মহানগরের সক্ষমতা পরীক্ষায় বিএনপি


বিএনপি সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ দশ দফা দাবিতে আন্দোলন সফলে মহানগরের সাংগঠনিক শক্তিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার আগে ১৩ সাংগঠনিক মহানগরের সক্ষমতা পরীক্ষা করছে দলটি। এর অংশ হিসাবে এসব মহানগরের থানায় থানায় আগামীকাল শনিবার একযোগে পালন করা হবে পদযাত্রা। এ কর্মসূচিতে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রধান করে গঠন করেছে সমন্বয় টিম। তবে সাংগঠনিক থানা না থাকায় তিন মহানগরে বিভিন্ন ওয়ার্ড নিয়ে পদযাত্রা করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। এ পদযাত্রা থেকে সাধারণ জনগণের দাবিকে সামনে রেখে ১১ মার্চ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিকাল ৩টা থেকে একযোগে মহানগরের ৯৯ থানা এবং ৮ স্থানে পদযাত্রা করা হবে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তরে ২৬ থানায়, দক্ষিণে ২৪, নারায়ণগঞ্জে ৩, গাজীপুরে ৮, চট্টগ্রামে ১৫, রাজশাহীতে ৪, খুলনায় ৫, বরিশালে ৩, রংপুরে ৬ ও সিলেট মহানগরের ৫ থানায় পালন করা হবে এ কর্মসূচি। এছাড়া ৩ মহানগরে থানা না থাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ড মিলে ৮ স্থানে এ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহে ৩৩ ওয়ার্ডে মিলে ৫ স্থানে, ফরিদপুরে ২৭ ওয়ার্ড মিলে ১ স্থানে ও কুমিল্লা মহানগরের ২৭ ওয়ার্ড মিলে দুই স্থানে পদযাত্রা বের করবে। ‘গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানো, দমন-নিপীড়ন বন্ধ, খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং গণবিরোধী সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবিতে’ হবে এই পদযাত্রা। এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশব্যাপী সব মহানগরের অন্তর্গত থানায় পদযাত্রা সফল করতে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, মহানগরের থানায় থানায় সফল পদযাত্রা করা অনেক চ্যালেঞ্জ। তবে সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নানামুখী কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন ও জেলার মতোই শান্তিপূর্ণভাবে এই কর্মসূচি পালন করা হবে। বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকেও সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহানগরের নেতারা কর্মসূচি সফলে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি সভা করে নানা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। কালকের পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণসহ বড় মহানগরের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কেননা আগামী দিনে কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি। যা সফল করতে মহানগরের নেতাকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরের দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। এজন্য ঢাকা মহানগরের দিকে বেশি নজর দলের হাইকমান্ডের। যদিও সম্প্রতি কয়েকটি কর্মসূচিতে ঢাকা মহানগর তাদের শক্তি দেখিয়েছে। এবার থানায় থানায় সক্ষমতা দেখাবে বলে প্রত্যাশা করেন নীতিনির্ধারকরা। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, ‘উত্তরের ২৬ থানায় একই সময়ে আলাদাভাবে পদযাত্রা হবে। শতভাগ শান্তিপূর্ণভাবে হবে এ কর্মসূচি। আশা করছি থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাধারণ মানুষও এতে অংশ নেবে।’ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু বলেন, ‘দক্ষিণের ২৪ থানাসহ সব ওয়ার্ডে প্রস্তুতি সভা করেছি। জনসম্পৃক্ততামূলক এ কর্মসূচিতে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অংশ নিতে উন্মুখ হয়ে আছেন।’ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও কুমিল্লা মহানগরের থানায় থানায় হবে এই পদযাত্রা। খুলনা মহানগর বিএনপির সিনিয়র সদস্য ও কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘পাঁচ থানায় পদযাত্রা কর্মসূচি সফল করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জনসম্পৃক্ত এ কর্মসূচিতে স্থানীয় জনগণেরও সমর্থন রয়েছে। আশা করি, বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষও এতে অংশ নেবে।’ রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী ডন বলেন, ‘পদযাত্রা ঘিরে আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতোমধ্যে থানা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় ও প্রস্তুতি সভা করেছি। ছয় থানায় একই সময়ে পদযাত্রা বের করা হবে।’ ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক একেএম কাইয়ুম জঙ্গী বলেন, ‘সাংগঠনিক থানা না থাকায় ২৭ ওয়ার্ড মিলে এক স্থান থেকে পদযাত্রা বের হবে। সমন্বয় টিম গঠন : পদযাত্রা কর্মসূচি সফল করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে সমন্বয় টিম গঠন করেছে বিএনপি। এ টিমে থাকা নেতারা মহানগরের কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রধান সমন্বয়কারী মির্জা আব্বাস, চট্টগ্রাম মহানগরে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কুমিল্লায় বরকত উল্লাহ বুলু, নারায়ণগঞ্জে আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সিলেটে অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, খুলনায় শামসুজ্জামান দুদু, ফরিদপুরে অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, রাজশাহীতে মিজানুর রহমান মিনু, গাজীপুরে অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বরিশাল মহানগরে হাবিব উন নবী খান সোহেল, রংপুরে আসাদুল হাবিব দুলু ও ময়মনসিংহ মহানগরে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তরে প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্বে আছেন আমান উল্লাহ আমান। উত্তরের যে কোনো এক থানার পদযাত্রায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসাবে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া সমন্বয় টিমে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা সমন্বয়কারী ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা সহকারী সমন্বয়কারী এবং মহানগর বিএনপির সভাপতি/ আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক/ ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক/সদস্য সচিব সদস্য হিসাবে থাকবেন। বিভাগ/মহানগরের অধিবাসী জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতারা, সাবেক সংসদ সদস্য মহানগরের থানা পদযাত্রায় সম্পৃক্ত ও অংশগ্রহণ করার জন্য কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।