নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় নাকচ


জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের পরও অনিয়ম প্রমাণিত হলে ভোট বাতিলের ক্ষমতা চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হলেও তাতে সায় মেলেনি। মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য এ বিষয়ে আপত্তি জানালে বিষয়টি অনুমোদন পায়নি। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)’ সংশোধনীর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের কার্ডধারী সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের কাজে বাধা দিলে শাস্তির বিধানের প্রস্তাবে অনুমোদন মিলেছে। এতে বলা হয়েছে, কেউ এই অপরাধ করলে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ সাত বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর সংশোধিত আরপিও বিল আকারে জাতীয় সংসদে উঠবে। সংসদে পাস হওয়ার পর এই বিলে রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে তা আইনে রূপ লাভ করবে। ইসির হাতে ফল বাতিলের ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাবের বিষয়ে গতকাল রাতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। গেজেট প্রকাশের পরও নির্বাচনের ফল বাতিলের ক্ষমতা ইসির হাতে দেওয়ার বিষয়ে বৈঠকে ঐকমত্য হয়নি। এটা নিয়ে তিনি আবারও বসবেন। অন্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা সেটা তাঁকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। সেটা দেখে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদিও এর আগে নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানা ও আনিছুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, গেজেট প্রকাশের পরও ভোট বাতিলের ক্ষমতা ইসির হাতে দিতে শুরুতে আপত্তি জানালেও পরে একমত হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ ওঠে। তখন তৎকালীন নূরুল হুদা কমিশন বলেছিল, নির্বাচনের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের পর ইসির হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। গেজেট প্রকাশের পর আদালতে মামলা করা ছাড়া প্রতিকার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা ওই নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীদের আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। গতকাল দুপুরের পর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার শাখার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান। তিনি বলেন, বৈঠকে আরপিও সংশোধনীর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, বৈঠকে নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার বিষয়ে জেলাভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা অথবা আসনভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এখন কোনটি থাকবে, তা সরকার ঠিক করবে। তিনি জানান, এখন সংশোধিত আইনে মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবিত আইনে কী কী সংশোধনী থাকবে, তা চূড়ান্ত করা হবে। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় জাতীয় নির্বাচনে আসনভিত্তিক রিটার্নিং কর্মকর্তা রাখার বিষয়টি আগের মতো বহাল রয়েছে। বিদ্যমান আরপিওতে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাত দিন আগেই ইউটিলিটি বিল (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি) জমা দিতে হতো। নতুন খসড়া আইনের প্রস্তাবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন পর্যন্ত এসব বিলের কপি জমা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। আর প্রার্থীদের টিআইএন সনদ এবং আয়করের রসিদ জমা দিতে হবে। বিদ্যমান আরপিওতে বেশ কিছু ধারায় সংশোধনী আনার প্রস্তাব তৈরি করে গত অক্টোবরে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল ইসি। প্রস্তাবিত এই সংশোধনীর মধ্যে ছিল গেজেট আকারে ফলাফল প্রকাশের পরও অনিয়ম প্রমাণিত হলে নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা, প্রার্থীর এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখালে বা কেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে শাস্তির বিধান, দলের সর্বস্তরের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব রাখতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় বাড়ানো, নির্বাচনী দায়িত্বে অবহেলায় কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতা বাড়ানো, প্রার্থীদের আয়কর সনদ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, ভোট গণনার বিবরণী প্রার্থী ও তাঁর এজেন্টদের দেওয়া বাধ্যতামূলক করা, মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত খেলাপি বিল (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস) পরিশোধের সুযোগ দেওয়া, রাজনৈতিক দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্র ৩০ দিনের মধ্যে ইসিতে জমা দেওয়া ইত্যাদি। আইন মন্ত্রণালয় এসব প্রস্তাব ভেটিং (পরীক্ষা) করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠায়।