সাংবাদিকদের জন্য বিপজ্জনক দেশ : আরএসএফ
মোঃ রাছেল রানা, প্রধান সম্পাদক
২০২৪ সালে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে বিশ্বজুড়ে ৫৪ জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের অবস্থান অত্যন্ত উদ্বেগজনক, কারণ নিহত পাঁচজন সাংবাদিকের মধ্যে তারা রয়েছেন। আরএসএফ (রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বাংলাদেশের অবস্থান তিন নম্বরে এবং সামগ্রিকভাবে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক বছর হয়ে দাঁড়িয়েছে।সাংবাদিকদের জন্য বিপজ্জনক দেশবিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক রূপ ধারণ করেছে, বিশেষত যুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়। আরএসএফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনের নাম উঠে এসেছে। সেখানে গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে মারা যাওয়া ১৮ জন সাংবাদিকের মধ্যে ১৬ জন গাজা উপত্যকায় নিহত হয়েছেন, দুইজন নিহত হয়েছেন লেবাননে।এর পরের অবস্থানে পাকিস্তান রয়েছে, যেখানে সাতজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এরপর মেক্সিকো এবং বাংলাদেশ, যেখানে পাঁচজন করে সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এই পরিস্থিতি বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার নতুন একটি অধ্যায় শুরু করেছে, যা তাদের পেশাগত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক সংকেত।২০২৪ সালে নিহত বাংলাদেশি সাংবাদিকবাংলাদেশে পাঁচজন সাংবাদিক নিহত হওয়ার ঘটনা দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা, ভয়ভীতি, এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনা একটি গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং জনগণের তথ্য পাওয়ার অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলছে।এই পাঁচজন সাংবাদিকের মৃত্যু দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে এবং তাদের পরিবার ও সহকর্মীদের জন্য শোকের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাংবাদিকরা যেন সহজেই তাদের কাজ করতে পারেন এবং নিরাপদে কাজ করতে পারেন, সে জন্য রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন।সাংবাদিকদের আটক ও জিম্মিআরএসএফের প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাংবাদিকদের আটক ও জিম্মি করার ঘটনা বাড়ছে। চীন, মিয়ানমার এবং ইসরায়েল সাংবাদিকদের আটকে রাখার শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে। চীনে ১২৪ জন, মিয়ানমারে ৬১ জন এবং ইসরায়েলে ৪১ জন সাংবাদিক আটক আছেন। এই সংখ্যা গত বছর ৫১৩ জন ছিল, কিন্তু ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫০ জনে। এছাড়া, ৫৫ জন সাংবাদিক বর্তমানে জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৫ জনকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জিম্মি করেছে।এ ছাড়া, আরও ৯৫ জন সাংবাদিক নিখোঁজ রয়েছেন, যারা বর্তমানে যে কোনো ধরনের সহিংসতার শিকার বা বন্দী অবস্থায় থাকতে পারেন। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শক্তিশালী উদ্যোগের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।সাংবাদিকদের জন্য নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করাএই প্রতিবেদনটির উদ্দেশ্য হল, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতা, বন্দী করার ঘটনা এবং তাদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। সাংবাদিকরা সমাজের চোখ ও কানের মতো কাজ করেন, তাদের ওপর হামলা বা হত্যাকাণ্ড হলে, তা পুরো সমাজের জন্য বিপদজনক। তথ্যের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের অধিকার রক্ষা করা গণতন্ত্রের অন্যতম মৌলিক ভিত্তি, এবং তা নিশ্চিত করতে সকল দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে কাজ করতে হবে।বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, আন্তর্জাতিক চাপ, এবং শক্তিশালী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এসেছে। শুধুমাত্র যখন সাংবাদিকরা তাদের কাজ নিরাপদে করতে পারবেন, তখনই সমাজে সঠিক তথ্য পরিবেশন এবং জনসচেতনতা তৈরি সম্ভব হবে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।