ভারতের সেনাবাহিনী ‘কাগুজে বাঘ’
অনলাইন নিউজ ডেক্স

ভারত-এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ গণতন্ত্র ও পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র। বিশাল জনগোষ্ঠী, পরমাণু অস্ত্র, মহাকাশে স্যাটেলাইট এবং বিশ্বের অন্যতম বড় সেনাবাহিনী যা দেখলে মনে হয় যেন এক দুর্দম্য সামরিক জায়ান্ট। কিন্তু এ সবই যেন এক ঝকঝকে মোড়কে মোড়ানো অচল বাস্তবতা।দুর্নীতি, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, পুরোনো যুগের কৌশল আর ধীরগতির সংস্কারে আক্রান্ত ভারতের সেনাবাহিনী এখন ‘কাগুজে বাঘে’ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।যুদ্ধের প্রস্তুতি যতটা প্রচারে, বাস্তবে তার অর্ধেকও নেই। এক কথায় দেশটির সেনাবাহিনী আজ একটি অসম্পূর্ণ ইঞ্জিন-যার গর্জন আছে কিন্তু গতি নেই। এপি।ভারত বহু দশক ধরে সামরিক খাতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিরক্ষা বাহিনী এখনো অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। আগে থেকেই পাকিস্তানকেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করত ভারত।কিন্তু গত এক দশকে চীন তার সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণে যেভাবে অগ্রগতি করেছে তা ভারতের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে চীনও। পাকিস্তান-চীনের উত্তেজনা কাটাতে তাদের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে ভারত।সংকটে বিমানবাহিনীভারতীয় বিমানবাহিনী বর্তমানে একটি সংকটজনক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমলাতন্ত্র, সেনাবাহিনীর তিনটি শাখার মধ্যে বাজেট নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং সরকারগুলোর কৌশলগত অস্থিরতা, বারবার পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে কৌশলগত অগ্রাধিকারের দোলাচল- এসব মিলিয়ে ভারতের সামরিক পরিকল্পনা এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মুখোমুখি।ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটের সিংহভাগ ঐতিহ্যগতভাবে স্থলসেনার জন্য বরাদ্দ হওয়ায় বায়ুসেনারা অবহেলিত হয়েছে এবং বর্তমানে তারা মারাত্মকভাবে জনবল ও সরঞ্জাম সংকটে ভুগছে।পূর্ণ শক্তিতে ভারতের বিমানবাহিনীর প্রয়োজন ৪২টি স্কোয়াড্রন। অথচ বর্তমানে মাত্র ৩১টি স্কোয়াড্রন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ১৯৬৪ সালে চালু হওয়া মিগ-২১ এখনো পর্যন্ত ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও তা অনেক আগেই বাতিল করা প্রয়োজন ছিল।এই বিমানগুলো আধুনিক যে কোনো যুদ্ধবিমানের কাছে প্রায়ই সহজ লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। তবে ২০২০ সালে চীনের সঙ্গে সীমান্ত উত্তেজনার ফলে ভারত সরকার বিমানবাহিনীকে শক্তিশালী করতে জরুরিভিত্তিতে নতুন বিমান সংগ্রহ কর্মসূচি গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে ফ্রান্স থেকে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করেছে দেশটি। যার মধ্যে প্রথম পাঁচটি ভারতে এসে পৌঁছেছে।পুরোনো কৌশলের ফাঁদে আটকে স্থলসেনারাভারতীয় স্থলসেনা দেশের সবচেয়ে পুরোনো ও বৃহৎ সামরিক শাখা হলেও বর্তমানে এক গভীর সংকটের মুখোমুখি। যুগ বদলালেও কৌশল বদলাচ্ছে না তারা। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাবে এখনো আটকে আছে ‘ট্যাংকে’ই। বাহিনীর হাতে আছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ প্রধান যুদ্ধ ট্যাংক। যার মধ্যে ১ হাজারের বেশি অত্যাধুনিক রাশিয়ান টি-৯০।