স্বজনদের জয়ের কারিগর এমপি-মন্ত্রীরাই


উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের স্বার্থে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও থামানো যায়নি তাদের। দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তারা ভোটের মাঠে থেকে যান। প্রথম ধাপের নির্বাচনে ১৩ উপজেলায় এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে বিজয়ীয় হয়েছেন অন্তত নয় জন। এর প্রায় সব জায়গাতেই স্বজনদের জয়ের পেছনে মূল কারিগর এমপি-মন্ত্রীরা। এছাড়া স্বজন না হলেও বিজয়ীদের অনেকেই ছিলেন (স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর) পছন্দের প্রার্থী। এসব উপজেলাগুলোতে ভোটে কারচুপি, কেন্দ্র দখল, ফলাফল নিজেদের পক্ষে ঘোষণাসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন পরাজিত প্রার্থীরা। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, কারা নির্বাচনে প্রভাব সৃষ্টির চেষ্টা করছে- তা নিয়ে দলের পক্ষ থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। কাজেই নির্বাচনের প্রভাব সৃষ্টির সুযোগ নেই। তিনি আরও বলেন, কি ভাবে ভোটার উপস্থিতি বৃদ্ধি করা যায়- তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন, ছোট ছোট দু-একটি ঘটনা ছাড়া প্রথম ধাপের নির্বাচন অনেক ভালো হয়েছে। নির্বাচনে সর্বস্তরের মানুষ পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ যেন নষ্ট না হয়, কেউ যেনো প্রভাব বিস্তা না করে সেদিকে লক্ষ্য থাকবে। নিজের স্বার্থে কেউ যদি দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে যায়, তাহলে অবশ্যই দল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। রামগড়ে পরাজীত প্রার্থী ও তার সমর্থকরা ভয়ে: রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী। তিনি সংসদ সদস্য ও পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার ভাতিজী জামাই। পরাজীত প্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদেরের দাবি- নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী এমপির প্রভাবের কারনে কয়েকটি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সরাসরি পক্ষপাত আচরণ করেছে। এজেন্টদের ভয়-ভীতি দেখানো হয়েছে। নির্বাচনের পরপরই থলিবাড়ী ও খাগড়াবিল এলাকায় তার সমর্থকের উপর হামলা করা হয়েছে। হামলায় গুরুতর আহত হয়ে পাঁচজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বগুড়ায় এমপির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ: বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিজয় হয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজল ও ভাই মিনহাদুজ্জামান লিটন। পরাজিত প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, এমপি প্রভাব সৃষ্টি, ভোট কিনে ও নানা কৌশলে স্বজনদের বিজয়ী করেছেন। এটা দলের জন্য খারাপ নজির হয়ে থাকবে। তবে এমপি ফোন না ধরায় ও সংসদ অধিবেশনে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমপির ভাইয়ের পক্ষে ফল ঘোষণার অভিযোগ : বরিশালের বাকেরগঞ্জে ভাইস চেয়ারম্যান বিজয়ী হয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (বরিশাল-৬) মেজর জেনারেল (অব:) হাফিজ মল্লিকের ভাই আব্দুস সালাম মল্লিক। পরাজীত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ডাকুয়া এমপির ভাইয়ের পক্ষে ফলাফল ঘোষণার অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, রাত সাড়ে ৯টায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর ফল ঘোষণার আগে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৩টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা হয়। তখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন। এরপরে কারিগরি ক্রটির অজুহাতে ফল ঘোষণা স্থগিত রাখা হয়। হামলা-হুমকিসহ কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ: কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন স্থানীয় এমপি এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফের ভাই আতাউর রহমান আতা। এ নির্বাচনে হামলা-হুমকিসহ কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার ও ভোট কারচুপিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন পরাজিত প্রার্থী আবু আহাদ। তিনি বলেন, স্থানীয় এমপির প্রভাবে তার ভাই আতাউর রহমান আতা ও তার ক্যাডার বাহিনী আমাকে ভোটের মাঠে নামতেই দেয়নি। নামলেই হামলার শিকার হয়েছি। তিনি আরও বলেন, ভোটের দিন আমি অন্তত ৫টি ইউনিয়ন ঘুরেছি।