আবারও কেন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় প্রয়োজন


মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান : রাশিয়া-ইউক্রেনের মতো বিশ্ব মোড়ল বাংলাদেশের কাঁধে বার্মা যুদ্ধ চাপানোর চেষ্টা ! এটা কি মেনে নেবে বাংলাদেশের মানুষ ? নিশ্চয়ই না। এই জন্য শুধু একটাই পথ খোলা- দেশের হাল ধরতে আবারও প্রয়োজন মাথা না নোয়ানোর জাতি, বাঙালী জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে। যিনি কিনা দেশ ও দেশের স্বার্থের কাছে, কে দানব, কে বিশ্ব মোড়ল পরোয়া করেন না। শুধু সাহস বললে ভুল হবে, দুঃসাহসী তিনি। আমেরিকার এই গভীর ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসতে আবারও ক্ষমতা থাকতে হবে শেখ হাসিনার হাতেই…।

দেশের জন্য পদ্মাসেতু থেকে শুরু করে আমেরিকার ভিসানীতি নিয়ে হুমকি, ‘পরোয়া করি না’, শেখ হাসিনার সাহসী এই জবাব ও সাহসী পদক্ষেপ দেশবাসীর জন্য নিঃসন্দেহে সহায়ক শক্তিও বটে। নানা অজুহাতে আমেরিকার দুরভিসন্ধি আঁচ করতে শেখ হাসিনার খুব একটা সময় লাগেনি। অকপটে হাটে হাড়ি ভেঙেছেন- মনে মনে গ্যাস আর ‘সেন্টমার্টিন চায় যুক্তরাষ্ট্র।

এসব কী শুধুই গল্প ! পক্ষপাতিত্বমূলক কথা বার্তা ! না; আসুন, উত্তর খুঁজি …

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় স্বাবলম্বিতা অর্জনে পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয় এ নীতিতে বাংলাদেশ স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে, দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থকে প্রধান্য দিয়ে ভারত, চীন, রাশিয়া, ইরান, সৌদী আরবের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক, কূটনৈতিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে এগিয়ে চলেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অথচ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ নিয়ে হঠাৎ অতি উৎসাহী হয়ে উঠেছে আমেরিকা, নানা বিবৃতি দিচ্ছে।

ভাবুন তো, হঠাৎ আমেরিকার এত উৎসাহ কেন ? তারা গণতন্ত্রের টার্ম ইউজ করছে অথচ পৃথিবীতে এমন একটি দেশের নাম কেউ বলতে পারবে না সেখানে আমেরিকা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। বরং আমেরিকা যখন কোনো দেশের গণতন্ত্রের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে উঠে সে দেশের সরকার বা বিরোধী দলের চেয়ে জনগণের বেশি দুর্ভোগ বয়ে এসেছে।

আমেরিকার এ হঠাৎ উৎসাহের হেতু কি গণতন্ত্র না কি তেলবাজী ? আসলে আমেরিকা দিল্লি মানে ভারতকে ডমিনেট করতে বাংলাদেশকে খেলার মাঠে নামাতে চায়। দিল্লিকে আমেরিকা ক্লোজ এলাই হিসেবে পাশে চায়। ক্লোজ এলাই হিসেবে পুরোপুরি পাশে না পেলে ভারতের পার্শ্ববর্তী বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশ মানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত করতে চেষ্টা করে তাদের পছন্দের পুতুলকে ক্ষমতায় বসাতে চেষ্টা করছে আমেরিকা। সেই পুরোনো টেকনিক অ্যাপ্লাই করছে আমেরিকা।

যে অভিযোগ ফেলবার মতো নয় যে, এই বিশ্বমোড়ল তাদের ভূ-রাজনৈতিক সামরিক স্বার্থ দেখার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ চাপিয়েছে, চীনের কাঁধে তাইওয়ান যুদ্ধ চাপানোর চেষ্টা করছে আর বাংলাদেশের কাঁধে বার্মা যুদ্ধ চাপানোর চেষ্টা চলছে।

বঙ্গপোসাগরে সামরিক অবস্থান নেওয়ার পাঁয়তারা শুরু এখানেই। বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াত যারা নিজেরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে না পেরে, জনগণের সাড়া না পেয়ে- বিদেশি বিভিন্ন মহলের কাছে গিয়ে ধরনা দিয়ে খাল কেটে কুমির আনছে। প্রশ্ন উঠেছে, তারা দেশের বন্ধু নাকি শত্রু ?

