নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন : প্রধান নির্বাচন কমিশনার হলেন সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন


নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনে গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট এ নিয়োগ দিয়েছেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।সিইসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে প্রেসিডেন্ট সদয় হয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগদান করেছেন। কমিশনার হিসেবে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁরা হলেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব তাহমিদা আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।সিইসি হিসেবে বিএনপি যে দুজনের নাম প্রস্তাব করেছিল, তার মধ্যে এ এম এম নাসির উদ্দীনের নাম ছিল। তিনি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যান এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বিসিএস ১৯৭৯ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। সিইসি পদে বিএনপির দেওয়া তালিকায় আরেক নামটি ছিল শফিকুল ইসলাম। বিএনপি চলতি মাসের শুরুতে অনুসন্ধান কমিটির কাছে এ তালিকা দিয়েছিল। বিএনপির মিত্রদলগুলোর বেশির ভাগের তালিকাতেও এ দুই নাম ছিল।এর আগে গত ২০ নভেম্বর নতুন ইসি গঠনে প্রেসিডেন্টের কাছে নাম প্রস্তাব করে সার্চ কমিটি। গত ৩১ অক্টোবর ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২’ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগের মাধ্যমে নতুন কমিশন গঠনে প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ দিতে সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটি গঠন করে সরকার। নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে ছয় সদস্য বিশিষ্ট সার্চ কমিটির আহŸায়ক আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। নাম প্রস্তাব করার জন্য কমিটিকে ১৫ কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়। অনুসন্ধান কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিতে প্রতিটি শূন্য পদের বিপরীতে প্রেসিডেন্টের কাছে দুজন ব্যক্তির নাম সুপারিশ করে।এদিকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০২২ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি নিয়োগ পাওয়া কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন গত ৫ সেপ্টেম্বর একযোগে পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে প্রায় সাড়ে তিন মাস নির্বাচন কমিশন শূন্য ছিল।চার্জ কমিটি গঠনের পর তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে সিইসি ও ইসি চার জনের নাম পাঠানোর আহবান জানায়। এ প্রেক্ষিতে বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলো নামের তালিকা পাঠায় চার্জ কমিটির কাছে। সে তালিকা থেকে চার্জ কমিটি বাছাই করে ১০ জনের নামের তালিকা প্রেসিডেন্টের কাছে প্রদান করে। প্রেসিডেন্ট সে দশ জন থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য চার জন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছেন। এ কমিশন একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং সকলের গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।কারণ প্রধান নির্বাচন কমিশনার অত্যন্ত যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তি। এ ছাড়া অন্য চার জন কমিশারও অত্যন্ত যোগ্য। দেশের চতুর্দশ সিইসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া এ এম এম নাসির উদ্দিন বিসিএস (প্রশাসন) ১৯৭৯ ব্যাচের নিয়মিত একজন কর্মকর্তা। ২০০৫ সাল থেকে ২০০৭ সালে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত সচিব পদে কর্মরত ছিলেন। নাসির উদ্দীনের বাড়ি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করে তিনি পেশাজীবন শুরু করেন শিক্ষক হিসেবে। পরে বিসিএস ৭৯ ব্যাচে তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। নাসির উদ্দীন ২০০৪ সালে তথ্য সচিব, এরপর জ্বালানি সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যান।নিয়োগ পাওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নাসির উদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা করা দরকার, তা তা করব ইনশাআল্লাহ। এ দায়িত্ব যখন আসছে, আমাদের সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে সবার সহযোগিতা নিয়ে। তিনি বলেন, মানুষ যাতে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাব। সদ্য নিয়োগ পাওয়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ২০১৪ সাল থেকে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। গত জুলাই–আগস্টের আন্দোলনে অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছে। এই আন্দোলনের মূল বিষয়ই ছিল ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। এত মানুষের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা সম্ভব নয়। সে জন্য সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা চালাব। তিনি মনে করেন, নির্বাচন কমিশনের জন্য বহুরকম চ্যালেঞ্জ থাকবে; সামনে আরও অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। সেটা বিবেচনায় রেখেই নতুন নির্বাচন কমিশন কাজ করবে।