কুরআনের আলোয় আলোকিত হোক রোজাদারের রুহ


কুরআনের আলোয় আলোকিত হোক রোজাদারের রুহ
আল্লাহপাকের দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, তিনি আমাদের সুস্থতার সঙ্গে রমজানের রোজাগুলো রাখার সৌভাগ্য দান করছেন, আলহামদুলিল্লাহ। দ্রুতই যেন রমজানের দিনগুলো চলে যাচ্ছে, তাই পুণ্যকর্মের কোনো দিক বাদ না দিয়ে সব ধরনের পুণ্যকর্মে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে। সুনিয়ন্ত্রিত সুখাদ্য যেমন দেহকে সুস্থ, সবল ও আনন্দময় করে, তেমনি সুনিয়ন্ত্রিত রোজা আত্মাকে সুস্থ, সতেজ ও আল্লাহর প্রেমিকে পরিণত করে।আসলে মাহে রমজানের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত বড়ই কল্যাণ ও বরকতমণ্ডিত। সে নিতান্তই দুর্ভাগা যে, এসব বরকত ও কল্যাণ থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখে আর অন্যান্য দিনের মতোই রোজার দিনগুলো অতিবাহিত করে।এ মাসে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআন নাজিল করেছেন। এই পবিত্র মাস ইবাদত-বন্দেগি ও দান-খয়রাত, কুরআন পাঠসহ সব কিছুর মাঝে জোশ সৃষ্টি হয়। মুমিন-মুত্তাকি বান্দা এ মাসে আগের তুলনায় অনেক বেশি দান-খয়রাত করে থাকেন এবং গরিব অসহায়দের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করেন। মহান আল্লাহতায়ালার কাছে আমাদের এ কামনা, তিনি যেন আমাদের এই দান-খয়রাত, ইবাদত-বন্দেগি, সিয়াম সাধনাকে কবুল করে আমাদের রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত দান করেন। আর পবিত্র এই রমজানে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার পরম সান্নিধ্যে আমাদের সিক্ত করবেন এটাই আমাদের একান্ত প্রার্থনা।এ মাসে ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি আমরা যদি বেশি বেশি নফল ইবাদতে রত হই আর গভীর মনোনিবেশসহকারে পবিত্র কুরআন পাঠের মধ্য দিয়ে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য যাচনা করি তাহলে ইনশাআল্লাহ তিনি আমাদের শেষ দশকে লাইলাতুল কদরের স্বাদ গ্রহণের সৌভাগ্য দান করবেন।রমজান এবং পবিত্র কুরআনে কারিমের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেভাবে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ রয়েছে-‘রমজান সেই মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন যা মানবজাতির জন্য হেদায়াতস্বরূপ এবং হেদায়াত ও ফুরকান (অর্থাৎ হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী) বিষয়ক সুস্পষ্ট প্রমাণাদি। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসকে পায়, সে যেন এতে রোজা রাখে, কিন্তু যদি কেউ রুগ্ণ এবং সফরে থাকে তাহলে অন্য দিন গণনা পূর্ণ করতে হবে, আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য চান এবং তোমাদের জন্য কাঠিন্য চান না এবং যেন তোমরা গণনা পূর্ণ কর এবং আল্লাহর মহিমা কীর্তন কর, এ জন্য যে, তিনি তোমাদের হেদায়াত দিয়েছেন এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)।পবিত্র রমজান মাসেই মহানবি (সা.) আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে প্রথম বাণী লাভ করেছিলেন। এ রমজান মাসেই হজরত জিবরাইল (আ.) বছরের আগে অবতীর্ণ হওয়া সব বাণী মহানবি (সা.)-এর কাছে পুনরাবৃত্তি করতেন। এ ব্যবস্থা মহানবি (সা.)-এর জীবনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।এ ছাড়া ‘হজরত মহানবি (সা.)-এর জীবনের শেষ বছরের রমজান মাসে হজরত জিবরাইল (আ.) পূর্ণ কুরআনকে মহানবি (সা.)-এর কাছে দুবার পাঠ করে শোনান’ (বোখারি)। এ থেকে বোঝা যায়, রমজানের সঙ্গে কুরআনের সম্পর্ক সুগভীর। এ পবিত্র মাসে রোজার কল্যাণ, আজ্ঞানুবর্তিতা এবং কুরআন পাঠ এ সব ইবাদত একত্রে মানবচিত্তে এক আশ্চর্য আধ্যাত্মিক অবস্থা সৃষ্টি করে।এ প্রসঙ্গে হজরত রাসূলে করিম (সা.) বলেন, ‘রমজান ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, খোদা! আমি তাকে পানাহার এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিবৃত্ত রেখেছি, তাই তুমি তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল কর। আর কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি এবং তাকে ঘুমাতে দেইনি, এ কারণে তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল কর। তাদের সুপারিশ কবুল করা হবে’ (বায়হাকি)।যেহেতু আমরা রমজানের রোজাগুলো ঠিকভাবেই রাখছি, তেমনিভাবে যদি কুরআন পাঠের প্রতি এবং এর মর্মার্থ উপলব্ধি করার দিকে মনোযোগী হই তাহলে এ কুরআনই আমাদের সুপারিশের কারণ হবে। এ ছাড়া রোজা রেখে কুরআনে কারিম পাঠ করা, এর অর্থ বুঝতে চেষ্টা করা এবং এর অনুশাসনাদি পালন করার মাধ্যমে মানুষের আধ্যাত্মিক দর্শন শক্তি সতেজ হয়। সে শয়তানি চিন্তাভাবনা ও প্রভাব থেকে নিরাপদ থাকে। অধিকন্তু মানুষ এক অনাবিল আধ্যাত্মিক প্রশান্তি এবং পরম সম্পদ লাভ করে, যা শুধু অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই উপলব্ধি করা যায়, এটি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।আমরা যদি হজরত রাসূলে কারিম (সা.)-এর জীবনে রমজানের দিনগুলোর দিকে লক্ষ করি, তাহলে দেখতে পাই তিনি (সা.) রমজানে কত বেশি নফল ইবাদত আর দান-খয়রাত করতেন। অন্য সময়ের তুলনায় রমজানে মহানবি (সা.)-এর ইবাদত আর দান-খয়রাতে আরও বেশি গতি লাভ করত আর পবিত্র মাহে রমজানের রাতগুলো মহানবি (সা.) অনেক বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাতেন। মহানবি (সা.)-এর নফল নামাজ আর দোয়ার আহাজারিতে জেগে থাকত নিঝুম রাতগুলো। এ ছাড়া এ মাসে তিনি (সা.) কুরআন শিক্ষা, শিখানো ও শোনার প্রতি অনেক বেশি গুরুত্ব দিতেন।আমাদের উচিত হবে, পবিত্র এ মাহে রমজানে নিজেদের ইবাদতে আমূল পরিবর্তন আনা। দয়াময় প্রভুর দরবারে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের ক্ষমা করে তার ক্ষমার চাদরে আবৃত করে নেন, আমিন।লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট masumon83@yahoo.com