আমেরিকা যার বন্ধু তার শত্রু দরকার নেই – এই মন্তব্যটি করেছিলেন এক সময়ের দক্ষিণ ভিয়েতনামের শাসকের কাজিন এবং De-Facto ফার্স্ট লেডি ম্যাডাম নু। এই আমেরিকার অতীত সম্পর্ক গুলো থেকে দেখা যায় এরা যাদেরই বন্ধু হয়েছে এ পর্যন্ত সবার অবস্থাই শোচনীয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আর রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের স্বার্থ যার কাছে একমাত্র বিবেচ্য; সে যার বন্ধু তার শত্রুর দরকার হয় না।

লেবাননের হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদের প্রধান সাইয়্যেদ হাশিম সাফিউদ্দিন বলেছেন, কোনো কোনো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ভরসা করে, এটা ভুল। ইউক্রেন ইস্যুতেও তা প্রমাণিত হয়েছে। এই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্য ইউক্রেনকে উসকানি দিয়েছে এবং তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু যখনি তারা বুঝতে পেরেছে তাদের স্বার্থ ঝুঁকির মুখে পড়বে তখনি তারা প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছে।

এই চলমান যুদ্ধ যে কেবল বাজার অস্থিতিশীল করছে তা নয়, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহন ভাড়া বেড়ে গেছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে আমদানি-রপ্তানি খাতের ওপর। রাশিয়ার উপর বিভিন্ন দেশের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাজারে। মূল্যস্ফীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম লাগাম ছাড়া হয়ে যায়।

আবারও মনে করিয়ে দেওয়া দিচ্ছি- ‘আমেরিকা যার বন্ধু তার শত্রুর দরকার নাই’, কারনগুলো- আমেরিকার অতীত সম্পর্কগুলো থেকে তাই বেরিয়ে আসে। আমেরিকা যাদেরই বন্ধু হয়েছে এ পর্যন্ত সবার অবস্থাই শোচনীয়।

যেমন- মুসলিম প্রধান দেশ সিরিয়ার বাশার আল আসাদ -আমেরিকা তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে আর তার বন্ধু ছিল, সেই সিরিয়ার যুদ্ধ অবস্থার দায় আমেরিকা এড়াতে পারে না। এমনকি কথা থাকলেও আমেরিকা বাশারকে সাহায্য না করে তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চেয়েছে। বাশার আল আসাদ শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সাহায্য নিয়ে টিকে আছেন। আরেক মুসলিম প্রধান দেশ ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বন্ধু ছিল সেই সাদ্দামকেই মরতে হলো আমেরিকার হাতেই। আরেক মুসলিম প্রধান দেশ লিবিয়ার গাদ্দাফিকেও মরতে হল। অপরদিকে আফগানিস্থান থেকে রাশিয়ান বামপন্থি সরকারকে হটানোর জন্য আমেরিকা তালেবানকে তৈরি করেছিল। এই সব সত্য অস্বীকার করবে সাধ্য আছে কার ? কিন্তু সেই তালিবান এখন আমেরিকার অন্যতম শত্রু।

এই পৃথিবীর সমস্ত উগ্রবাদী সংগঠনের হাতেই আমেরিকার অস্ত্র,তাহলে আমেরিকা নাই কোথায়। আবার এই আমেরিকাই কিন্তু পৃথিবীতে শান্তির জন্য কাজ করছেন। আমেরিকা শান্তি ও গণতন্ত্রের পতাকাবাহী ফেরোয়ালা। শান্তি লাগবে শান্তি; গণতন্ত্র লাগবে গণতন্ত্র ? সাথে ফ্রিতে মানবাধিকার !

তারা দেশের শত্রু, রাষ্ট্রের, জনগণের নির্বাচনের শত্রু। বাংলাদেশ ঘিরে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মধ্যেই এবারের বাজেট। তাই এবারের বাজেট বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব আত্মমর্যাদা রক্ষার বাজেট। বাংলাদেশ আমেরিকার পদানত হয়ে যুদ্ধের ক্ষেত্রে পরিণত হবে, না কি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে উন্নয়ন স্বাবলম্বিতার পথে এগিয়ে যাবে সেই রাজনৈতিক ফয়সালা এ বাজেটের মধ্য দিয়েই করতে হবে।

এইখানেই শেষ নয় ! আমেরিকা পালেস্টাইনের বন্ধু, ইয়াসির আরাফাতকে নোবেল দিয়ে আর মাঝে মাঝে দাওয়াত দিয়ে আমেরিকায় নিয়ে ঘোষণা দেওয়া হতো, আমরা শান্তির খুব দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু সেই দাওয়াতের পরেই ইসরাইল পেলেস্টাইনের নতুন এলাকা দখলে নিয়ে যায় তার কিছুদিন পরেই আমেরিকা সেটার বৈধতা দেয়। এখন সেই ইসরাইল পুরো পেলেস্টাইন দখল করে পেলেস্টাইনকে একটা করিডোর বানিয়ে রেখেছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি বিএনপি মদদে ভিপি নূরেরা মুসলিম বিশ্বের আবেগের জায়গা ফিলিস্তিন বা প্যালেস্টাইনকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে ইসরাইলি গোয়েন্দাদের সাথে আঁতাত করে !

আমেরিকার কাছে কোন কিছুই অবিচার নাই; সাদ্দাম হোসেনকে মারার পর তারা বুঝতে পারে- সাদ্দামের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ কিংবা তাদের পেন্টাগনের রিপোর্ট ভুল ছিল। কিন্তু ততো দিনে ইরাক তছনচ, সমৃদ্ধ একটা দেশ কয়েক টুকরো আর সাথে গৃহযুদ্ধ। আর মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন আমেরিকার অবস্থান সম্পর্কে কে না জানে ?

তাই আমেরিকার বন্ধুত্বকে এক বাক্যে বলা যায়: অবিচারই যার ন্যায় বিচার; সে যার বন্ধু তার শত্রুর দরকার হয় না।