ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী ‘গরয়া’ নৃত্যে এখন উৎসবমূখর পাহাড়


পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যতম হলো ত্রিপুরা সম্প্রদায়। পার্বত্য অঞ্চলের খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত ত্রিপুরাদের প্রধানতম সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব বৈসুক/বৈসু। আর এই বৈসুর প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে গরাইয়া নৃত্য। বৈসু উৎসব কে ঘিরে পাহাড়ের ,পাড়ায়-পাড়ায় শনিবার ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী ‘গরয়া/গরাইয়া নৃত্য পরিবেশিত হয়েছে। গরয়া নাচে উৎসবমূখর পাহাড়। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব বৈসাবির এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ‘গরয়া নৃত্য।’ ত্রিপুরাদের বৈসু উৎসবের প্রথমদিন থেকে ২২ জনের ত্রিপুরা দল বেরিয়ে যান পাহাড়ী পল্লীতে। তিনদিন পর্যন্ত এর রেশ থাকে। বৈসুর মূল আকর্ষণ এই গরয়া নৃত্য। পাহাড়ি জুম-জীবনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই সংস্কৃতি। ত্রিপুরারা বিশ্বাস করেন, ভগবানের আরেক নাম ‘গরয়া’। এই দেবতার কৃপাতে দেশে আসে সুখ শান্তি আর তাঁর অসন্তুষ্টিতে রোগ-শোক, দূর্ভিক্ষ, অতি বা অনাবৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা দিতে পারে। তাই গরয়া দেবতাকে তুষ্ট করতেই বছরের এই সময় অথবা বিয়ে, জুমচাষ ইত্যাদির সময়ে গরয়া নৃত্য করা হয়। গরয়া এতটাই তাৎপর্য ও সমাজ চেতনাবোধ জাগ্রত করেছে যে, এই নৃত্যটি আর নিজেদের মাঝে সীমাবন্ধতা থাকেনি। সব ধর্ম বর্ণের মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নাচে পরিণত হয়েছে। তবে ঐতিহ্যবাহী ও ধর্মীয় এই নৃত্য ‘গরয়া’ মূলত ত্রিপুরাদের হলেও এখন অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মধ্যেও ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই বৈসুতেও পাহাড়ের সব মানুষের কাছেই এখন আগ্রহের বিষয় গরাইয়া নাচ। ইয়ামুখ, সাংস্কৃতিক সংগঠন,খাগড়াছড়ি এর সংগঠক চামেলী ত্রিপুরা জানানত্রিপুরা জন গোষ্টির বৈসু উৎসবকে ঘিরেই শহর থেতে প্রতন্ত পাহাড়ী পল্লীতে ঐতিহ্যবাহী নৃত্য গীত গুলো পরিবেশিত হয়ে থাকে। এ সব নৃত্যগীত সংরক্ষণ ও বিকাশে বাংলাদেশ ত্রিপুরা সংসদ কাজ করছে । বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যান সংসদ,খাগড়াছড়ি এর সাবেক সাধারন সম্পাদক বিভিসুর ত্রিপুরা বলেন এ ধরনের সামাজিক উৎসব উদযাপন মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্ম নিজেদের ঐতিহ্য ,কৃষ্টি ও সংস্কৃতি সর্ম্পকে ধারণা পাবে। খাগড়াছড়ি জাবারাং কল্যান সমিতির নির্বাহী পরিচালক এবং লেখক ও এবং গবেষক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা জানান খাগড়াছড়ি জেলার ত্রিপুরা অধ্যূষিত এলাকা ছাড়াও দেশের বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে গরয়া নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে গোটা পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিণত হয় সব সম্প্রদায়ের মানুষের মিলন মেলায়। এদিকে এই উৎসব দেখতে খাগড়াছড়িতে বেড়েছে পর্যটকের সংখ্যা। বলা যায় উৎসবে রঙ্গীন পার্বত্য চট্টগ্রাম।