এএসপি জিয়াউর রহমান শতকোটি টাকার মালিক


এসআই থেকে ২০২১ সালে জিয়াউর রহমান এএসপি পর্যন্ত পদোন্নতি পেতে চাকরি করেছেন প্রায় ৩৩ বছর। এই দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেতন পেয়েছেন প্রায় ৪৮ লাখ টাকা। কিন্তু তার ও স্ত্রীর নামে থাকা সম্পদের দাম অন্তত শতকোটি টাকা। রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে সাড়ে ৯ তলা বণিজ্যিক ভবন আছে তার। পাশেই স্ত্রীর নামে করেছেন সাড়ে ৬ তলা বাড়ি। এছাড়া ময়মনসিংহের বাণিজ্যিক নগরী হিসাবে পরিচিত ভালুকায় স্ত্রীর নামে বিঘায় বিঘায় সম্পদ কিনে রেখেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, গ্রামের বাড়ি গফরগাঁওয়ে স্ত্রীর নামে বানিয়েছেন ডুপ্লেক্স ‘সঞ্চিতা মহল’। কোটি কোটি টাকা খরচ করে মাদ্রাসা ও মসজিদও নির্মাণ করছেন সেখানে। বিপুল বিত্তবৈভব জায়েজ করতে আয়কর নথির পরতে পরতে নজিরবিহীন প্রতারণার আশ্রয়ও নিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। এসব সম্পদের উৎস হিসাবে সেখানে পুলিশের চাকরি ব্যতীত অন্যকিছুর প্রমাণ নেই। যার এত সম্পদের কথা বলা হচ্ছে, তিনি হলেন সিআইডির ঢাকা মেট্রোর সহকারী পুলিশ সুপার মো. জিয়াউর রহমান। তবে তার গ্রামের বাড়ি গফরগাঁওয়ের বাইলনার মানুষ তাকে মিরপুরের এসপি হিসাবেই চেনেন। দীর্ঘ অনুসন্ধানে এই কর্মকর্তার আদ্যোপান্ত উঠে এসেছে। জানা যায়, পুলিশের ওসি থাকা অবস্থায় নানা অন্যায়-অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের অর্জিত অবৈধ সম্পদের পরিমাণ একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতিকে ছাড়িয়ে গেছে। কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদকে বৈধ করতে আয়কর নথিতে নানামুখী প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। গৃহিণী স্ত্রী জেসমিন নাহার সঞ্চিতাকে বানিয়েছেন চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ী! আরও একধাপ এগিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিলের ঘোষণাপত্রে স্ত্রীর স্বাক্ষরের জায়গায় সই করেছেন নিজেই। তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, মিরপুর ২নং সেকশন ডি-ব্লকের চিড়িয়াখানা সড়কে ৭৪নং প্লটে ‘জাওয়াদ টাওয়ার’-এর মালিক এই জিয়াউর রহমান। প্রায় পাঁচ শতকের প্লটে ২০১৫-১৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছে সাড়ে নয়তলা বাণিজ্যিক কাম আবাসিক ভবন। ২০১৮ সাল থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়েছেন। প্রতি ফ্লোর গড়ে ২২০০ বর্গফুট হিসাবে ভবনের মোট আয়তন প্রায় ২১ হাজার বর্গফুট। ভবনের ৭ম থেকে ৯ম ফ্লোর আবাসিক। জমিসহ মিরপুরের ব্যস্ততম এলাকার এ ভবনটির মূল্য আনুমানিক চল্লিশ কোটি টাকা হলেও জিয়াউর রহমান দেখিয়েছেন ৩ কোটি ৬৩ লাখ ৩৬৭ টাকা। নিজের আয়কর রিটার্নে জিয়াউর রহমান মোট সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ২ লাখ ১২ হাজার ৯৭৯ টাকা দেখালেও প্রকৃতপক্ষে তার সম্পদের পরিমাণ শতকোটি টাকা। জিয়াউর রহমানের আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও প্রাপ্ত নথিপত্রে স্ত্রী জেসমিন নাহার সঞ্চিতা বিয়ের আগে-পরে কোথাও চাকরি কিংবা ব্যবসা করেছেন-এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু আয়কর রিটার্নের নথিপত্রে জেসমিন নাহার সঞ্চিতা ২০১২ সালের জুলাই থেকে তার মিরপুরের বাড়িতে স্থাপিত ‘দারুল হিকমাহ মডেল স্কুল’ নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসাবে অদ্যাবধি কর্মরত আছেন বলে দেখানো হয়েছে। