ইন্টারনেট ‘ব্ল্যাকআউট’ হলে ভোট বন্ধ: সিইসি


নির্বাচনকে অস্বচ্ছ করতে \'ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট\' হলে নির্বাচনকে \'ব্ল্যাকআউট\' (বন্ধ) করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। বৃহস্পতিবার তিনি বলেছেন, নির্বাচন স্বচ্ছ হতে হবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো কূটকৌশল করতে দেওয়া হবে না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের বৈঠকে তিনি একথা বলেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে এই সংলাপ হয়। দেশের ৩২ নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও ২০টির প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সিইসি বলেন, কমিশন বিশ্বাস করে, সরকার এবং দলের মধ্যে পার্থক্য আছে। সেই বিভাজনকে ভুলে গেলে চলবে না। কমিশনকে সাহায্য করবে সরকার, দল নয়। পর্যবেক্ষদের উদ্দেশে সিইসি বলন, নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অস্বচ্ছতার অভিযোগ আসছে। সেই অস্বচ্ছতাকে দূর করতে পর্যবেক্ষকরা একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হতে পারেন। কাজেই পর্যবেক্ষকদের আরও বেশি প্রশিক্ষিত হতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব অর্থায়নে কিছু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের আগ্রহের কথা জানিয়ে সিইসি বলেন, ইভিএম খুবই সুবিধাজনক। ইভিএম মেশিন এতদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিজেও এটা বুঝেছেন। যদি এর সপক্ষে সমর্থন পান এবং নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে সন্দেহ দূর করতে পারেন, তাহলে যুক্তিসংগত ব্যবহার করেও ভোটকে কিছুটা অহিংস করে তোলা সম্ভব হবে। কারণ ওখানে গিয়ে একজনের ১০টি ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। আরেকজন ৫০টি ব্যালট ছিনতাই করে ভোট দিতে পারবে না। কারণ, আগে আইডেনটিফায়েড হতে হবে, পরে বায়োমেট্রিপ মিলতে হবে। সিইসি বলেন, নৈতিকতার দিক থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। আমাদের সংস্কৃতি-কৃষ্টি গঠিত হয় নৈতিক মূল্যবোধ দিয়ে। এই জিনিসটা চর্চা করতে হবে। শুধু নির্বাচনসংক্রান্ত নয়, সকল কিছুতে নৈতিক মূল্যবোধ ক্ষয়ে গেছে। সেটিকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। সিইসি বলেন, অনেকে বলেছেন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ার কারণে সামাজিক সমস্যা হচ্ছে। তিনি নিজেও দেখেছেন গ্রামে নতুন এক ধরনের সহিংসতা তৈরি হয়েছে। সেখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত। তিনি বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে প্রকৃত অর্থে সেটা নির্বাচন হয় না। ২০০ থেকে ২৫০ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে হয়তো সরকার গঠন হবে, কিন্তু তার লেজিটেমেসি অনেক কমে যাবে। নির্বাচনে প্রতিযোগিতা প্রত্যাশিত, অংশগ্রহণ প্রত্যাশিত। বিরোধী দলগুলোকে সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। দৃঢ়ভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। নানা পরামর্শ :ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ বলেন, ইসির কাজ প্রচণ্ড কঠিন। ভোটের মাঠে সহিংসতা ও অনিয়মের কারণে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয় না। সহিংসতা কমাতে পারলে নারীর অংশগ্রহণ বাড়তে পারে। মানবাধিকার ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান গোলাম রহমান ভুইয়া বলেন, ইভিএমের ভিতরে জিনের উপস্থিতি আছে। সেই জিন দূর করতে হবে। মুভ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাইফুল হক বলেন, গত কয়েক নির্বাচনে ভোট না দিতে পারার কারণে নতুন ভোটারদের মধ্যে অনীহা ও ভীতি জন্মেছে। ইসির ইমেজ সংকটে রয়েছে বলে মনে করেন লুৎফুর রহমান ভুইয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা রাজিয়া। একদিনে সব জায়গায় ভোট না করার পরামর্শ দেন পর্যবেক্ষক সংস্থা ডরপের চেয়ারম্যান আজহার আলী তালুকদার। এছাড়া বেশ কয়েকজন পর্যবেক্ষক ডিসিদের রিটার্নিং কর্মকর্তা না করার পরামর্শ দেন।