রাতজাগা আর সকালের ক্লান্তি দূর করবেন যেভাবে
অনলাইন নিউজ ডেক্স

রাতে সময়মতো বিছানায় গেলেও চোখে ঘুম আসতে দীর্ঘ সময় লাগে। এ ছাড়া ভোরবেলা ঘুম ভাঙলে তন্দ্রায় ভুগতে থাকার কারণে অনেকেরই বিছানা থেকে উঠতে সমস্যা হয়, ক্লান্তি লাগে। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। ফলে সকালে ঘুম থেকে উঠতে না পারা, আর রাতে গভীর ঘুমের অভাব খুব সাধারণ অভিযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের সমস্যার পেছনে নানান কারণ চিহ্নিত করেছেন এবং সমাধানে দিয়েছেন কিছু উপকারী পরামর্শ।১. প্রথমেই জানা প্রয়োজন কেন রাতে ঘুম আসে না। অথচ সকালে এত ঘুম পায় কেন?২. প্রতিদিন এমন সমস্যা অনুভবের কারণে মারাত্মকভাবে শারীরিক ক্লান্তি দেখা দেয়। অন্যদিকে রাতে ঘুমের জন্যও শরীর প্রস্তুত হতে পারে না।যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা—১. যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান মেডিকেল স্কুলের নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং ঘুমের ওষুধবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. সোনজা শুটজ সিএনএন ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছেন, যারা রাতে ঘুমাতে পারছেন না বা সকালে তন্দ্রাচ্ছন্ন আছেন, তাদের সমস্যার মূল কারণ হতে পারে ‘স্লিপ হাইজিন’ বা ঘুমের অভ্যাসের সমস্যা।সাধারণত শরীরের ঘুম-জাগরণ সাইকেল (সার্কাডিয়ান রিদম) যদি ঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে রাতে ভালো ঘুমের অভাব দেখা দেয়। বিশেষ করে যদি ঘুমের সময় এবং জেগে ওঠার সময় নিয়মিত না থাকে। তা হলে এটি ঘুমের গুণগত মানে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানান ড. সোনজা শুটজ।ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও ‘গোল্ডেন বেয়ার স্লিপ এবং মুড রিসার্চ ক্লিনিক’য়ের পরিচালক ড. অ্যালিসন হার্ভি একই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, এ ধরনের ঘুমের সমস্যা কখনো কখনো অস্বীকারযোগ্য বলে মনে হতে পারে। অনেকেই এটিকে অলসতার লক্ষণ মনে করতে পারেন, বিশেষত তরুণদের মধ্যে। তবে এটি আসলে কোনো ধরনের ইচ্ছাশক্তির অভাব নয়; বরং শরীরের ঘুমের প্রতি অত্যধিক ব্যাঘাত বা কোনো অস্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাসের ফলস্বরূপ হতে পারে।ঠিক করে নিন ঘুমের অভ্যাস—ঘুমের অভ্যাস সমস্যা সমাধানে প্রথমে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— ঘুমের ‘প্যাটার্ন ট্র্যাক’ করা। বিশেষজ্ঞরা জানান, রাতে ঘুমের সময় এবং সকালে ওঠার সময় সম্পর্কে সঠিক তথ্য রাখা দরকার। এটি বুঝতে পারলে সহজেই সমাধান বের করা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক স্লিপ ডিসঅর্ডার সেন্টার’য়ের ‘বিহেইভিয়রাল স্লিপ মেডিসিন প্রোগ্রাম’য়ের পরিচালক ড. মিশেল ড্রেরাপ বলেন, অধিকাংশ সময় রাতে ভালো ঘুম না আসার কারণ হচ্ছে— শরীরের ‘সার্কাডিয়ান রিদম’য়ের পরিবর্তন। এই পরিবর্তন যদি কেউ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তা হলে সকালে তন্দ্রাচ্ছন্নতা এবং রাতের ঘুমে সমস্যা হতে পারে।এ জন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন— ঘুমের সময়সূচি ঠিক করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো রাতের ঘুমের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করা এবং এই পরিবর্তন ধীরে ধীরে আনা। আর একজনের ঘুমের সময়সূচি পরিবর্তন করতে হলে, প্রতিদিন রাতে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট আগে বিছানায় যেতে হবে। তবে শেষ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা কিংবা সাপ্তাহিক ছুটির দিন অতিরিক্ত ঘুমিয়ে পড়া— ঘুমের সঠিক রুটিনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সপ্তাহের দিনগুলোতেই নির্দিষ্ট সময়েই উঠে পড়া উচিত।এ ছাড়া সঠিক ঘুমের জন্য ভালো পরিবেশ দরকার। আর ঘুমের পরিবেশও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, রাতে ভালো ঘুমের জন্য বিছানা ও ঘরের পরিবেশ উপযুক্ত হওয়া জরুরি। যেমন— শোবার আগে ‘ইলেকট্রনিক ডিভাইস’ ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি ঘরের আলো মৃদু রাখা উচিত। এ ছাড়া মনের শান্তি ও ভালো ঘুমের জন্য বই পড়া কিংবা ধ্যান করার মতো প্রশান্তির কাজগুলো করাও উপকারী।
