ইশরাক ইস্যুতে বিক্ষোভ যৌক্তিক ও সঙ্গত মনে করে বিএনপি
অনলাইন নিউজ ডেক্স

আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ানোকে ভালোভাবে দেখছে না বিএনপি। সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেতারা অভিন্ন মত দিয়ে বলেছেন, এ নিয়ে সরকারের ‘গড়িমসি’ কোনোভাবেই কাম্য নয়। দলটি নীতিগতভাবে মনে করে, এমন অবস্থায় ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। মেয়র হিসাবে ইশরাককে শপথ পড়ানোর দাবিতে তার কর্মী-সমর্থক ও ঢাকাবাসী যে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ করছেন, সেটিকে যৌক্তিক ও সঙ্গতও মনে করে বিএনপি।মঙ্গলবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আদালতের রায় ঘোষণার পরও ইশরাককে শপথ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। আদালতের রায়ে চট্টগ্রামে শাহাদাত হোসেন মেয়র হতে পারলে ইশরাক কী দোষ করেছেন। অর্থাৎ সরকার গায়ের জোরে ইশরাককে মেয়র হতে দিচ্ছে না।’ আগের দিন সোমবার সিলেটে এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় নগরভবনের সামনে চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি আহ্বান করছি, অতি অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে আদালত ঘোষিত ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করানোর ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় ঢাকায় আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হয়তো আরও বৃহত্তর আন্দোলন করতে হতে পারে।’গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়রম্যান তারেক রহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য- ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস (অনলাইন), গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (অনলাইন), আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান (অনলাইন), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (অনলাইন), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (অনলাইন) এবং অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কা, সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ (তারিখ) আদায়ে রাজপথে কর্মসূচির পরিকল্পনা : স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন এজেন্ডা থাকলেও মূলত দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ (তারিখ) আদায়ে রাজপথে কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি। সংঘাত ও সহিংসতা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কর্মসূচির লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনাও সাজাচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে মিত্র দলগুলোও সংহতি জানিয়ে একই কর্মসূচি পালনের চিন্তা করছে। যা নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা হয়। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, সংসদ নির্বাচন নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অংশ ক্ষমতায় থাকতে নানা অজুহাতে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন কিছু ইস্যু নিয়ে হঠাৎ করে নানা পক্ষের মাঠে আন্দোলনে নামার ঘটনাকে তারা সন্দেহের চোখে দেখছেন।নীতিনির্ধারকদের মতে, জাতীয় নির্বাচন বিলম্ব ও কোনো বড় ঘটনাকে আড়াল করতে এসব আন্দোলনে সরকারের ওই অংশের ইন্ধন রয়েছে। তাদের এ চেষ্টা সফল হলে দীর্ঘমেয়াদে দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে। পাশাপাশি পতিত আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেবে। এমন শঙ্কা থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং জুলাই আন্দোলনের স্পিরিট ধারণ করে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ আদায়ের দাবিতে রাজপথে নামতে চায় দলটি। কী ধরনের কর্মসূচি করা যায়-তা নিয়ে আলোচনা হয়, তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের যৌক্তিকতার বিষয়টি বর্তমানে বিএনপি যেভাবে বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরছে, আরও কিছুদিন ঠিক একইভাবে তা অব্যাহত রেখে সরকারের ওপর চাপ বজায় রাখবে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেন, যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকারকে তারা ব্যর্থ হতে দিতে চান না এবং শুরু থেকেই সরকারকে সর্বাÍকভাবে সহযোগিতা করে আসছেন; সুতরাং সরকারের ওপর এখনো তাদের প্রত্যাশা, তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। বিরাজমান হযবরল পরিস্থিতিসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সামনের দিকে অগ্রসর হবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।সূত্রমতে, বৈঠকে স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা যে থেমে থেমে নিত্য-নতুন দাবি তুলছেন এবং দাবি আদায়ে রাজপথে নামছেন, এর মধ্য দিয়েও সামনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। একাধিক নেতা বলেন, রাষ্ট্রপতি অপসারণ, সংবিধান বাতিল, গণভোট, স্থানীয় সরকার নির্বাচন-এসব ইস্যুতে তারা (এনসিপি) ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। সরকার সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কিনা, কিংবা সরকারের অবস্থান তখন কী হয়, সেটি নিয়েও তাদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। বৈঠকে নেতারা বলেন, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো ক্রমাগতভাবে দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার এখনো সেটাকে সেভাবে আমলে নিচ্ছে না। বরং সংস্কার ও নির্বাচনকে তারা মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে সরকার আসলে কী করতে চায় কিংবা আদৌ নির্বাচন দেবে কিনা, বৈঠকে তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেন নেতারা।
