শাহজাদপুরের ইউএনও সাদিয়া আফরিন বেড়িয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য
অনলাইন নিউজ ডেক্স
সদ্য বদলি আদেশ প্রাপ্ত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
সাদিয়া আফরিন (১৭৪৫৯) একজন আত্মঅহংকারী বদমেজাজী ও বেয়াদব মহিলা। তিনি
কাউকে সম্মান দিয়ে কথা বলতেন না। এমন কি বয়জেষ্ঠ্যদেরও তিনি নাম ধরে
ডাকতেন। তার কাছে কেউ কোনো কাজে গেলে তিনি তাদের সাথে অসদাচরণ করতেন।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে ওএমএস এর ডিলার নিয়োগ,হাট-বাজার ও খেয়াঘাট ইজারা সহ
নানা কাজে উৎকোচ গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা
আব্দুল বাতেন বলেন, আমার বয়স ৭৮ বছরের উপরে। আর শাহজাদপুরের ইউএনওর বয়স
৩৫ এর কোঠায়। আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারপর দুই বারের নির্বাচিত ইউপি
চেয়ারম্যান। আমাকে উনি নাম ধরে বাতেন সাহেব বলে ডাকতেন। আমি একদিন এর জোর
প্রতিবাদ করি। এনিয়ে তার সাথে আমার বেশ উচ্চ বাচ্চ কথা হয়। এরপর আর
আমাকে নাম ধরে ডাকেননি। তিনি আরও বলেন, এই ইউএনও ছিলেন, একজন আত্মঅহংকারী
বদমেজাজী ও বেয়াদব মহিলা। তিনি কাউকে সম্মান দিয়ে কথা বলতেন না। এমন কি
বয়জেষ্ঠ্যদেরও তিনি নাম ধরে ডাকতেন। তার কাছে কেউ কোনো কাজে গেলে তিনি
তাদের সাথে অসদাচরণ করতেন। তিনি আরও বলেন, গালা ইউনিয়নের ভেড়াকোলায় একজন
ওএমএস ডিলার নিয়োগে তিনি তার অফিসের এক পিয়নের মাধ্যমে মোটা অংকের উৎকোচ
নিয়েছেন। এছাড়া তিনি তার অফিসের এক কর্মচারির মাধ্যমে সকল অপকর্ম ও ঘুষ
লেনদেন করতেন। অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন,
শাহজাদপুরে এ যাবৎ যত গুলো ইউএনও এসেছেন তার মধ্যে সাদিয়া আফরিন ছিলেন
স্মরণকালে মোস্ট বেয়াদব। তার বিদায়ে শাহজাদপুরের সর্বস্তরের মানুষ খুশি।
এ বিষয়ে সোনাতনী গ্রামের মোশাররফ হোসেন মন্ডল বলেন, ইউএনও সাদিয়া আফরিন
মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ম্যানেজ হয়ে ৩ লাখ টাকার মূল্যের সোনাতনী
ইউনিয়নের কুরসী হাট-বাজার নামমাত্র মূল্যে ইজারা প্রদান করেছেন। ফলে
সরকার কমপক্ষে আড়াই লাখ টাকা থেকে পৌনে ৩ লাখ টাকা রাজস্ব হারিয়েছেন।
এ বিষয়ে কৈজুরি ইউনিয়নের গুপিয়াখালি গ্রামের আবু বক্কার সিদ্দিক বলেন,
শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের জগতলা (কৈজুরি-সোনাতনী) খেয়াঘাটের
বাংলা ১৪৩০ সালের ইজারা বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলে বিজ্ঞপ্তির সকল শর্ত মেনে
আমি গত ৩০ মার্চ ড্র এর দিনে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা দরপত্র দাখিল করে
প্রথম দরদাতা বিবেচিত হই। এছাড়া ভাটপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম মাঝি ১২
লাখ ১৯ হাজার ৯৯৯ টাকা দরপত্র দাখিল করে দ্বিতীয় দরদাতা হিসাবে গণ্য হন।
তারপরেও গত ৩ এপ্রিল শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন
প্রভাবশালীদের যোগসাজসে উৎকোচের বিনিময়ে ম্যানেজ হয়ে অবৈধ ভাবে প্রথম
দরদাতা হিসাবে আমাকে কৌশলে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় দরদাতা সাইফুল ইসলাম মাঝিকে
ঘাট ইজারা প্রদান করেন। এতে সরকার ১ লাখ ৯০ হাজার ১ টাকা রাজস্ব হারায়। এ
ঘটনায় আমি বাদী হয়ে গত ১২ এপ্রিল শাহজাদপুর চৌকি আদালতে অপর প্রকার
মামলা দায়ের করি। মামলা নং ১২৩/২০২৩ইং। গত ১৩ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের
শাহজাদপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক সোহেল রানা মামলাটি আমলে নিয়ে
ওই ইজারা স্থগিত করে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন ও
ভাটপাড়া গ্রামের শহিদ আলীর ছেলে দ্বিতীয় দরদাতা সাইফুল ইসলাম মাঝিকে শোকজ
করেন। ১৬ এপ্রিল শোকজের জবাব সোন্তষজনক না হওয়ায় আদালত প্রথম দরদাতাকে
ঘাট বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি আরও বলেন, আদালতের আদেশ অমান্য করে
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের জগতলা (কৈজুরি-সোনাতনী)
