শতকে বরবটি বেগুন, মাছ মাংসে আগুন


নিত্যপণ্যের বাজারে আপাতত নেই স্বস্তির কোনো খবর। কখনও চাল-আটা, তেল-চিনির দাম বাড়ে; কখনও বাড়ে মাছ-মাংসের। আবার কখনও ছোটে সবজি। এবার পুরো শীত মৌসুমে সবজির দাম ভুগিয়েছে ক্রেতাকে। এখন গ্রীষ্মের সবজি আসা শুরু করলেও দাম চড়া। এ ছাড়া চড়ে থাকা মাছ-মাংসের বাজার এখনও বাগে আসেনি। ফলে অনেকের নাগালের বাইরে প্রাণিজ আমিষ জাতীয় এ দুটি পণ্য। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালী, তেজকুনিপাড়া ও কারওয়ান বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরবটি, গোল বেগুন, কচুর লতিসহ কয়েকটি সবজির দাম শতক ছুঁয়েছে। এ ছাড়া করলা, ঢ্যাঁড়শ, পটোল, চিচিঙ্গাসহ বেশিরভাগ সবজিও বিক্রি হচ্ছে শতকের কাছাকাছি দামে। সবজি বিক্রেতারা বলেছেন, ইফতারি তৈরিতে ব্যবহার হয় এমন কিছু সবজির চাহিদা রোজায় বাড়ে। জোগানে ঘাটতি না থাকলেও চাহিদা বাড়ার কারণেই মূলত দাম চড়ে যায়। ইফতারির অন্যতম উপাদান বেগুনি। রোজার এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও এখনই বাজারে প্রতি কেজি গোল বেগুন ৯০ থেকে ১০০ এবং লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ধনেপাতার দামও বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকা দরে। মাঝে কয়েকদিন কাঁচামরিচের দাম কম ছিল। ধীরে ধীরে দাম বাড়ছে মরিচেরও। বড় বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লায় ২৫০ গ্রাম মরিচ কিনতে গেলে গুনতে হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা। প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়শ কিনতে লাগছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হচ্ছে কচুরলতি। এক কেজি লতির দাম বিক্রেতারা হাঁকছেন ১২০ টাকা। শজনে ডাঁটার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। বিক্রেতাদেরই ভাষ্য, বছরের এ সময় মুলার কেজি ২০ টাকার আশপাশে থাকে। তবে এ সবজিটি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। তবে মোটামুটি নাগালের মধ্যে রয়েছে টমেটো, শিম, পেঁপে। এর মধ্যে টমেটো ৩০ থেকে ৪০, শিম ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারে মুলার কেজি ৪০ টাকা শুনে চোখ কপালে উঠল ক্রেতা রুহুল আমীনের। বিক্রেতাকে তিনি বলেন, ‘আসলে মুলার দাম এত বেশি কেন? বিক্রেতা দুলাল আহমেদ বলেন, ‘মুলার কেজি এখন বড়জোর ২০ টাকা হওয়ার কথা। তবে আমরা ডাবল দামে বিক্রি করি। এ দোষ আমাদের নয়। প্রতিদিন পাইকারি বাজারে দাম বাড়ে-কমে। পাইকারিতে বাড়লে খুচরায় বেড়ে যায়। মাসখানেক ধরে গরুর মাংস বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। হাড়সহ প্রতিকেজি কিনতে গুনতে হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। হাঁড় বাদে কিনতে গেলে অতিরিক্ত আরও ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দিতে হয়। অথচ মাসখানেক আগেও হাড়সহ গরুর মাংস কেনা যেত ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। মধ্যবিত্তদের অনেকেই গরুর মাংসের বাড়তি দামের কারণে ভিড় করছেন ব্রয়লার মুরগি ও মাছের বাজারে। ফলে এ পণ্য দুটির দামও তেতে আছে। ভোক্তা অধিদপ্তরের নানা পদক্ষেপেও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি ব্রয়লার মুরগির দাম। এক-দেড় মাস আগে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। ধাপে ধাপে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। ব্রয়লারের কারণে বেড়েছে সোনালি জাতের মুরগির দাম। বিক্রেতারা এ জাতীয় মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা। এ ছাড়া ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে দেশি মুরগি। গত সপ্তাহের মতো ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা দরে। গরুর মাংস আর মুরগি উস্কে দিয়েছে মাছের বাজারকে। পাঙাশ, তেলাপিয়া ও চাষের কই মাছও এখন দামি মাছ হয়ে উঠেছে। পাঙাশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৩০ টাকা দরে। মাস খানেক আগে এ মাছ কেনা গেছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। দুই-তিন মাস আগে ১৪০ বা ১৫০ টাকায় এক কেজি তেলাপিয়া পাওয়া যেত। সেই সুযোগ আর নেই। বড় আকারের তেলাপিয়ার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে। চাষের কই মাছও বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৬০ টাকায়। এ ছাড়া মানভেদে রুই-কাতলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দামে। অনেকের নাগালের বাইরে চিংড়ি আর ইলিশ। আকারভেদে চিংড়ি ৬০০ থেকে ১ হাজার এবং ইলিশ ৭০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক বছরে গরু মাংসের দাম ১৬, ব্রয়লারের দাম ৫১, ডিম ১৫ এবং রুই মাছের দাম প্রায় ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। একদিকে খাদ্যের দাম বেড়েছে, অন্যদিকে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন কমেছে। এ কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে বলে জানান মুরগি ব্যবসায়ীয়রা। পশ্চিম নাখালপাড়ার মায়ের দোয়া ব্রয়লার হাউসের বিক্রেতা রাকিব হোসেন বলেন, খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে পাইকারি বাজারে মুরগির দাম বাড়তি। কয়েকবার দাম বাড়ানোর পরও সরকার চিনি আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে। এর পরও কমেনি চিনির দাম। আগের মতোই ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দরে চিনি বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। টিসিবির হিসাবে এক বছরে ৪৯ শতাংশ দাম বেড়েছে চিনির। ছোলার দাম অপরিবর্তিত দেখা গেছে। গত সপ্তাহের মতো মানভেদে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া চাল, তেলসহ অন্যান্য পণ্যের দামে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি।