বাস-ট্রেন-লঞ্চঘাটসহ সব প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপনের নির্দেশ


কর্মস্থল, বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, শপিংমলসহ দেশের সব জনবহুল স্থানে শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর নিরাপদ পরিবেশসহ ব্রেস্টফিডিং রুম ও বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী এবাদত হোসাইন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার যুগান্তকারী এক রায়ে এই নির্দেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী তানজিলা রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান। ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর নিরাপদে মায়ের বুকের দুধ পানের পরিবেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করে ৯ মাস বয়সের ছোট্ট শিশু উমাইর বিন সাদী। সঙ্গে আরও ছিলেন তার মা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান। রায়ের পর শিশুটির মা আইনজীবী ইশরাত হাসান সাংবাদিকদের বলেন, \'আমাদের সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে স্বীকৃত অন্যতম মৌলিক অধিকার রক্ষায় হাইকোর্টের এই রায় নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। এই যুগান্তকারী রায়ের পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে কর্মজীবী নারীরা শিশুদের কর্মক্ষেত্রে রেখেই স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশ সারা বিশ্বের জন্য একটা উদাহরণ সৃষ্টি করবে, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য অনুসরণীয় হবে।\' বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে নয় মাস বয়সী কোনো শিশু ২০১৯ সালে প্রথম পিটিশনার হয়েছে। ছোট্ট শিশুর রিট পিটিশনার হতে আদালত থেকে অনুমতি নিতে হয়। ২০১৯ সালে জনস্বার্থে করা এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৭ অক্টোবর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে দেশের সব শপিংমল, কর্মক্ষেত্র, এয়ারপোর্ট, বাসস্টপ, রেলওয়ে স্টেশনে ব্রেস্টফিডিং কর্নার ও বেবি কেয়ার কর্নার স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি জনপরিসরে (পাবলিক প্লেসে) ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্রেস্টফিডিং কর্নার স্থাপনে নীতিমালা তৈরি করতে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তাও রুলে জানতে চাওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চ সারা দেশের কলকারখানা ও মিলগুলোতে দুই মাসের মধ্যে ব্রেস্টফিডিং রুম স্থাপনের নির্দেশ দেন। এছাড়াও রুল জারি করা হয়। পরে হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী দেশের সবগুলো বিমানবন্দর, রেল স্টেশনসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে ব্রেস্টফিডিং রুম স্থাপিত হয়েছে বলে আদালতে জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় আজ রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। উল্লেখ্য, শিশু উমাইর মা-বাবার সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিল কক্সবাজারে। সমুদ্র সৈকতে বেড়ানো শেষে ঢাকায় ফেরার পথে কক্সবাজার বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়। সেখানে অনিবার্য কারণে ফ্লাইট কয়েক ঘণ্টা বিলম্ব হয়। কিন্তু সেখানেই বিপদে পড়ে সে। প্রচুর ক্ষুধায় কান্না জুড়ে দেয়। শিশুটির কান্না থামাতে মা বুকের দুধ খাওয়ানোর উদ্যোগ নেন। কিন্তু তার মা এই শিশুটিকে দুধ খাওয়ানোর কোনো পরিবেশই পাচ্ছিলেন না। পরে ঢাকায় এসে শিশু উমাইরকে নিয়ে তার মা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান হাইকোর্টে এই রিট দায়ের করেন।