শ্রীলঙ্কায়ও ইন্ডিয়া আউট আন্দোলনের ডাক


দেশে দেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের দাবি জোরালো হচ্ছে দিনের পর দিন। ইউরোপ, আমেরিকা, সিঙ্গাপুর, হংকং, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালদ্বীপের পর এবার এই কাতারে নাম লিখালো শ্রীলঙ্কাও। শ্রীলঙ্কার তরুণরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বর্জের ঢাক দিয়েছে। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, মালদ্বীপ ও বাংলাদেশের পর এবার শ্রীলঙ্কায় শুরু হয়েছে ইন্ডিয়া আউট আন্দোলন। সম্প্রতি দেশটির কর্তৃপক্ষ ভারতের সাথে সম্পৃক্ত একটি কোম্পানিকে বিমানবন্দরে ভিসা প্রসেসিংয়ের দায়িত্ব হস্তান্তর করলে এই আন্দোলন গতি পায়। গতকাল শুক্রবার (৩ মে) শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। জানা যায়, শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় আধিপত্য রুখে দিতে শুরু হয়েছে ইন্ডিয়া আউট আন্দোলন। সম্প্রতি দেশটির বিমানবন্দরে ভিসা প্রসেসিংয়ে ভারতীয় কোম্পানিকে সম্পৃক্ত করা হলে এই আন্দোলন গতি লাভ করে। সেখানে দেশটিতে ভারতের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং দেশের সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তারা দাবি করে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ও কৌশলগত খাতগুলো এখন ভারতীয় আধিপত্যবাদের দখলে। এর একটি নমুনা দৃষ্টিগোচর হয়েছে বিমানবন্দরের এই ঘটনার মধ্য দিয়ে। বাড়লো সোনার দাম জামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় এক আন্দোলনকর্মী গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমরা ভারতীয় আধিপত্যবাদের দাস নই। সেজন্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে আমরা আরো কঠোরভাবে প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।’ অন্য একজন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে আমরা এখন ন্যাশনাল ইমেগ্রেশন অফিসের সামনে আছি। এখান থেকে ভিনদেশী ও অ-শ্রীলঙ্কানদের হাতে আমাদের রাষ্ট্রীয় অধিকার হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা এখানে প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। আমরা সম্প্রতিকালের এই ঘটনাকে আলাদা কোনো ইস্যু হিসেবে দেখি না। বরং এটিকে আমাদের অর্থনীতি ও রাষ্ট্রের কৌশলগত খাতগুলোকে দখলে নেয়ার বৃহত্তর ভারতীয় প্রচেষ্টার একটি আন্তঃসংযুক্ত ইস্যু হিসেবে দেখি।’ ভিন্ন এক আন্দোলনকর্মী বলেন, ইতিহাসে কখনোই অখণ্ড ভারত ছিল না। ভবিষ্যতেও কখনো হবে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের এই সরকারের দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা এবং ভারতের আশির্বাদ নিতে আগ্রহী বিরোধী দলীয় নেতারা মনে করেন যে তারা যদি ভারতকে সহযোগিতা করে, তাহলে তাদের পক্ষে ক্ষমতা গ্রহণ করা সহজ হবে। সেজন্য ভারতকে তারা এভাবে সুযোগ করে দিচ্ছে। এক বিক্ষোভকারী বলেন, সম্প্রতি মাত্তালা বিমানবন্দরের দায়িত্ব ভারতীয় কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও অনেক অর্থনৈতিক চুক্তি এবং ভারতের স্বার্থ রক্ষিত হয়, এমন নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরকার এমন একটি মুক্ত বাণিজ্যের পথ উন্মোচন করেছে, যেটি কেবল ভারতের স্বার্থই রক্ষা করে। শ্রীলঙ্কার জনগণ বা শ্রীলঙ্কা রাষ্ট্রের স্বার্থ বিবেচনা করে না। এদিকে, কলম্বোতে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, বিমানবন্দরের দায়িত্ব নেয়া ওই কোম্পানি ভারতের নয়। এর সদর দফতরও ভারতে অবস্থিত নয়। কিন্তু তাদের এই বিবৃতি আন্দোলন বা উদ্বেগ কোনোটিকেই প্রশমিত করতে পারেনি। বরং আন্দোলনের গতি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালদ্বীপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়ে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন চীনপন্থী নেতা মুহাম্মদ মুইজ্জু। মুইজ্জু ক্ষমতায় বসার পর তিনি প্রথম ইন্ডিয়া আউট প্রচারাভিযান শুরু করেন। এরপরই তিনি ভারতকে তার সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের চাপও দেয়। তখন ভারতের সাথে মালদ্বীপের সম্পর্কে ফাটল ধরে। গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচন বয়কটের ডাক দেয় বিরোধী রাজনৈতিক জোট বিএনপি। ফলে অনেকটা একতরফা নির্বাচনে জয় নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় বসে আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়েও ছিল নানা প্রশ্ন। বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষের একটা অংশ মনে করে, আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর নয়াদিল্লীর কূটনৈতিক সমর্থনের কারণেই বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। যে কারণে এবার নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলন শুরু করে এই সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়। এই নির্বাচনের পরপর দেশ ও দেশের বাইরে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক ধরনের প্রচারণা শুরু হয়। হ্যাশট্যাগ ‘ইন্ডিয়াআউট’ এই প্রচারণায় তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই যোগ দেন।