কেন্দুয়ায় গ্রামের বাড়িতে সমাহিত হলেন বরেণ্য অর্থনীবিদ ড. আনিসুর রহমান
আনোয়ার উদ্দিন কেন্দুয়া প্রতিনিধি নেত্রকোনা ময়মনসিংহ
বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ও বিশিষ্ট লেখক ড. আনিসুর রহমানকে নেত্রকোনায় তাঁর গ্রামের বাড়িতে সমাহিত করা হয়েছে। বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে জেলার কেন্দুয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের কাউরাট গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। এর আগে বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে গ্রামের মাদরাসা মাঠে এই গুণীজনের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রয়াতের ছোট ভাই ভাষাবিদ আমিনুর রহমান, চাচাতো ভাই মোজাম্মেল হক মন্টু, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এডভোকেট সারোয়ার জাহান কাউসার, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম মাজুসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। শেষে ফুলের তোড়া ড. আনিসুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্থানীয়রা।
এদিকে গত রোববার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অর্থনীতিবিদ ড. আনিসুর রহমান। মৃত্যুকালে তিনি তিন মেয়ে রেখে গেছেন। পরে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ড. আনিসুর রহমানের মরদেহ ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়। এরপর সেগুন বাগিছা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
ড. আনিসুর রহমানের চাচা ভাই স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোজাম্মেল হক মন্টু বলেন, তিনি খুব সাদাসিধে জীবন যাপন করেছেন। ক্ষমতা ও অর্থের লোভ তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। ব্যক্তিগত জীবনে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের থেকে একটু আলাদা। কোনো এক সময় অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে আন্তজার্তিক পর্যায়ে উন্নীত হলেও সহজ সরল আড়ম্বরহীন ব্যবহার ও চালচলনে কোনো রকম তারতম্য বা পরিবর্তন কেউ দেখেননি। তিনি ছোট বেলা থেকেই কিছুটা আপন ভোলা মানুষ ছিলেন। মানবিক মানুষ হিসেবে স্কুল জীবনে নিজের টিফিনের খাবার অন্যদের খাইয়েছেন। মানুষের অর্থনীতির মুক্তির লক্ষ্যে দেশের এক প্রাপ্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছোটে বেড়িয়েছেন। অনেক গরীব অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার খরচ মিঠিয়েছেন ব্যক্তিগত অর্থে।
ড. আনিসুর রহমান তথকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী হাফিজুর রহমানের ছেলে। তিনি ১৯৩৩ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। তার মা আনোয়ারা বেগম। ১৯৪৯ সালে সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল ঢাকা থেকে এসএসসি, ১৯৫১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে প্রথম বিভাগে বিএ অর্নাস সম্পন্ন করেন। ১৯৫৬ সালে অর্থনীতিতে বিষয়ে এমএ প্রথম বিভাগে প্রথম ও ১৯৬২ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রভাষক এবং ১৯৬২ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের রীডার হিসাবে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর এবং ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৪ সালে প্রথম ডিরেক্টর ইনস্টটিউট অব সোসাল সায়েন্স এবং প্রফেসর ইস্ট এন্ড ওয়েস্ট সেন্টার হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে তিনি ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনে মন্ত্রীর পদমর্যাদা এক বছর দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মক্ষেত্র তার পছন্দ না হওয়ায় তিনি সেই পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগেরে প্রফেসর পদে ফিরে যান। ড. আনিসুর রহমান ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সুইজারল্যান্ড ও জেনেভাতে আন্তজার্তিক শ্রম সংস্থায় সিনিয়র রিচার্স অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বোর্ড অব ডিরেক্টর রিচার্স ইনসিয়ে ভিভস বাংলাদেশ, রবীন্দ্র সংগীত ছায়ানট সংগীত বিদ্যালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর লেখা বইগুলোর হল- উন্নয়ন জিজ্ঞাসা, অপহৃত বাংলাদেশ, পিপলস সেলফ ডেভেলমেন্ট, অসীমের স্পন্দন- রবীন্দ্র সংগীত বোধ ও সাধনা, যে আগুন জ্বলে ছিল- মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ, সঙ্গস অব টেগোর, ফিলসফি, সিলেক্টেড ট্রানশ্লেশনস, পেইন্টিংস, পার্টিসিপেশন অব দি রুরাল পুয়োর ইন ডেভেলপমেন্ট, মাই স্টোরি অব ১৯৭১, একুশে ও স্বাধীনতা: বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং সমাজবাস্তবতা, পথে যা পেয়েছি-১, পথে যা পেয়েছি-২, দ্য লস্ট মোমেন্ট: ড্রিমস উইথ অ্যা নেশন বর্ন থ্রু ফায়ার ইত্যাদি।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।