১০ প্রতিষ্ঠানের ৩০০ কোটি টাকা পাচারের তথ্যের বিষয়ে যা বলল বিজিএমইএ


যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমলেও ভিসানীতি রপ্তানিতে প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটির মতে, ভিসানীতি আরোপ করা হয়েছে ব্যক্তির ওপর, দেশ বা ব্যবসার ওপর নয়। মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান। পোশাক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এক প্রশ্নের বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ভিসানীতি বা স্যাংশন ব্যক্তি বিশেষের ওপর দেওয়া হয়েছে। এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। যেমন গত ৩০ বছর যাবৎ আমি পাঁচ বছরের ভিসা পেয়ে আসছি। এখন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অফিসার যদি আমাকে ঢুকতে না দেয় সেটা তাদের ব্যাপার। এ রকম আগেও হয়েছে। তাছাড়া স্যাংশন তো দেশের ওপর দেওয়া হয়নি বা ব্যবসার ওপরও দেওয়া হয়নি। ‘আমি মনে করি না, ভিসানীতির সঙ্গে ব্যবসার সম্পর্ক আছে। করোনার সময় আমরা বিদেশে যেতে পারিনি, কিন্তু ব্যবসা চালিয়ে গিয়েছি। এই যুগে বিদেশে না গিয়েও ব্যবসা চালানো সম্ভব। স্যাংশনের আওতায় কোনো ব্যবসায়ী ভিসা না পেলে সমস্যা হবে, কিন্তু ব্যবসা চালিয়ে যেতে সমস্যা হবে’। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত টিকফার বৈঠকে মার্কিন বাণিজ্যবিষয়ক দপ্তরের (ইউএসটিআর) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিজিএমইএর আলোচনা হয়েছে। তারা স্যাংশনের বিষয়ে আলোচনা করেনি। তাদের উদ্বেগের জায়গা হচ্ছে, শ্রম আইন সংশোধন ও শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি। বিজিএমইএ ও সরকার এ বিষয়ে কাজ করছে। আকু পেমেন্টে কিছু ব্যাংকের ওপর স্যাংশনের বিষয়ে তিনি বলেন, যে কোনো স্যাংশনই শঙ্কিত হবার মতো। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকু হচ্ছে একটি আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তিকারী সংস্থা। কয়েকটি ব্যাংকের ওপর এর পেমেন্টে স্যাংশন দেওয়া হয়েছে, তবে অন্য কোনোভাবে পেমেন্ট করা যাবে। সেভাবেই সরকার কাজ করবে। আমরা আশাবাদী ব্যবসায় এর প্রভাব পড়বে না। বিজিএমইএর নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে সদস্যরা বিজিএমইএ নির্বাচন চায় না। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বর্তমান কমিটির মেয়াদ বাড়াতে আবেদন জানানো হয়েছে। তাই প্রথম দফা ৬ মাস বাড়ানোর পর দ্বিতীয় দফায় বর্তমান কমিটির মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে। লিখিত বক্তব্যে ফারুক হাসান বলেন, চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে সামগ্রিক পোশাক আমদানি আশঙ্কাজনক হারে কমে এসেছে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক পোশাক আমদানি মূল্য কমেছে ২২ দশমিক ২৮ শতাংশ, যেখানে বাংলাদেশ থেকে তাদের আমদানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। অন্যদিকে পরিমাণের দিক থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ২৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ থেকে কমেছে ২৯ শতাংশ। অর্থাৎ পরিমাণের দিক থেকে ৭ মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি এক তৃতীয়াংশ কমেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে একই অবস্থা। সম্প্রতি শুল্ক গোয়েন্দা উদঘাটিত ১০ প্রতিষ্ঠানের ৩০০ কোটি টাকা পাচারের সংবাদের বিষয়ে ফারুক হাসান বলেন, এ ধরনের মিডিয়া রিলিজ, এ ধরনের মিডিয়া ক্যাম্পেইন, আসলে কার স্বার্থে করা হয়েছে, সেটা আমাদের কাছে একটি বড় প্রশ্ন। এটা আমাদের অর্থনীতি, শিল্প, দেশ অথবা সরকার, কাউকেই কোনো সুবিধাজনক অবস্থানে নিচ্ছে না। শুধুমাত্র বাধাগ্রস্তই করছে। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা, যা এখনও তদন্তই হয়নি, সেগুলো নিয়ে সমগ্র শিল্পখাতকে ঘিরে ঢালাও মন্তব্য মোটেও কাম্য নয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা তাদের ডাকবে, তদন্ত করবে এবং যারা সত্যিকার অর্থে অসাধু তৎপরতার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনবে- সেই বিষয়টিই প্র্যাক্টিস হওয়া উচিত এবং এটিই কিন্তু সব জায়গায় হয়। কিন্তু এ ঘটনায় বিষয়টাকে এভাবে মিডিয়ার মাধ্যমে জনসম্মুখে তুলে ধরে জাতির কাছে শিল্পকে ছোট করা আমরা একটি অপচেষ্টা বলে মনে করি। আমরা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই এবং প্রত্যাখ্যান করছি। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সালাম মুর্শেদী, বিজিএমইএ সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম মান্নান কচি, সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম প্রমুখ।