ফ্যাসিজমের সব মূল উপড়ে ফেলতে হবে


দেশের বিভিন্ন স্থানে মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা বলেছেন, শুধু শেখ হাসিনাই ফ্যাসিস্ট ছিলেন না; রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও জায়গায় ফ্যাসিজম ছিল। এগুলো উপড়ে ফেলতে হবে। এখন শুধু স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। তাই দায়িত্ব এখনই শেষ হয়ে যায়নি। রাষ্ট্র একক ব্যক্তির না হয়ে যেন সবার হয়, সেভাবে সংস্কার আনতে হবে। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার এমন ব্যবস্থা করবে, যেখানে রাষ্ট্রপতি যেখানে চিকিৎসা নেবেন, সেখানে একজন রিকশাচালকও স্বাস্থ্যসেবা পাবেন। গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং ছাত্র-জনতার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সোমবার তারা এসব কথা বলেন। এদিন বরিশাল, খাগড়াছড়ি, সিরাজগঞ্জ ও নরসিংদীতে সভায় মিলিত হন তারা। বরিশাল ব্যুরো জানায়, সমন্বয়করা বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের আগে তাদের মধ্যে কোনো বিভাজন ছিল না। তবে সফল অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনের প্রশ্নে কিছুটা বিভাজন তৈরি হয়েছে। আন্দোলনকারী সবাইকে একযোগে জনসাধারণের কল্যাণে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ করতে হবে। বিভাজিত হলে নতুন অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ হবে। গতকাল সোমবার বরিশাল সফরে দিনব্যাপী বিভিন্ন মতবিনিময় সভায় অংশ নেন কেন্দ্রীয় কয়েকজন সমন্বয়ক। এসব সভায় কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল হান্নান মাসুদ, সানজানা আফিফা অদিতি, এম এ সাঈদ রাইয়ান ফেরদৌস প্রমুখ বক্তব্য দেন। খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, শেখ হাসিনা পালানোর পর পরিবর্তিত বাংলাদেশে এখন আর কাউকে ঘুষ দিতে হয় না। তবে অনেক ঘুষখোর কর্মকর্তা এখন কাজে অনীহা দেখাচ্ছে। ঘুষ খেতে না পারায় কাজ স্লো করে দিয়েছে। গতকাল বিকেলে খাগড়াছড়ি টাউন হলে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রসঙ্গে হাসনাত বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এ সরকারের মেয়াদে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠিত হবে। স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ সব খাতে দুর্নীতি সমূলে উৎপাটন করা হবে। কোনো ক্ষেত্রেই কোনো দুর্নীতি থাকবে না, বৈষম্য থাকবে না।’ সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিসহ বহু মানুষ উপস্থিত ছিলেন। সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বৃহত্তর রাজশাহী জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেছেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর তাদের প্রতিটি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি একটি পক্ষ থেকে আরেকটি পক্ষে হস্তান্তর হয়েছে মাত্র। হাজার হাজার অজ্ঞাত আসামি দিয়ে বা মামলায় জড়িয়ে হাসিনা সরকারের মতো লুটপাট ও চাঁদাবাজি শুরু করেছে। তাদের এ অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতাকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আয়োজনে ইসলামিয়া সরকারি কলেজ মাঠে ছাত্র-নাগরিক সভায় বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, সভায় যোগ দিতে নরসিংদী পৌঁছালেও অনুষ্ঠানস্থলে যেতে পারেননি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। সভার স্থান নিয়ে নরসিংদীর সমন্বয়কদের দুই গ্রুপের কোন্দলে সমাবেশ না করেই নরসিংদী ত্যাগ করেছেন সারজিস। বিকেলে সমাবেশটি স্থগিত ঘোষণা করেন আয়োজকরা।