আনসার বিক্ষোভের নেপথ্যে কী?


নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণের পর থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে, বিভিন্ন মহল তাদের নানা দাবিদাওয়া নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং জাতীয় প্রেস ক্লাব এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে নতুন সরকারের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। সরকারের পক্ষ থেকে দেশের এ ক্রান্তিকালে সবাইকে ধৈর্য ধরার পাশাপাশি যারা দাবি জানাতে চান, তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত আবেদন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। অনেকে তা মেনেও নিয়েছেন। কিন্তু রোববার কতিপয় আনসার সদস্য সচিবালয় এলাকায় যে তাণ্ডব চালিয়েছে, তা কোনোভাবেই স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে না। দেশ যখন নজিরবিহীন বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যস্ত, তখন এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির চেষ্টা সন্দেহের উদ্রেক করে। আমরা মনে করি, সেদিন আনসার বাহিনীর সদস্যরা ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য বা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে সচিবালয় অবরুদ্ধ করেছিলেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তারা যে তাণ্ডব চালিয়েছেন, সেটা কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ হয়ে থাকলে তার উদ্ঘাটন জরুরি। এ ব্যাপারে সন্দেহের উদ্রেক হওয়ার কারণ হলো-দাবি আদায় হয় আলোচনার মধ্য দিয়ে; কিন্তু তারা সরকারের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বারবার আলোচনা করে সম্মত হয়ে ফিরে গেলেও পরক্ষণেই অবিলম্বে দাবি আদায়ের নামে সচিবালয় চত্বরে ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে সেদিন। বিভিন্ন ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, লাঠিসহ নানা অস্ত্র ছিল তাদের কাছে। এতে মনে হয়েছে, গণ্ডগোল সৃষ্টিই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। সরকারের পক্ষ থেকেই শুধু নয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের পক্ষ থেকেও আনসার সদস্যদের আশ্বস্ত করতে গেলে উলটো হামলা চালান তারা। আনসার সদস্যরা গুরুতর আহত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রকে। ভুলে গেলে চলবে না, সচিবালয় থেকে দেশের প্রশাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। দাবি আদায়ের জন্য সরকারের মূল মেকানিজমকে অচল করার চেষ্টা স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যে কোনো যৌক্তিক দাবি আদায়ের নির্দিষ্ট কিছু কৌশল থাকে, পর্যায়ক্রমিক ধাপ থাকে। অপরপক্ষকে যুক্তির মাধ্যমে দাবি আদায়ে রাজি করাই থাকে আন্দোলনকারীদের মূল লক্ষ্য। এর বদলে জিম্মি করে, সচিবালয় এলাকায় ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে হয় না। আমরা আশা করব, আনসারদের ব্যানারে আন্দোলনের নামে কারা সরকারকে সংকটে ফেলার ষড়যন্ত্র করেছিল, তা তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে। আটককৃতদের কাছ থেকে প্রকৃত তথ্য বের করতে হবে। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কোনো ষড়যন্ত্রকারী দেশবিরোধী অপচেষ্টায় লিপ্ত হওয়ার সাহস না পায়। এ সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা অনেক। রাষ্ট্র সংস্কারের যে লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, তা রাতারাতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, একথাও প্রত্যেক নাগরিককে মনে রাখতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেশকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবে, এটাই প্রত্যাশা।