আদার দাম লাগামহীন, পেঁয়াজ সেঞ্চুরির পথে


দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে আদার দাম বেড়েই চলছে। জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করেও দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণা করার পর কোনো কারণ ছাড়াই আরও ঊর্ধ্বমুখী আদার দাম। শুক্রবার সকালে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হয় ৩০০ টাকার কাছাকাছি। যদিও এর আগে কিছুটা কমেছিল দাম। এদিকে পেঁয়াজের দামও কমার কোনো লক্ষণ নেই। পাইকারি বাজারে গত দুদিনে কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। পাইকারিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। যা খুচরা বাজারে ৮০-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সবজির দামও অন্যান্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বগতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, এ বাজারে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি আদার দাম বেড়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। সাধারণত এ সময়টিতে চীনা আদায় বাজার সয়লাব থাকে। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা চীন থেকে আদা আনতে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারেননি। ফলে পণ্যটির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। পরে ব্যবসায়ীরা বিকল্প বাজার হিসাবে মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে আদা আমদানি করে বাজার সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে। অভিযোগ রয়েছে, বাজারে আসতে আসতে পণ্যের দাম আমদানি মূল্যের দ্বিগুণ-তিনগুণ পর্যন্ত হয়ে যায়। ফলে আদার বাজারে অস্থিরতা কাটছে না। ভোক্তাদের অভিযোগ-প্রশাসনের সঠিক তদারকির অভাবে আদার বাজারকে স্থিতিশীল করা যাচ্ছে না। আমদানিকারকরা যে মূল্যে আদা আমদানি করেন তার চেয়ে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। আমদানিকারকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই বাজার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সামনে কুরবানির ঈদ। তখন আদার চাহিদা বেড়ে যায়। সেই চাহিদাকে পুঁজি করে কারসাজি করে আরও দাম বাড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। চাক্তাই খাতুনগঞ্জের আদার বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি কেজি ভিয়েতনামের আদা ২৬০ টাকা, মিয়ানমারের আদা ২৪০-২৫০ টাকা এবং থাইল্যান্ডের আদা ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এখন ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার আদা নেই। আগামী সপ্তাহের শুরুতে দেশ দুটি থেকে আদার বেশ কিছু চালান বাজারে আসবে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। চাহিদার মোট ৩ ভাগের ১ ভাগ আদা দেশে উৎপাদন হয়। বাকি দুই ভাগ আমদানি করে প্রয়োজন মেটাতে হয়। এটিও একটি বড় সমস্যা। আগে চীনা আদার বুকিং দর ছিল ৮০০-৯০০ ডলার। এখন সেটি হয়ে গেছে দুই হাজার ডলারের বেশি। আমদানি খরচই পড়ছে আগের চেয়ে বেশি। ফলে আদার দাম বাড়ছে। তাই ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে ভিয়েতনাম, মিয়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশ থেকে আমদানি করছেন। সেসব দেশেও বুকিং দর বেড়েছে। এছাড়া এলসি করার পরেও যথাসময়ে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। খাতুনগঞ্জের আদা ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, চীনা আদা আমদানি না হওয়ায় দাম বেড়েছে। আসলে অনেক ব্যবসায়ী ডলার সংকটসহ নানা কারণে এলসি করতে পারেননি। এ কারণে বাজারে হঠাৎ আদার সরবরাহ সংকট দেখা দেয়। তাই দাম বেড়ে যায়। তবে আগামী সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়া ও ভারতীয় আদা আসবে। আশা করি কুরবানির ঈদ আসার আগেই আদার বাজার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এদিকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে আগের মতোই পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। চট্টগ্রামের আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র পাননি। ফলে পেঁয়াজের বাজারের লাগাম টানা যাচ্ছে না। হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পাইকারি বাজারে ভালোমানের দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭২ টাকা। আর একটু নিম্নমানের দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। পাইকারি বাজারেও ৬৫ টাকার নিচে কোনো পেঁয়াজ নেই। খুচরা বাজারে ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। মান ও বাজারভেদে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মার্চ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে। পাশাপাশি স্থলবন্দর দিয়েও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। তাই এখন পুরোপুরি দেশি পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। চাহিদা মেটাতে পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর থেকে পেঁয়াজ আনা হচ্ছে। ফলে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, আদা ও পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল হতে সময় লাগবে। এসব পণ্যের ক্ষেত্রে আমরা বেশি আমদানিনির্ভর। আমদানিনির্ভরতার কারণে দাম ওঠানামা করছে। কারণ অনেক সময় পণ্যের বুকিং দর বেড়ে যায়। আবার আমদানির ক্ষেত্রে শতভাগ মার্জিন দিয়ে আমদানি করতে হচ্ছে। সবকিছু মিলে বাজারে আদার সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। আমদানি স্বাভাবিক হলে দামও স্বাভাবিক হয়ে আসবে। বাজারদর : চট্টগ্রামে প্রতিটি সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। মাছের বাজারেও মিলছে না স্বস্তি। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩শ, কাতলা ৩শ থেকে ৩২০, পাঙাশ ২২০, শিং ৫৫০, টেংরা ৪৫০, কই ২৫০ ও চিংড়ি ৬শ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। পাবদা ৪শ, টেংরা ৪৫০, শিং ও সমুদ্রের কোরাল ৫শ টাকা, কই ২৬০ এবং পাঙাশ ২২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর ব্রয়লার মুরগি ২১৫ থেকে ২২০, কক ৩৪০ ও পাকিস্তানি লেয়ার ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৮০ থেকে ৮শ এবং খাসি ১১শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার বেশি দরে। শুক্রবার প্রতি কেজি বেগুন ৬০, চিচিঙ্গা ৭০, টমেটো ৫০, বরবটি ৮০, পটোল ৮০, লতি ৫০, ধুন্দল ৯০, ঢেঁড়শ ১শ, করলা ১শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।