যেখানে পাকিস্তানের হাতে রয়েছে প্রায় ২ হাজার ৪০০টি। সংখ্যার দিক থেকে ভারত এগিয়ে থাকলেও প্রশ্ন উঠেছে, আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে এই বিশাল ট্যাংক বাহিনী আদৌ কার্যকর কি না।পাকিস্তানের সমতল ভূখণ্ডে ট্যাংকের ব্যবহার সম্ভব হলেও চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধ হবে হিমালয়ের রুক্ষ, তুষারাবৃত পর্বতাঞ্চলে। সেখানে ট্যাংক চলাচল কার্যত অসম্ভব।সীমান্তে সীমাবদ্ধতা, লজিস্টিক সুবিধার অভাবচীন ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই সীমান্ত উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিশেষ করে লাদাখ অঞ্চলের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর। দুদেশই তাদের সীমান্ত অবকাঠামো শক্তিশালী করতে বছরের পর বছর কাজ করে যাচ্ছে। তবে এই প্রতিযোগিতায় চীন বেশ কয়েক ধাপ এগিয়ে আছে।চীন সীমান্তের কাছাকাছি উচ্চগতির রেললাইন তৈরি করেছে। যা তাদের দ্রুত সেনা ও রসদ পরিবহণে বিশাল সুবিধা দেবে। এ ছাড়া তারা সীমান্তে উন্নত সড়ক নির্মাণ করেছে এবং সেনাদের জন্য শীতপ্রতিরোধক আধুনিক আবাসন তৈরি করেছে। যেখানে -৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেও তারা টিকে থাকতে পারে।ভারতও লাদাখ অঞ্চলে সড়ক উন্নয়নের চেষ্টা করেছে। কিন্তু পার্বত্য ভূপ্রকৃতি কাজটিকে অত্যন্ত কঠিন করে তুলেছে। কিছু উন্নয়ন করলেও পার্বত্য ভূপ্রকৃতি, উচ্চতা ও বরফপাত পরিবহণ ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে তোলে। অনেক সময়েই সেনা ও সরঞ্জাম পৌঁছাতে ট্রাক ও হেলিকপ্টারের ওপর নির্ভর করতে হয়। যা ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ।শীতকালে পানির উৎসগুলো জমে যায় এবং যেগুলো জমে না সেগুলো অধিকাংশই লবণাক্ত বা ব্যবহারের অযোগ্য। ফলে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে ট্রাকে করে পানি পরিবহণ করতে হয়। যা দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের জন্য একেবারেই অনির্ভরযোগ্য এবং বেশ ব্যয়বহুল।নৌশক্তির দৌড়েও চীনের থেকে পিছিয়েভারতীয় নৌবাহিনী বর্তমানে এক গুরুত্বপূর্ণ রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাদের মূল লক্ষ্য তিনটি এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার গ্রুপ গঠন করে সমুদ্রের গভীরে যুদ্ধশক্তি প্রক্ষেপণ সক্ষমতা তৈরি করা। এই পরিকল্পনার আওতায় ১৫০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান অন্তর্ভুক্ত করার কথা থাকলেও বাস্তবতা অনেকটাই ভিন্ন।বর্তমানে ভারতের হাতে আছে মাত্র একটি বিমানবাহী রণতরী। এদিকে নির্মাণ ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় নৌবাহিনীর বাজেট ২০১২ সালের ১৮ শতাংশ থেকে ২০২০ সালে কমে ১৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।এদিকে চীন তার বিস্ময়কর জাহাজ নির্মাণ কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেকে এই অঞ্চলে নৌশক্তির অগ্রগামী শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। তাদের নৌবাহিনীর হাতে এখন রয়েছে-বেশিসংখ্যক এবং উন্নত সাবমেরিন, বড় এবং দ্রুতগামী ডেস্ট্রয়ার ও করভেট, দুটি সক্রিয় এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার ফ্লিট, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ছোট কিন্তু অত্যাধুনিক, দ্রুতগতিসম্পন্ন, ভারী অস্ত্রে সজ্জিত নেটওয়ার্কড জাহাজ।
