মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি সাংবাদিককে অপহরণের অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত


মালয়েশিয়ায় এক বাংলাদেশি সাংবাদিককে অপহরণের অভিযোগে সন্দেহভাজন তিন পুলিশ কর্মকর্তার একজনকে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কুয়ালালামপুরের পুলিশপ্রধান আলাউদ্দীন আব্দুল মজিদ বলেছেন, সেলাঙ্গর পুলিশের তদন্ত শেষে অন্য দুই কর্মকর্তাও একই ধরনের পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে পারে। কুয়ালালামপুর পুলিশের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছি। বৃহস্পতিবার পুলিশ কন্টিনজেন্ট সদর দফতরে মাসিক সমাবেশের পর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন কুয়ালালামপুর পুলিশপ্রধান। এর আগে বাংলাদেশি সাংবাদিককে অপহরণের অভিযোগে স্থানীয় তিন সরকারি কর্মকর্তাসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে দেশটির পুলিশ। সোমবার বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছিল সেলাঙ্গর রাজ্যে পুলিশ। পুলিশের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোও অপহরণের খবর প্রকাশ করে। গত ৭ নভেম্বর অপহরণের ঘটনা ঘটে। তিন দিন পর ৯ নভেম্বর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অপহৃত বাংলাদেশি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক। পাশাপাশি মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তার নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ। সেলাঙ্গর রাজ্যের পুলিশপ্রধান দাতুক হুসেইন ওমর খান বলেন, সাংবাদিকের ভাগিনার থানায় দায়ের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ক্লাং উপত্যকায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন বাংলাদেশিও রয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে গ্রেফতারকৃত বাংলাদেশির নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ। সেলাঙ্গর রাজ্যের পুলিশপ্রধান জানান, তিন সরকারি কর্মচারীকে আরও তদন্তের জন্য গোম্বাক জেলা পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (বিএসজে) কার্যালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। এরপর তাদের গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে স্থানীয় তিন বেসামরিক নাগরিককেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া আরও তিনজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। মুক্তি পাওয়ার পর ভুক্তভোগী (সাংবাদিক) হারিয়ান মেট্রোতে এক সাক্ষাতে জানান, নিজেদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য দাবি করে তিনজন স্থানীয় ব্যক্তি তার পুত্রজায়ার বাসায় প্রবেশ করে এবং থানায় মামলার কথা বলে তুলে নেয়। পরে তাকে সেলাঙ্গর রাজ্যের শাহ আলমের একটি অজ্ঞাত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরও তাদের সঙ্গে আরও কয়েকজন ব্যক্তি যোগ দেয়। সেখান থেকে একটি বিএমডব্লিউ গাড়িতে করে তাকে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। জঙ্গলের ভেতর তাকে মারধর শুরু করে অপহরণকারীরা। মারধরে দেলোয়ার হোসেন ও কাজী নামে দুই বাংলাদেশি সরাসরি যুক্ত ছিল সেই সঙ্গে ১৯ লাখ মালয় রিঙ্গিত মুক্তিপণ দাবি করে বলে এই প্রতিবেদককে জানান ভুক্তভোগী সাংবাদিক। তিনি জানান, মানি লন্ডারিং ও সিন্ডিকেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণার বিরুদ্ধে কাজ করায় তাকে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি জানান, সেখান থেকে এক ঘণ্টারও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে তারা তাকে সেলাঙ্গরের ক্লাংয়ের একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেই বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর আবারো শুরু হয় নির্যাতন। এতে হাত-পাসহ সারা শরীরে ক্ষত তৈরি হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে তাকে একটি ভিডিও দেখানো হয়। যেখানে একটি লোককে গলা কেটে হত্যা করা হচ্ছে বলে দেখা যায়। ওই ভিডিও দেখিয়ে হুমকি দেওয়া হয়, তাদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ না দিলে তার সঙ্গেও একই কাজ করা হবে অর্থাৎ জবাই করে হত্যা করা হবে। এতে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান সাংবাদিক। প্রাণভয়ে অপহরণকারীদের ৫০ হাজার মালয় রিঙ্গিত অনলাইনে ট্রান্সফার করে দেন ভুক্তভোগী। সাংবাদিক বলেন, পরদিন ৮ নভেম্বর অপহরণকারীদের একজন তার শরীরের ক্ষতের চিকিৎসার জন্য ক্লিনিকে নিয়ে যায়। ওই সময় ক্লিনিক থেকে পালিয়ে যান তিনি। গিয়ে অনেকের কাছে সাহায্য চাইলেও কেউ সাহস করে এগিয়ে আসেনি। তারা আবারো তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং নির্যাতন করে। অপহরণের তৃতীয় দিন ৯ নভেম্বর সাংবাদিককে সেলাঙ্গর রাজ্যের ক্লাংয়ের কাপার এলাকার একটি ব্যাংকের পাশে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুক্তি পাওয়ার পর সাংবাদিক গোমবাক জেলা পুলিশ সদর দফতরে (আইপিডি) একটি অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সেলাঙ্গর পুলিশপ্রধান দাতুক হোসেন ওমর খান। এদিকে অপহরণের শিকার বাংলাদেশি সাংবাদিক মুক্তি পেলেও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার ফোন করে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন তিনি।