খেয়াঘাট দ্বিতীয় দরদাতার কাছে ইজারা প্রদানের প্রতিবাদে গত ১৪ এপ্রিল
শুক্রবার দুপুরে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসি শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিনের এ অনিয়ম-দূর্ণীতির বিরুদ্ধে জগতলা
বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে।
এছাড়া চলতি বছরের ১০ মার্চের দিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের নামে
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কতিপয় প্রভাবশালীর
যোগসাযোসে শাহজাদপুর কাছারিবাড়ি সড়ক সংলগ্ন ইউএনওর সরকারি বাসভবনের
সামনের জায়গায় ১১ কক্ষ বিশিষ্ট মার্কেট নির্মাণ করে প্রায় ১ কোটি টাকা
হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা শুরু করেন। একাধিক জাতীয় পত্রিকায় এ সংক্রান্ত
সংবাদ প্রকাশ হলে সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর) আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য
প্রফেসর মেরিনা জাহান করিতার নির্দেশে তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে
সাংবাদিক মো: মুমীদুজ্জামান জাহান ও তার পরিবারকে এক প্রভাবশালীর মাধ্যমে
হুমকি প্রদান করা হয়। এ ঘটনায় সাংবাদিক জাহান নিরাপত্তা চেয়ে শাহজাদপুর
থানায় একটি জিডি করেন।
এ ছাড়া শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন ২০২২ সালের ৬
অক্টোবর শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করার পর থেকে
তার অধিনস্ত কর্মকর্তা কর্মচারিদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ ছিল নিত্য
নৈমিত্তিক ঘটনা। তিনি গত ২৩ জানুয়ারী সোমবার দুপুরে তার নিজ কার্যালয়ে
শাহজাদপুরে কর্মরত সাংবাদিকদের সাথেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এ ঘটনার
প্রতিবাদে এ দিন বিকেলে শাহজাদপুর প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে সাংবাদিকরা
তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। এ
নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নিন্দা ও প্রাতবাদের ঝড় উঠে।
সর্বশেষ গত ১৯ জুলাই
বুধবার দুপুরে বেসরকারি সংস্থা ইউডিপিএস এর
কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস রিপন ও অগ্রণী ব্যাংক পাবনা শাখার এজিএম জহির
রায়হান অফিসিয়াল কাজে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া
আফরিনের সাথে দেখা করতে যান। এ সময় তিনি তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ
করেন ও তাদের অপমান অপদস্ত করে অফিস থেকে তাড়িয়ে দেন বলে রুহুল কুদ্দুস
রিপন অভিযোগ করেন।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে এলাকাবাসি মনে করেন, তার অনিয়ম-দূর্ণীতি,অপকর্ম ও
অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে তাকে এ বদলি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মাহবুবুর রহমান বলেন, এটা তার
শাস্তিমূলক বদলি নয়, এটা তার নিয়মিত বদলি।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, তার
ব্যাচের এখনও পদন্নতি শুরু হয়নি। তাই তাকে নিয়মিত বদলি করা হয়েছে। এটা
তার কোন শাস্তিমূলক বদলি নয়। এছাড়া তিনি কখনও কারো কাছে থেকে কোনো ঘুষ বা
উৎকোচ গ্রহণ করেননি। এ সব তথ্য অসত্য ও বানোয়াট।
উল্লেখ্য, শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিনকে গত ২০
জুলাই বৃহস্পতিবার শাহজাদপুর থেকে বগুড়ায় বদলি করা হয়েছে। মহামান্য
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-১ শাখার উপ-সচিব
আব্দুল্লাহ আরিফ মোহাম্মদ স্বাক্ষরিত এক পত্রে তাকে এ বদলি করা হয়। একই
সাথে তাকে বগুড়ার বিয়াম ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক পদে ন্যাস্ত করা
হয়েছে। তার এই বদলির আদেশ খবর শাহজাদপুরে ছড়িয়ে পড়লে ভুক্তভোগিদের মধ্যে
সস্তি ফিলে আসে। অনেকের মাঝে উল্লাস করতে দেখা যায়।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।