ক্রিকেটারের সঙ্গে জড়িয়ে বলিউড থেকে ছিটকে পড়েন বলিউড অভিনেত্রী


ক্রিকেটারের সঙ্গে জড়িয়ে বলিউড থেকে ছিটকে পড়েন বলিউড অভিনেত্রী
ছোটবেলা থেকেই অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন গীতা বসরা। তবে লন্ডনে জন্ম হলেও গীতা কিন্তু হলিউডে নয়, তিনি কাজ করতে চাইতেন হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে।আর তাই ১৯ বছর বয়সে বাবা-মাকে ছেড়ে লন্ডন থেকে মুম্বাইয়ে চলে আসেন গীতা। অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন চোখে বোনা থাকলেও ইন্ডাস্ট্রির মারপ্যাঁচ সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ছিলেন না তিনি। একের পর এক অডিশন দিয়েছেন। বহু ছবির নির্মাতা তাকে ফিরিয়েও দিয়েছিলেন।অবশেষে ২০০৬ সালে আদিত্য দত্তের পরিচালনায় ‘দিল দিয়া হ্যায়’ ছবিতে কাজ করেন তিনি। প্রথম সিনেমাতেই ইমরানের সঙ্গে কাজ করেছিলেন গীতা। ‘দিল দিয়া হ্যায়’ মুক্তির এক বছর পর গীতার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ছবি ‘দ্য ট্রেন’ মুক্তি পায়।এই ছবিতেও ইমরানের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাকে। ‘দ্য ট্রেন’ ছবিটি ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়ার পর হিট হয়। ততদিনে ইন্ডাস্ট্রিতে ইমরান ‘সিরিয়াল কিসার’ নামে পরিচিত হয়ে গেছেন। দ্বিতীয় ছবিতেও ইমরানের সঙ্গে কাজ করছেন দেখে বলিপাড়ার গুটিকয়েক বলিনির্মাতা অনুমান করে নিয়েছিলেন যে, গীতা লম্বা রেসের ঘোড়া নন।দ্বিতীয় ছবি হিট হওয়ার পর রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেন গীতা। ক্যারিয়ারের সিঁড়িতে পা রাখার প্রথম ধাপেই গীতার জীবনে আসে নতুন চরিত্র। ক্রিকেটার হরভজন সিংহ।শহরের বিভিন্ন জায়গায় গীতার মুখ দেখার পর তাকে প্রথম নজরেই ভালো লেগে যায় হরভজনের। কিন্তু গীতার পরিচয় জানতেন না তিনি। তিনি জানতেন যে, বলিপাড়ার খবরাখবর যুবরাজ সিংহের কাছে পাওয়া যাবে। তাই কোনো উপায় না পেয়ে যুবরাজের শরণাপন্ন হন হরভজন।গীতার সম্পর্কে যুবরাজকে খোঁজ নিতে বলেন হরভজন। অভিনেত্রীর সঙ্গে হরভজনের যোগাযোগ করিয়ে দেন যুবরাজ। তার পর গীতার সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন তিনি। কিন্তু হরভজনের এমন ব্যবহারে অভিনেত্রী বিরক্তবোধ করতেন। টানা ১০ মাস কথা না বলে হরভজনকে এড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি।তবু প্রয়োজনের সময় গীতাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন হরভজন। আইপিএল খেলা দেখার জন্য দুটো টিকিট প্রয়োজন ছিল গীতার। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই টিকিটের খোঁজ পাচ্ছিলেন না। অগত্যা হরভজনের কাছেই সাহায্য চান তিনি। গীতাকে সঙ্গে সঙ্গে দুটি টিকিট পাঠিয়ে দিয়েছিলেন হরভজন।হরভজন ভেবেছিলেন যে, গীতা তার কোনো বন্ধুকে নিয়ে আইপিএল দেখতে আসবেন। কিন্তু পরে তিনি জানতে পারেন যে, গীতা তার গাড়িচালকের জন্য টিকিট চেয়েছিলেন। ওই টিকিটে গাড়ির চালক তার এক আত্মীয়কে নিয়ে খেলা দেখে এসেছিলেন। তবে টিকিটের সূত্রে হরভজনের সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেন গীতা।এই বার্তালাপ শুধু ফোনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। গীতা ও হরভজন কফিশপেও দেখা করা শুরু করলেন। ধীরে ধীরে তাদের বন্ধুত্ব প্রেমে পরিণত হয়। ডেট করতেও শুরু করেছিলেন তারা। দুজনেই চেয়েছিলেন যে, তাদের সম্পর্ক সবার আড়ালে থাকুক। কিন্তু ক্যামেরার লেন্সকে ফাঁকি দেওয়া যায় না।এক পুরনো সাক্ষাৎকারে গীতা বলেছিলেন, আমার জীবনে একসময় এমন এসেছিল যে, তখন আমার কাজ নিয়ে আলোচনা হতো না। চর্চার বিষয় ছিল হরভজনের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। আমরা কোথায় দেখা করতে গিয়েছিলাম, আমরা কবে বিয়ে করব তা নিয়েই বেশি চর্চা হতো।হরভজনের সঙ্গে গীতার নাম জড়িয়ে যাওয়ায় ছবির নির্মাতারাও গীতাকে আর কাজ দিতে চাননি। তারা ভেবেছিলেন যে, ইন্ডাস্ট্রির নবাগত এই অভিনেত্রী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন মানে খুব তাড়াতাড়ি বিয়েও করে ফেলবেন। পরে আর অভিনয় করবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন ছবি নির্মাতারা।গীতা জানিয়েছেন যে, হরভজনের সঙ্গে সম্পর্কে আসার পর চারটি বড় ছবির কাজ হারিয়েছিলেন তিনি। তার পরও কয়েকটি হিন্দি ছবি এবং একটি মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেছিলেন গীতা। কিন্তু কোনোভাবেই আর ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা তৈরি করতে পারেননি গীতা।২০১৫ সালে হরভজনের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন গীতা। বিয়ের পর একটি হিন্দি এমনকি একটি পাঞ্জাবি ছবিতেও কাজ করেছিলেন তিনি। একটি ছবিও ব্যবসা করতে পারেনি। অবশেষে ফিল্মপাড়া থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন গীতা।বিয়ের পর সংসার নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন গীতা। বিয়ের এক বছরের মধ্যেই তার কোল আলো করে কন্যাসন্তান আসে। কন্যার জন্মের প্রায় পাঁচ বছর পর পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি।তবে শোনা যাচ্ছে, দীর্ঘ বিরতির পর আবার বড়পর্দায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গীতা। পবন ওয়াদেওয়ারের পরিচালনায় ‘নোটারি’ নামের ড্রামা ঘরানার ছবিতে দেখা যাবে গীতাকে। বাঙালি অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যাবে তাকে।