৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর ডিও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় মন্ত্রণালয়


সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করা সংক্রান্ত শিক্ষামন্ত্রীর প্রস্তাব সংবলিত ড্যামি অফিসিয়াল লেটার (ডিও) নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করা নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে রাজপথে আন্দোলন করছে চাকরিপ্রত্যাশীরা। ঠিক সেই মুহূর্তে শিক্ষামন্ত্রীর ডিও নতুন করে বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। এ বিষয়ে রোববার জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর করা প্রস্তাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন। প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দেন সে আলোকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন। জনপ্রশাসনমন্ত্রী চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ বছর রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, বিষয়টি ইতোপূর্বে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী নিজেই ব্যাখ্যা করেছেন। সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। বর্তমান সরকার অবসরের বয়স ৫৭ বছর থেকে দুই বছর বাড়িয়ে ৫৯ বছর করেছে। প্রবেশের বয়স আগে ২৭ ছিল তা ৩০ বছর করা হয়েছে। বয়স বাড়ালে পলিসি পর্যায়ে সমস্যা আছে। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ১৭ এপ্রিল জনপ্রশাসনমন্ত্রীকে দেওয়া ডিও লেটারে উল্লেখ করেছেন, চাকরিপ্রত্যাশীরা চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার জন্য দীর্ঘদিন রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারের ৩৩নং পৃষ্ঠায় শিক্ষা দক্ষতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি অনুচ্ছেদে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও দক্ষতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসংগত ব্যবস্থা করা হবে উল্লেখ করা হয়েছে। ৩৩ বছর আগে ১৯৯১ সালে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ২৭ থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়। তখন মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। বর্তমানে মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর। ডিও লেটারে শিক্ষামন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন যে, কোভিড-১৯ এর কারণে চাকরিপ্রত্যাশীদের ৩ বছর ৩ মাস ব্যাকডেট ধরে বয়সের একটি ছাড় দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু ব্যাকডেট কার্যকর ছিল মাত্র ১ বছর ১ মাস। ফলে চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রায় ২ বছর ২ মাস সময় নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া যে এক বছর এক মাস সময় পেয়েছে সে সময় একই তারিখে একইদিনে একসঙ্গে ১৫ থেকে ২০টি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই কারণে ব্যাকডেট বয়স ধরে সুবিধা দিলেও তেমন কোনো সুফল পায়নি চাকরিপ্রত্যাশীরা। সেক্ষেত্রে বয়স বৃদ্ধি অতীব জরুরি। শিক্ষামন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন যে, বিশ্বের ১৬২টি দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর। আবার অনেক দেশে চাকরিতে প্রবেশ উন্মুক্ত। নেই বয়সসীমার বালাই। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪৫ বছর। এছাড়া মালদ্বীপ, শ্রীলংকা এবং নেপালে ৪৫ বছর। এমনকি চীনেও চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৪০ বছর। সেক্ষেত্রে সার্বিক বিবেচনায় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের ৩৭ বছর এবং পুলিশের এসআই ও সার্জেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩০ বছর পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ রাখার প্রস্তাব করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। রোববার শিক্ষামন্ত্রী গণমাধ্যমের কর্মীদের করা এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের পক্ষে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি এই সুপারিশ করেছেন। সিদ্ধান্ত কী হবে সেটি নেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, যে কোনো বিষয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীরা ডিও লেটার দিতেই পারেন। ডিও লেটার দেওয়া মানে বিষয়টি হয়ে গেছে এমন কিন্তু নয়। বিষয়টির ওপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিচার-বিশ্লেষণ শেষে প্রধানমন্ত্রীর সদয় সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী যদি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার প্রস্তাবে সম্মতি দেন তখন অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হবে। সেক্ষেত্রে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ সংক্রান্ত বিধিবিধান সংশোধন করতে হবে। বিষয়টি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হলে তারপর আদেশ জারি করা হবে। এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ছে কি না। উল্লেখ্য, বর্তমানে সাধারণত সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর। তবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ক্ষেত্রে তা ৩২ বছর।