৯৮০০ কোটি টাকা খরচের পরও চট্টগ্রাম নগরী ডুবছেই
অনলাইন নিউজ ডেক্স
চট্টগ্রামে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা খরচের পরও জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী। ২০১৭ সাল থেকে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক)। ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও পরে কয়েক দফায় ব্যয় বাড়িয়ে এই প্রকল্পের খরচ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকায়। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৬৮ শতাংশ অর্থ খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু মাঝারি কিংবা ভারি বৃষ্টিপাত হলেই নগরীর নিম্নাঞ্চল ডুবে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরীর সবকটি খাল-নালার কাজ শেষ হলেই জলাবদ্ধতা নিরসন সহনীয় পর্যায়ে আসবে।
সোমবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে নগরীর কোনো কোনো সড়কে কোমরসমান পানি, আবার কোথাও হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠে যায়। পানির কারণে যানবাহন না থাকায় সড়কে নৌকা দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে নগরবাসীকে। কোথাও কোথাও বাসাবাড়িতে এবং ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানেও পানি প্রবেশ করে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ অফিসগামী ও কর্মজীবী মানুষ। এর আগে ৯ জুলাই সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় ৭০ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরীর বেশ কিছু নিম্নাঞ্চল। একইভাবে ১৮ জুন সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় ৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টিতেও ডুবেছিল নগরীর বিভিন্ন এলাকা। সেদিন সকালের অতি ভারি বৃষ্টিতে নগরীর চকবাজার, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, হালিশহর, আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, তিন পোলের মাথা এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
সূত্র জানায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে চারটি প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫ হাজার ৫৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্পে। কর্ণফুলী নদীর তীরে রাস্তা ও জলকপাট নির্মাণে চউক’র আরেকটি প্রকল্পে ব্যয় হয় ২ হাজার ৩২৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সিটি করপোরেশন বহদ্দারহাটের বাড়ইপাড়া থেকে বলিরহাট পর্যন্ত নতুন খাল খননের কাজে খরচ করেছে ১ হাজার ২৭০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরীর ৩৬টি খালের সংস্কার করছে চউক। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৮ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। আগামী বছরের জুনে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। প্রকল্পের অগ্রগতি এখন পর্যন্ত ৮৪ শতাংশ। এর মধ্যে ২৫টি খালের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে ছয়টি খালের কাজ ৯০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। আর পাঁচটি খালের কাজ ৯০ শতাংশের নিচে। নগরীর কাতালগঞ্জ, পাঁচলাইশ ও মুরাদপুর এলাকা হিজড়া খাল ঘিরে। তবে আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে মেগা প্রকল্পের অধীনে এ খালটির খনন ও সংস্কার কাজ শুরু করতে পারেনি চউক।
পরিবেশবিদ ও নদী গবেষক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, ‘চট্টগ্রাম নগরীতে যে কয়টি খাল রয়েছে সেগুলো দিয়ে কি পরিমাণ পানি বের হয় কিংবা সক্ষমতা কেমন রয়েছে এর কোনো স্টাডি কারও কাছে নেই। আমরা দেখেছি, কালুরঘাট থেকে শুরু করে কর্ণফুলী নদীর মোহনা পর্যন্ত প্রায় ২০টি ডুবন্ত চর রয়েছে। সেখানে প্রতিনিয়ত ময়লা আবর্জনা আটকে যাচ্ছে। সমন্বয় ছাড়াই ড্রেজিংয়ের নামে নদীগুলো কেবল ক্ষত করা হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘জলাবদ্ধতা প্রকল্প নিয়ে সবাই কেবল বাণিজ্যই করেছে। যে যখন দায়িত্ব পেয়েছে সেই এই কাজটি করেছে। কেউই চায় না এই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হোক। এ কারণেই সমন্বয়হীনতা এবং সংকটের গভীরে না পৌঁছে সবাই শুধু প্রাণপণ চেষ্টার অভিনয় করছে মাত্র। যার কারণে এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলবে বলে মনে হচ্ছে না।’
সোমবার নগরীর কাপাসগোলা ও কাতালগঞ্জ এলাকায় জলাবদ্ধতা পরিদর্শনে গিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, নগরীর ৫৭টি খালের মধ্যে ৩৬টির কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ২২টি খালের কাজ শেষ হয়েছে। ১৪টি খালের কাজ বাকি আছে। এর বাইরে আরও ২০টি খাল বাকি। সেগুলোও আমাদের সংস্কার করতে হবে। হিজড়া খালের সংস্কার এবং নালার কাজ শেষ হলে এই সমস্যার সমাধান হবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, ‘বর্ষার কারণে এখন কাজ করা যাচ্ছে না। আগস্টের শেষ দিকে এই কাজ শুরু হবে। এরপর ১৬০০ কিলোমিটার নালার কাজ করতে হবে। তারপর জলাবদ্ধতা নিরসনের ৮০ শতাংশ সুফল পাবে মানুষ। সব কাজ শেষ হলে নগরীর জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মোগলটুলি এলাকায় একটি স্লুইচ গেটের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেটির কাজ শেষ হলে আগ্রাবাদ এলাকায় জলাবদ্ধতা কমে আসবে। এবার ১০টি পাম্পের মাধ্যমে ঘণ্টায় ২০ কোটি লিটার পানি অপসারণ করা হয়েছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে আরও দুটি পাম্প বসানো হবে।’
