৬০ কোটির জামদানি বিক্রির টার্গেট
অনলাইন নিউজ ডেক্স

জামদানি শাড়ির কথা শুনলেই সামনে আসে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়ার কথা। নোয়াপাড়াকে জামদানির আঁতুড়ঘর বলা হয়। এ এলাকা থেকেই জামদানি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে যাচ্ছে। জামদানি শাড়ির ইতিহাস এখানে কয়েকশ বছরের। এ পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন প্রায় ৫ হাজার তাঁতি। ঈদ সামনে রেখে তাঁতিদের যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। তবে এবার জামদানি পল্লিতে সরাসরি ক্রেতা থেকে অনলাইনে শাড়ি বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তাঁতিরা। এবারের ঈদে ৬০ কোটি টাকার জামদানি বিক্রির টার্গেট রয়েছে ব্যবসায়ীদের।জানা গেছে, রূপগঞ্জের জামদানি সারা দেশ থেকে পাইকাররা এসে নিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রায় ২০ কোটি টাকার জামদামি ভারত, ভুটান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হচ্ছে। বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য জামদানি শাড়ি নানা ডিজাইনের হয়ে থাকে। এর মধ্যে পান্না হাজার, তেরছা, পানসি, ময়ূরপঙ্খি, বটপাতা, করলা, জাল, বুটিদার, জলপাড়, দুবলী, ডুরিয়া, বলিহার, কটিহার ডিজাইন বেশ জনপ্রিয়।সম্প্রতি নোয়াপাড়ায় সরেজমিনে দেখা যায়, জামদানি পল্লিতে প্রবেশ করতেই কানে আসছে খটখট শব্দ। ঈদ সামনে রেখে তাঁতিদের যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। নানা ডিজাইনের মাধ্যমে মনের মাধুরী মিশিয়ে তাঁতিরা তৈরি করছেন জামদানি শাড়ি। জামদানি পল্লিতে প্রায় ৩০টি শোরুম রয়েছে। দোকানগুলোতে পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। আগে তাঁতিরা শুধু জামদানি শাড়ি তৈরি করলেও বতর্মানে পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, টুপিস ও বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করছেন। এতে জামদানির জনপ্রিয়তা দিন দিন আরও বাড়ছে। তবে জামদানি পল্লিতে আসা ক্রেতারা হতাশা প্রকাশ করেছেন পল্লির পরিবেশ নিয়ে। বেহাল রাস্তাঘাট ও ঘিঞ্জি পরিবেশ জামদানি পল্লির সৌন্দর্য যেন অনেকটাই ম্লান করেছে বলে দাবি ক্রেতাদের।তাঁতিরা জানান, দু-তিন বছর কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকলেও এ বছর তাদের জামদানি বিক্রি খুব ভালো হচ্ছে। সরাসরি পাইকারি ও খুচরা ক্রেতারা তাদের কাছ থেকে শাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। দামও ভালো মিলছে। সরাসরি ক্রেতার পাশাপাশি তারা ই-কমার্স ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে জামদানি শাড়ি বিক্রির নতুন বাজার হিসেবে ব্যবহার করছেন। দুই মাধ্যম মিলিয়ে এবারের ঈদে তাদের প্রায় ৬০ কোটি টাকার শাড়ি বিক্রির টার্গেট রয়েছে।তারা আরও বলেন, বর্তমানে পল্লির তাঁতি ও দোকান মালিকদের সবারই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেজ রয়েছে। সেই পেজের মাধ্যমেই তারা শাড়ি বিক্রি করে চলছেন। বেশ সাড়াও পাচ্ছেন তারা। একেকটি শাড়ি ২ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। তাঁতিদের কাছ থেকে জামদানি কিনে অনেক যুবক অনলাইনে বিক্রি করেও বেশ লাভবান হচ্ছে।পল্লির বিসমিল্লাহ জামদানি মালিক আসিফ বলেন, গত কয়েক বছর জামদানির বাজার খারাপ গেলেও এ বছর থেকে জামদানির বাজার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। আগে শাড়ি বিক্রি করে তাঁতিদের মজুরি দিতে হিমশিম খেতে হলেও বর্তমানে ভালোভাবেই তা পারছেন। অনলাইনে শাড়ি খুব ভালো বিক্রি হচ্ছে।শফিকুল জামদানির মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের বেশ কয়েকটি নামিদামি ব্র্যান্ডের শোরুমে জামদানি দিয়ে আসছি কয়েক বছর ধরে। সুতার দাম বাড়ার কারণে ব্যবসা আগের মতো নেই। আমার জামদানি তৈরির কারখানায় আমেরিকার সাবেক হাইকমিশনার পিটার হাসসহ দেশের বাইরে থেকে অনেকেই পরিদর্শন করে গেছেন। জামদানিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।জামদানি ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম কাশেম বলেন, ভারতে জামদানি রপ্তানি করি। ভারতে আমাদের দেশের জামদানির কদর অনেক। বিভিন্ন মেলায় আমরা অংশগ্রহণ করি। জামদানির মাধ্যমে সারাবিশ্বে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করি।সোহাগ জামদানির মালিক সোহাগ জানান, তার বাবা নজরুল ইসলাম ২০ বছর ধরে জামদানির সঙ্গে সম্পৃক্ত। জামদানি পল্লিতে তার বাবার দোকানও রয়েছে। তিনি পাইকারদের পাশাপাশি অনলাইনে জামদানি শাড়ি বিক্রির চিন্তা করলেন। গত বছর সোহাগ জামদানি নামে এক পেজ খোলেন। পেজটিতে নিয়মিত জামদানির শাড়ির ছবি তুলে আপলোড করতে থাকলেন। কয়েক মাস যেতে না যেতেই দোকানের পাশাপাশি অনলাইনেও বিক্রি হতে থাকল অনেক। ঈদের কারণে অনলাইনে শাড়ি বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে।তবে তাঁত কারিগরদের অভিযোগ, গত কয়েক বছর জামদানির বাজার মন্দার অজুহাতে তাঁতকল মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ায়নি। কিন্তু এ বছর জামদানির বাজার ভালো হলেও তাঁত কারিগরদের মজুরি তেমন বাড়ানো হয়নি। বছরের ওপর বছর মজুরি না বাড়ার কারণে অনেকে তাঁত পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। এ ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে এই মজুরিতে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়েছে। তাই বেতন না বাড়ালে তাঁত-কারিগরের অভাবে এ পেশা বিলীন হয়ে যাবে এক সময়।এ ব্যাপারে তাঁতকল মালিকদের দাবি, জামদানি বিক্রি বাড়লেও খরচ অনেক বেড়েছে। সুতার দাম, রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন খরচ বাড়ায় শাড়ি বিক্রি বেশি হলেও তেমন লাভ হচ্ছে না। তাই কারিগরদের মজুরিও তেমন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এর পরও যতটুকু পারা যায় মজুরি বাড়ানো হচ্ছে।
