সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা


সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের জন্য আন্দোলতরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাপান সফর থেকে ফেরার আগ পর্যন্ত ১ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করবেন তারা। এছাড়া সরকারের তিনজন উপদেষ্টা ও একজন সচিবের কাছে কর্মচারীরা স্মারকলিপি দেবেন। বুধবার দুপুর ২ টায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। এ সময় বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বাদিউল কবির।নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা আন্দোলন থেকে সরে যাইনি। স্মারকলিপিও কর্মসূচির অংশ। ৩১ মে প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফেরার পর ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত না এলে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আন্দোলন মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে যাবে নাকি অবস্থান কর্মসূচি পালন করব সেটি পরে পরিস্কার করা হবে। আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা সরকারের চাকরি করি, এটা সত্যি। তবে আমাদের দাবি থাকতে পারে, সেগুলো প্রকাশের অধিকারও থাকতে হবে।বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বাদিউল আলম এ সময় বলেন, আমাদের যে দাবি তথা কালাকানুন প্রত্যাহারের বিষয়ে মোটামুটি একটা সবুজ সংকেত পেয়েছি। আশা করি কর্মচারীরা আমাদের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে যে ফল আসবে তাতে সন্তুষ্ট হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ফলে সরকারের ‍উচ্চ পর্যায়ে আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। এই কালো আইন বা নিবর্তনমূলক আইন রাষ্ট্রের জনগণ ও কর্মচারীদের জন্য ফলপ্রসূ কিছু বয়ে আনবে না। কর্মচারীদের কর্মপরিবেশ বজায় রাখতে আমরা সচেষ্ট। গতকাল মঙ্গলবার সচিবদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। সচিব কমিটি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে আজ আলোচনা করেছেন। তারা সুস্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত না দিলেও আমরা ধারণা করছি, আমাদের দাবি পূরণ হবে।চাকরিজীবীদের বিক্ষোভ-আন্দোলনে চ্যালেঞ্জের মুখে সরকার? সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ নিয়ে কর্মচারীদের কেন আপত্তি? কী আছে আইনে বদিউল কবির বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সরকারকে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়ে আসছি। ভবিষ্যতেও সহায়তা করব। প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় আমাদের কাঙিক্ষত বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে। রাষ্ট্র ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সামনে ঈদ ও বাজেট। আমরা যেহেতু সাধারণ মানুষের সেবক। কর্মচারীরা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কারণ যেন না হয় সেটি আমরা বিবেচনায় রাখছি। সবকিছু মাথায় রেখে আগামী দিনগুলোতে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই সঙ্গে জরুরি সেবার কথা বিবেচনায় রেখে সচিবালয়ে প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১১ টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। মাঠপর্যায়ে সব দপ্তর, পরিদপ্তর, ডিসি অফিসসহ অন্যান্য দপ্তরে প্রতিদিন কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। জরুরি সেবা যেমন- হাসপাতালে রুগীদের যারা সেবা দেন, বাজারে যার সেবা দেন তাদের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে আপনারা যত কম সময় পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন সম্ভব সেটি করবেন। সে বিষয়ে আপনারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নেবেন। আমার প্রস্তাব আপনার আধা ঘণ্টার কম সময় কর্মবিরতি পালন করবেন। জরুরি সেবা অব্যাহত রাখতে হবে।এর আগে সকালে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেখানে এ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।এদিকে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের জন্য আন্দোলতরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবিগুলো প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অবহিত করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশিদ।সচিবালয়ে চলমান সঙ্কট নিরসনে গঠিত সচিব কমিটির আহ্বায়ক ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে দেখা করলে তিনি এ কথা জানান।মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন ভূমির সিনিয়র সচিব সালেহ আহমেদ।তিনি সাংবাদিকদের জানান, গতকাল কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠকে কর্মচারীরা যেসব দাবি-দাওয়া তুলেছেন বা সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ নিয়ে কর্মচারীরা যেসব কথা বলছেন তিনি সেসব বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অবহিত করেছেন। সব শুনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ভূমি সচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে জানিয়েছেন যে, প্রধান উপদেষ্টা ৩১ মে জাপান থেকে দেশে ফিরবেন।এরপর তিনি সচিব কমিটির সদস্যদের নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে কর্মচারিদের দাবি তথা আপত্তির বিষয়টি অবহিত করবেন। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেই সেই আলোকে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।তিনি আরও বলেন, আমরাও সরকারের কর্মচারী। বিষয়টা যেহেতু সরকারের নীতি নির্ধারণী বিষয় সেহেতু সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে হবে।সচিবালয়ে কর্মচারীদের লাগাতার আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার সকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদ বেশ কয়েকজন সচিবকে নিয়ে জরুরি সভা করেন। ওই সভায় সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পর্যালোচনায় ৭ সদস্যের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সভা থেকেই কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে ভূমি সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অধ্যাদেশকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান কর্মচারীরা। তা না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।বিক্ষোভে অংশ নেওয়ারা বলেন, কালাকানুন যুক্ত করে প্রণীত অধ্যাদেশ কেউ মানবে না। ১৯৭৯ সালের সরকারি চাকরির বিশেষ বিধান ইতোমধ্যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাতিল করেছেন। এই বাতিল বিধান পুনরুজ্জীবিত করার মানে নতুনভাবে বিতর্ক তৈরি করা। বর্তমান সরকার সেই কাজটিই করেছে। এর ফলে কর্মচারীদের অধিকার খর্ব হবে, তারা কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়বে। কাজেই এই অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে। অন্যথায় যে কোনো মূল্যে এটা প্রতিহত করা হবে। প্রয়োজনে তারা আইন মন্ত্রণালয়ের সব রুমে তালা দেবেন বলে ঘোষণা করেন।