সুনামগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি ভাঙচুর, গ্রেপ্তার ৪


সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার এলাকায় ধর্ম অবমাননার ঘটনাকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি, দোকানপাট এবং স্থানীয় লোকনাথ মন্দিরে ভাঙচুর ও ক্ষতি সাধনের ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

ধর্ম অবমাননা পোস্টের পর উত্তেজনা

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৩ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার থানার মংলারগাঁও গ্রামে আকাশ দাস (২০) তার ফেসবুক আইডি থেকে ইসলাম ধর্মকে কটাক্ষ করে একটি অবমাননাকর পোস্ট দেন। পোস্টটি দ্রুত ডিলিট করা হলেও এর স্ক্রিনশট এলাকার জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এই ঘটনাটি স্থানীয় মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে, এবং আকাশ দাসের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেন তারা।

পুলিশের হস্তক্ষেপ ও ভাঙচুরের ঘটনা

অবস্থান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য দোয়ারাবাজার থানা-পুলিশ দ্রুত আকাশ দাসকে আটক করে। তবে, স্থানীয় লোকজন পুলিশের কাছ থেকে আকাশ দাসকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরবর্তী সময়ে তার নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ আকাশ দাসকে দোয়ারাবাজার থানায় না নিয়ে সদর থানায় নিয়ে যায়। এই পরিস্থিতির পর জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি, দোকানপাট এবং স্থানীয় লোকনাথ মন্দিরে হামলা চালায়। ভাঙচুর এবং ক্ষতিসাধন করা হয়, যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

প্রতিরোধ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ

এ ঘটনার পর সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ, জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসপি, ডিসি এবং পুলিশের উপস্থিতিতে উত্তেজনা প্রশমিত হয় এবং পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন:

আলীম হোসেন (১৯)
সুলতান আহম্মেদ রাজু (২০)
ইমরান হোসেন (৩১)
শাজাহান হোসেন (২০)

এরা সবাই স্থানীয় যুবক এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, তাদের কাছ থেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অবস্থান ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

এই হামলা সুনামগঞ্জসহ পুরো অঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা সরকারের কাছে ঘটনার বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা একযোগে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।

পুলিশের প্রতিক্রিয়া

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, এই ধরনের সহিংসতা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না এবং যারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে জানিয়েছে।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং সহিংসতার ঘটনায় সুনামগঞ্জে এক নতুন মাত্রা যোগ হলো। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং সামাজিক শান্তি রক্ষায় সবার সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে।