ইয়ামাল-জাদুতে সবার আগে কোয়ার্টারে বার্সা
অনলাইন নিউজ ডেক্স

‘আঠারাে বছর বয়স কী দুঃসহ/স্পর্ধায় নেয় মাথা তােলবার ঝুঁকি/আঠারাে বছর বয়সেই অহরহ/বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি…’ – না, লামিন ইয়ামালের বয়স এখনও ১৮ ছোঁয়নি। তার আগেই কী সব কীর্তি গড়ে বসছেন! স্পর্ধায় মাথা তুলছেন, তোলাচ্ছেন বার্সেলোনারও; বিরাট সব দুঃসাহসে গড়ে বসছেন রেকর্ডও।আজ যেমন গড়লেন। বার্সেলোনার তরুণ তুর্কি আজ গোল করেছেন, করিয়েছেন তার কিছুক্ষণ আগে। তাতে একটা রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন তিনি। এ সব কিছুই তিনি করেছেন ইফতারের ঠিক আগে-পরে, মাঠে রোজা ভেঙে। তার এমন কীর্তির দিনে রাফিনিয়াও গড়েছেন একটা রেকর্ড। তাতে ভর করেই বার্সেলোনা বেনফিকাকে হারিয়েছে ৩-১ আর সামগ্রিক হিসেবে ৪-১ ব্যবধানে, সবার আগে পাড়ি জমিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটে।নিজেদের মাঠ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বার্সেলোনার সামনে হিসেবটা ছিল সোজা। আগের লেগে রাফিনিয়া-শেজনি-পেদ্রিদের অসামান্য পারফর্ম্যান্সের পর একটা ড্রই যথেষ্ট হতো কাতালানদের শেষ আটে তুলে দিতে।তবে কোচের নাম হানসি ফ্লিক, দল আট গোল করলেও যিনি ডাগআউটে বসে থাকেন রাগী হেডমাস্টারের মতো পাংশুটে মুখ করে, শিষ্যদের কাছে একটা ড্র তিনি কেন চাইবেন? বার্সেলোনা তা করেওনি। প্রথম মিনিট থেকেই জিততে চেয়েছে, ম্যাচের শেষ মিনিট পর্যন্ত অভিপ্রায়টা এক বিন্দু বদলায়নি।তার শুরুটা লামিনই করে দিয়েছিলেন। ম্যাচের বয়স তখন ১১ মিনিট, দারুণ এক বল বাড়ালেন রাফিনিয়াকে, ব্রাজিলিয়ান তারকা গোলটা করতে ভুললেন না। সে লিডটা অবশ্য বার্সা ধরে রাখতে পেরেছিল মোটে ২ মিনিট। ব্রাজিল তারকার গোলের জবাব সফরকারীরা দেয় এক আর্জেন্টাইনের লক্ষ্যভেদ দিয়ে, গোলটা করেন নিকলাস অতামেন্দি।ম্যাচটা বার্সেলোনায় শুরু হয়েছিল বিকেল ৬টা ৪৫ মিনিটে। সূর্যাস্তের তখনও কিছু সময় বাকি। সে গোলটার একটু পর সময় হলো অবশেষে। ম্যাচের ১৫ মিনিটে বিরতি পেলেন খেলোয়াড়রা। এই ম্যাচের স্কোয়াডে থাকা ৫ জন রেখেছিলেন রোজা। লামিন ইয়ামাল তো বটেই, ডাগআউটে থাকা তার সতীর্থ আনসু ফাতি, প্রতিপক্ষ দলে থাকা অরকান ককচু, কেরেম আকতুর্কগ্লু আর জেকি আমদোনি রোজা রেখে এসেছিলেন অলিম্পিক স্টেডিয়ামে। সবাই রোজা ভাঙলেন তখন।স্রেফ পানি খেয়ে রোজা ভাঙা লামিন তার আসল ভেলকিটা দেখালেন ইফতারের একটু পর। ম্যাচের ২৭ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক শট করে বসলেন। রক্ষণ আর বেনফিকা গোলরক্ষক আনাতোলি ত্রুবিনকে ফাঁকি দিয়ে বলটা জড়াল জালে। বার্সেলোনা তাদের লিডটা ফেরত পেল আবার। লামিন তাতেই ঢুকে পড়েন ইতিহাসের পাতায়। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে করে ফেলেন একই ম্যাচে গোল আর অ্যাসিস্ট।ম্যাচে এক আর পুরো লড়াইয়ে দুই গোলের লিড মোটেও স্বস্তির কিছু নয়, তা বার্সার চেয়ে ভালো কে আর জানে? তাই আরও একটা গোল প্রয়োজন ছিল দলটার। ৪২ মিনিটে তা পেয়েও গেল। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে প্রতিপক্ষ বিপদসীমার একটু ওপরে এসে বলটা রাফিনিয়াকে বাড়ান বার্সা লেফটব্যাক আলেহান্দ্রো বালদে। একটা ছোঁয়া বেশি নিয়েছেন মনে হচ্ছিল, তবে ফিনিশটা দারুণ করেছেন রাফিনিয়া। বলটা ফারপোস্ট দিয়ে গিয়ে জড়ায় বেনফিকার জালে। ওই এক গোলই বার্সার শেষ আটের ট্রেনে চড়ে বসাটা নিশ্চিত করে দেয়।আনুষ্ঠানিকতা সারার কাজটা পরের অর্ধে বার্সা ভালোভাবেই করেছে। একটা মিনিটের জন্যও মনে হয়নি, এ ম্যাচের নিয়তিতে লেখা আছে অন্য কিছু, এক জুল পরিমাণ শক্তিও অযথা খরচ করেনি বার্সা। তারই ফল, বার্সেলোনা শেষ আটে!ওহ হ্যাঁ! রাফিনিয়ার রেকর্ডের কথা তো বলাই হয়নি! রাফিনিয়া এই ম্যাচে জোড়া গোল করে চলতি মৌসুমে তার গোলসংখ্যাটা নিয়ে গেছেন ১১–তে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ব্রাজিলের কিংবদন্তি সব স্ট্রাইকার খেলে গেছেন, রোমারিও, রোনালদো নাজারিওরা ধন্য করে গেছেন এ প্রতিযোগিতাকে, তবে কোনো ফরোয়ার্ডই গোল সংখ্যাটাকে ১০ এর বেশিতে নিতে পারেননি; রাফিনিয়া পারলেন এবার।তিনি ভেঙেছেন কার রেকর্ড জানেন? নেইমারের। তিনিও রেকর্ডটা বার্সার জার্সি গায়েই করেছিলেন। তার রেকর্ডটা ছিল ১০ গোলের। তিনি রেকর্ডটা গড়েছিলেন ২০১৪-১৫ মৌসুমে। সে মৌসুমে বার্সেলোনাই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ হাসিটা হেসেছিল। রাফিনিয়া নিশ্চয়ই সে ফলটাও নিজের পক্ষেই চাইবেন!