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে কথা হয় প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সঙ্গে। তারা কেউই ভাইস প্রিন্সিপাল হিসাবে সঞ্চিতাকে চেনেন না। কিন্ডারগার্টেন এ স্কুলটির পরিচালক ও প্রিন্সিপাল আব্দুস সবুর বলেন, তিনি ছাড়া স্কুলটিতে মোট আটজন শিক্ষক আছেন। তবে কোনো ভাইস প্রিন্সিপাল কিংবা কো-অর্ডিনেটর বলতে কেউ নেই। আয়কর নথি ঘেঁটে দেখা যায়, মিরপুর ২নং সেকশনের জি-ব্লকের ৩/২০ প্লটে সাড়ে ৬ তলা ভবনটির মালিক জিয়াউর রহমানের স্ত্রী জেসমিন নাহার সঞ্চিতা। জমিসহ এ ভবনটির দাম দেখানো হয়েছে ২ কোটি ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৬২ টাকা। কিন্তু বাজারমূল্য ৫ কোটি টাকার ওপরে। চিড়িয়াখানা ৭৪নং প্লটের বাণিজ্যিক ভবনের ঠিকানা ব্যবহার করে ‘নাহার বুটিক হাউজ’-এর স্বত্বাধিকারী হিসাবে ব্যবসার পরিচয় দিলেও বাস্তবে এর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। ২০১৮ সালের ৩ জুলাই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃক ইস্যুকৃত ট্রেড লাইসেন্সে উল্লিখিত ব্যবসায়িক ঠিকানায় গেলে ভবনের কেউই এ নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের খোঁজ দিতে পারেননি। এ ভবনে সাত বছর ধরে চাকরিরত গার্ড সোলায়মান বলেন, ‘নাহার বুটিক হাউজ’ নামে এখানে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। এছাড়াও জিয়াউর রহমানের স্ত্রী সঞ্চিতার আয়কর রিটার্ন নথিপত্রে উল্লেখ করা ১০৫২৫ ও ১২৪২৪ নম্বরের দলিল দুটির তথ্য যাচাই করতে গিয়ে এর নম্বর, মৌজা নম্বর এবং দলিলের জমির পরিমাণ ও মূল্যের সঙ্গে ভয়াবহ গড়মিল পাওয়া যায়। ১ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের স্ত্রীর দাখিলকৃত আয়কর নথির ঘোষণাপত্রের স্বাক্ষর এবং তার নিজের জন্য ১৫ নভেম্বর দাখিলকৃত আয়কর নথির ঘোষণাপত্রের স্বাক্ষর একই। সরেজমিন খোঁজ নিতে জিয়াউর রহমানের নিজ জেলা ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে বাইলনা গ্রামের বাড়ি গেলে চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া যায়। কৃষক মরহুম আমসর আলী মৃধার ছয় সন্তানের মধ্যে জিয়াউর রহমান সবার ছোট। অভাব-অনটনের কারণে তাদের বাবা অন্য সন্তানদের ঠিকমতো পড়ালেখা করাতে না পারলেও জিয়াউর রহমানকে বিএ পাশ করান। সেসময় পুলিশে চাকরিরত পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ী থানার স্থায়ী নিবাসী আবুল কাশেমের আনুকূল্য পান তিনি। চাকরি পেয়ে তার মেয়ে জেসমিন নাহার সঞ্চিতাকেই বিয়ে করেন জিয়াউর রহমান। চাকরি পাওয়ার আগে ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া তার পৈতৃক সম্পত্তিটুকু বিক্রি করেন তিনি। স্ত্রী সঞ্চিতাকে খুশি করতে সম্রাট শাহজাহান যেভাবে তাজমহল তৈরি করেছেন, সেই মনোবাঞ্ছা থেকে স্ত্রীর নামে নিজ গ্রামে ‘সঞ্চিতা মহল’ নির্মাণ করে এলাকায় বেশ আলোচিত জিয়াউর রহমান। ২২ শতক জমির ওপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স ভবনটির সামনে দিয়ে পথ চলতে যে কারোর দৃষ্টি আটকে যায়। এ বাড়ির ভেতরে কী আছে, কেউ তা জানে না। প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। রহস্যময় এ বাড়িটিকে গ্রামবাসীর কেউ কেউ এরশাদ শিকদারের বাড়ি ‘স্বর্ণকমল’-এর সঙ্গে তুলনা করেন। অনেকে রংমহল বলেও ব্যঙ্গ করেন। ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে বাড়ির কেয়ারটেকার হেলাল বলেন, এ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করার চাবি স্যারের কাছে থাকে। তার অনুমতি ছাড়া কারও ভেতরে প্রবেশ সম্ভব নয়। বাড়ির মালিক জিয়াউর রহমান ঢাকা থেকে বিভিন্ন প্রভাবশালী ও শিল্পপতিদের বেড়াতে নিয়ে আসেন। ২০২১ সালে ২২ শতক জমির ওপর নির্মিত এ বাড়িটি ২০২২-২৩ সালের আয়কর নথিতেও দেখানো হয়নি। সঞ্চিতা মহলের পাশেই রাস্তার অপর পাশে প্রায় ৮ শতক জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে নুরানী জামে মসজিদ। প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে নামফলকে উল্লেখ রয়েছে জিয়াউর রহমানের নাম। কয়েক বছর আগে থেকেই মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত ছিল। পরে জিয়াউর রহমান সেটি পুনর্নির্মাণ করেন। এর পাশেই ২১ শতক জমি কিনে দোতলা মাদ্রাসা ভবন নির্মাণ করেন এই কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের একাধিক মুরুব্বি অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের ক্ষমতা দেখিয়ে জোর করে জিয়াউর রহমান নিজেকে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা বানিয়েছেন। জিয়াউর রহমানের একজন চাচাতো ভাই বলেন, মসজিদে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া মাদ্রাসা ভবন নির্মাণে আনুমানিক ৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সঞ্চিতা মহলে ন্যূনতম খরচ হয়েছে দেড় থেকে ২ কোটি টাকা। চাচার প্রশংসা করতে গিয়ে তার এক ভাতিজা বলেন, ‘আমার চাচার (জিয়াউর রহমান) অনেক টাকা। চাচা চাইলে দিনের মধ্যে কোটি টাকা কামাই করতে পারেন। এলাকায় তিনি মিরপুরের এসপি হিসাবে পরিচিত।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় মশাখালী ইউনিয়ন পরিষদের একজন সদস্য বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান কত টাকার মালিক, তা কেউ ধারণাও করতে পারবে না। নামে-বেনামে তার শতকোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে। তার নিকটতম আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের নামে প্রায়ই জমি কিনেন তিনি। ভালুকার হবিরবাড়ি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের একজন কর্মকর্তা জানান, জিয়াউর রহমান আট-দশ বছর ধরেই বিভিন্ন নামে জমি কিনছেন এখানে। মাঝেমধ্যে বিক্রয়ও করেন। ভালুকা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে গত ১০ বছরের খোঁজ নিয়ে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী জেসমিন নাহার সঞ্চিতার নামে পাঁচটি দলিলের সন্ধান পাওয়া যায়। ভালুকা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর ১০৫২৫নং দলিলে স্ত্রী জেসমিন নাহার সঞ্চিতার নামে ১০ দশমিক ২৫ শতক জমি কিনেন। দলিলে ক্রয়মূল্য ২ লাখ ২৬ হাজার টাকা দেখানো হলেও বাস্তবে এই জমির দাম অনেক বেশি। কারণ, দলিলমূল্যে ময়মনসিংহের বাণিজ্যিক ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন হিসাবে পরিচিত ভালুকায় জমি বিক্রি হয় না। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর ভালুকা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে সম্পাদিত ৯৮৭৬ দলিলে। এই জেসমিন নাহার সঞ্চিতা সেই জমি ৬০ লাখ টাকা দলিলমূল্য দেখিয়ে স্থানীয় জুলহাস উদ্দিনের ছেলে ছফির উদ্দিন ও মেয়ে সুমনা আক্তারের কাছে বিক্রি করেন। অথচ আয়কর রিটার্নে এই তথ্যও গোপন করা হয়েছে। ভালুকার পাড়াগাঁও মৌজায় ১০০৫ দাগে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের স্ত্রীসহ চারজন ২৬৮ শতক জমি কিনেন। বাস্তবে এই জমির দাম তখনই ২ কোটি টাকার ওপরে। এখন এই জমির দাম ৫ কোটি টাকারও বেশি। ভালুকার সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দলিল নং-১১৪২৪। এ দলিলে জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ৩৮ লাখ ২২ হাজার টাকা। এদিকে ভালুকার হবিরবাড়ি মৌজার ৬৩নং খতিয়ানে ৩৪৭নং দাগে ২০১৩ সালের ১৮ জুন ৫৪৯০ ও ৫৪৯১নং পৃথক দুটি রেজিস্ট্রি হয়। এ দুই দলিলে জমির পরিমাণ ৩৩৮ শতক। এর মধ্যে ৫৪৯০নং দলিলে ২৩৮ শতক জমির দাম দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৫ হাজার টাকা। ৫৪৯১নং দলিলে ১০০ শতক জমির দাম দেখানো হয় ৬১ লাখ টাকা। জিয়াউর রহমানের স্ত্রীসহ চারজনের যৌথ মালিকানায় তিনটি দলিলে মোট জমি ৬০৬ শতক। অপর তিনজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয় লোকজনের মতে, শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার উপযোগী এসব জমি গড়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রির উপযোগী। সরেজমিনে পাড়াগাঁও মৌজার জমিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১০ বিঘা জমির পুরোটাজুড়ে কলাবাগান গড়ে তুলেছেন জিয়াউর রহমান। কথা হয় এ জমির পাশেই বাড়িদাতা আবুল হাশেমের মেজো ছেলে আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ভয় দেখিয়ে জোর করে তার বাবা আবুল হাশেমের এ জমি লিখে নিয়েছেন। কমিশনের মাধ্যমে এ জমির দলিল করা হয় গাজীপুরের মাওনায়। যেদিন জমির দলিল হয়, সেদিন তার বাবাকে কৌশলে সেখানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভালুকার সাবেক সংসদ-সদস্য ডা. এম আমান উল্লাহর ভাগিনা রাসেল, নিজের ভাতিজা কায়সার শহিদ ও তার এলাকার দুলাল মেম্বার সেসময় জিয়াউর রহমানের পক্ষে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেন। সেদিন জমি লিখে দিতে না চাওয়ায় জিয়াউর রহমান নিজে শত বছর বয়সি তার বাবাকে লাথি মেরে চেয়ার থেকে ফেলে দিতে যান। ভয় দেখিয়েই সেদিন জমি লিখে নেন। এ কষ্ট নিয়েই বছর দুয়েক পর আবুল হাশেম মারা যান। তিনি মারা গেলে জিয়াউর রহমান জমির পুরো টাকা আর পরিশোধ করেননি। স্থানীয় এমপির হস্তক্ষেপে কিছু টাকা পেলেও শর্ত অনুযায়ী ১০ লাখ টাকা বাকি রয়েছে বলে জানান তিনি।’ তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৩ সাল থেকে জিয়াউর রহমান ও তার পরিবার টয়োটা প্রিমিও মডেলের ঢাকা মেট্রো গ ৩৫-৩৫৩৫ গাড়িটি ব্যবহার করছেন। কিন্তু আয়কর নথিতে গাড়িটি সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ নেই। বিআরটিএ-এর তথ্যসূত্র অনুযায়ী গাড়িটির মালিক হচ্ছেন ফেরদৌস আহমেদ বাদল। তার বাড়ি গাজীপুরে। ভালুকার তিনটি দলিলে সঞ্চিতার সঙ্গে এই বাদলের নামও দেখা গেছে। এছাড়াও ফেরদৌস হাসান বাদলের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের বেনামে একাধিক ব্যবসা রয়েছে বলেও জানা যায়। বাদলের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে জিয়াউর রহমানের বিশাল খামার। জিয়াউর রহমানের বক্তব্য : অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এএসপি জিয়াউর রহমান মঙ্গলবার রাতে বলেন, মিরপুরে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের সময় ২ কোটি টাকা লোন নেওয়ার বিষয়টি আমার আয়কর ফাইলে দেখানো আছে। বাড়ি নির্মাণের সময় ৮০ লাখ টাকা লোন নেওয়া হয়। এই লোনের টাকায় রাজধানীতে বাড়ি আর আধুনিক ব্যস্ততম এলাকায় মার্কেট করা সম্ভব কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি করেও কিছু টাকা এখানে আনা হয়। গ্রামে মাদ্রাসা, মসজিদ ও ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণে অনেক টাকা খরচ করেছেন, যা আয়ের সঙ্গে কোনোক্রমেও সংগতিপূর্ণ নয়। টাকা আয়ের উৎস কী জানতে চাইলে বলেন, মসজিদ-মাদ্রাসায় মানুষজন কিছু দান করেছেন। স্ত্রীও ব্যবসা করেন। তিনি পার্টটাইম চাকরিও করেন। আয়কর নথিতে তা দেখানো আছে। বাস্তবে চাকরি আর ব্যবসার তো কোনো অস্তিত্ব পেলাম না, গাড়িটিও অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করেছেন বলা হলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ভাই আপনার সঙ্গে দেখা করব।