ফের অস্থির হয়ে উঠছে ভোজ্যতেলের বাজার
অনলাইন নিউজ ডেক্স
দেশে ভোজ্যতেলের বাজার কয়েক মাস ধরে দাম কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা আবার অস্থির হয়ে উঠেছে। ইন্দোনেশিয়ায় পাম অয়েল নির্ভর বায়োফুয়েল (জৈব জ্বালানি) নীতি ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যপণ্যটির মূল্য বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের পাম অয়েল ও সয়াবিন তেলের বাজারে।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি ভোজ্যপণ্যের বাজার। আমদানি করা পণ্যের বড় অংশ এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়। ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক মাসে খাতুনগঞ্জে পাম অয়েলের দাম মণপ্রতি ৭০-৭৫ টাকা বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে সয়াবিনেও—দাম বেড়েছে মণপ্রতি ১০০ টাকা। বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে দেশেও এখন পাম অয়েলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
বিশ্ববাজারে এপ্রিল-জুনে পাম অয়েলের দাম স্থিতিশীল ও কিছুটা নিম্নমুখী ছিল। এপ্রিলে প্রতি টন অপরিশোধিত পাম অয়েলের দাম ছিল ৯৯৪ ডলার, যা মে মাসে কমে ৯০৮ ডলারে নামে। জুনে তা আবার বেড়ে হয় ৯৩৫ ডলার। তবে ২৫ জুলাই তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে টনে ১ হাজার ২০ থেকে ১ হাজার ২৫ ডলারে।
গত কয়েক মাস বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত সয়াবিনের দাম প্রায় স্থিতিশীল ছিল। এপ্রিল-জুনে ভোজ্যতেলটির দাম ছিল ১ হাজার ১২০ থেকে ১ হাজার ১৬৭ ডলার। তবে জুলাইয়ের শুরুতে দাম স্থির থাকলেও মাসের শেষ দিকে মূল্য নেমে আসে ১ হাজার ডলারে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, পাম অয়েল দিয়ে বায়োফুয়েল উৎপাদন বাড়াচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটি বর্তমানে বায়োফুয়েলের উৎপাদন ৩৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশে উন্নীত করছে। ২০২৫ সালের মধ্যে তা ৫০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশে জৈব জ্বালানি হিসেবে চাহিদা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বাজারে এখন দাম বাড়ছে পাম অয়েলের।
খাতসংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, বায়োফুয়েল হিসেবে ব্যবহার বাড়লে পাম অয়েল সহজলভ্য থাকবে না। এতে সয়াবিনের চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি দামও বাড়তে পারে।
খাতুনগঞ্জ ঘুরে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার মণপ্রতি পাম অয়েল লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৭৭০ থেকে ৫ হাজার ৭৭৫ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ৫ হাজার ৭০০ টাকার মতো। সুপার পাম অয়েলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯০০ টাকায়। পাম অয়েলের দাম বাড়ায় সয়াবিনের দামও বেড়েছে মণপ্রতি ১০০ টাকা। এসও (সরবরাহ আদেশ) পর্যায়ে সয়াবিন লেনদেন হয়েছে ৬ হাজার ৫০০ টাকায়। পাইকারি দামের প্রভাব পড়ে খুচরা বাজারেও—খোলা পাম অয়েল ও সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ৪-৫ টাকা বেড়েছে।
বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, ‘দেশে এখন পর্যাপ্ত ভোজ্যতেলের মজুদ রয়েছে। ব্যাংকিং সমস্যা কমে যাওয়ায় ও ডলারের সরবরাহ বাড়ায় আমদানি স্বাভাবিক হয়েছে। তবে ইন্দোনেশিয়ার বায়োফুয়েল ইস্যুর কারণে সাম্প্রতিক সময়ে পাম অয়েলের দাম কিছুটা বেড়েছে।’
