে হামজাকে অভ্যর্থনা জানাতে। আমি আশ্চর্য হয়েছি।প্রশ্ন : হামজা আসায় দেশের ফুটবলে আকাক্সক্ষা বেড়েছে। তা ধরে রাখার বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?সালাউদ্দিন : হামজাকে অনেক কষ্ট করে আনা হয়েছে। দলের সবাই এই কষ্টের মূল্য দেবে। এটা তাদের জন্যই ভালো হবে। বিরোধিতা আগেও করেছে। এখনো করবে। কিছু লোকের কাজই হলো সমালোচনা করা। আর কিছু লোক কাজও করে, গালিও খায়। আবার কিছু লোক কাজ করবে না; কিন্তু সমালোচনা করবে। তাই হামজা আসায় যে উচ্চাকাক্সক্ষা তৈরি হয়েছে, তা ধরে রাখতে হবে। সামনে এগিয়ে যেতে হবে।প্রশ্ন: জাতীয় দলের তারকা ফুটবলার ছিলেন আপনি। জাতীয় দলকে কোচিংও করিয়েছেন। বাফুফের সভাপতি হিসাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন ১৬ বছর। হামজা আসায় বাংলাদেশর ফুটবলকে কতদূর এগিয়ে যেতে দেখছেন?সালাউদ্দিন : একজন হামজা দিয়ে কিছু হবে না। এটা ক্রিকেট নয়, যে একজন ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকাবে। অন্যজন ১০ উইকেট তুলে নিয়ে দলকে জেতাবে। এটা ফুটবল। এভাবে প্রেডিক্ট করা যাবে না। তবে প্রেডিক্ট যেটা করা যাবে, হামজা আসায় দলের জন্য ভালো হয়েছে। সামনেও ভালো হবে। তবে কতটুকু ভালো হবে, তা সময়ই বলে দেবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, হামজা যদি একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারত, তাহলে দলের অন্যরা তাকে সহজে বুঝে নিতে পারত। সে সরাসরি ভারতের সঙ্গে খেলছে। তাই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক আসরে হামজাকে বোঝার জন্য সময় পাচ্ছে না অন্যরা।প্রশ্ন : জাতীয় ফুটবল দলের প্রতি আপনার কী বার্তা থাকবে?সালাউদ্দিন : ঠান্ডা মাথায় ভারতের সঙ্গে খেলবে। রেজাল্ট যাই হোক। খুব ভালো রেজাল্ট না হলেও সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের সঙ্গে রেজাল্ট বের করতে পারলে পরের পর্বে যাওয়ার আশা থাকবে। এই সুযোগটা যেন নষ্ট না হয়।