ইংলিশ-বধের মঞ্চ তৈরি মিরপুরে
অনলাইন নিউজ ডেক্স
জশ বাটলার অফিসিয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে কঠিন উইকেটে খেলতে চান, যাতে করে ভারতে অনুষ্ঠেয় ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রাক-প্রস্তুতি হয়ে যায়। সেই তারাই আবার গতকাল উইকেটের চরিত্র বোঝার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন। ইংলিশ ক্রিকেটের টিম ডিরেক্টর রব কি বাংলাদেশি সাংবাদিকদের কাছ থেকেও উইকেটের টুকটাক খোঁজখবর নিলেন। এ থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার, আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে খুবই সিরিয়াস ইংলিশ শিবির। কারণ সিরিজটি জিততে পারলে উপমহাদেশের কন্ডিশনও জয় করা হবে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। অনুরূপ ভাবনা বাংলাদেশ দলেও, বিশ্বকাপের বছরটা জয়ে শুরু করা। তাতে করে বছরের শেষের সঙ্গে সাফল্যের সেতুবন্ধন করা হবে শুরুতেও। বিতর্ক চাপা দিতেও তো চাই একটি জয়।
বাংলাদেশ এক দিনের ক্রিকেটে অনেক বছর ধরেই ভালো খেলে। ২০২২ সালে দেশে-বিদেশে স্মরণীয় কিছু মুহূর্ত রয়েছে এই সংস্করণে। দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে তাদের মাঠে। দেশের মাটিতে ভারতকে হারিয়ে বছর শেষ করেছে। তিন-তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ জয় বাংলাদেশকে শক্ত ভিত দিয়েছে র্যাঙ্কিংয়ে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বক্রিকেটের পরাশক্তিদের কাছে একটা বার্তা পৌঁছে গেছে, এক দিনের ক্রিকেটে বড় দল বাংলাদেশ। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংলিশরাও তাই সমীহের চোখেই দেখছেন টাইগারদের। জশ বাটলার, মঈন আলিরাও উচ্চাশার লাগাম একটু হলেও টেনে রেখেছেন। যদিও মঈন স্বাগতিকদের সিরিজে এগিয়ে রাখছেন না। তিনি মনে করেন, মিরপুরের স্পিনিং কন্ডিশনের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো যথেষ্ট স্পিনার রয়েছে তাঁদের দলে। তিনি নিজে স্পিনিং অলরাউন্ডার, আদিল রশিদ আর রেহান আহমেদের মতো দুজন লেগস্পিনার খেলাতে পারবেন কন্ডিশন পর্যবেক্ষণ শেষে। কে না জানে, লেগিদের বিপক্ষে বাংলাদেশি ব্যাটারদের চিরকালীন দুর্বলতার কথা। সফরকারীদের পেস বোলিং ইউনিট বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী। পাঁচজন ফাস্ট বোলার নিয়ে এসেছে তারা। বাংলাদেশকে এই বোলিং শক্তিতেই হারাতে চায় দলটি। স্বাগতিক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও ইংলিশ ফাস্ট বোলিং ইউনিটকেই হুমকি মনে করেন। ইংলিশদের সঙ্গে বাংলাদেশের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব ঘুচে গেছে বেশ আগেই। ২০১০ সালে ব্রিস্টলে মাশরাফি বিন মুর্তজারা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে উত্থানের গল্প লিখেছিলেন। এরপর ২০১১ ও ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে হারিয়ে ক্রিকেটের জনকদের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। যদিও ২০১৬ সালে দেশের মাটিতে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরে যায় বাংলাদেশ। জেতা হয়নি ২০১৯ সালের বিশ্বকাপেও। চার বছর পর আবার একদিনে ক্রিকেটে মুখোমুখি হচ্ছে এ দুই দল তিন ম্যাচের সিরিজ দিয়ে, যার দুটি মিরপুরে, অন্যটি চট্টগ্রামে। যেখানে উভয় শিবিরই জয়ের স্বপ্ন এঁকে রেখেছে নিজেদের মনন ও মগজে। এবারের সিরিজটি ব্যক্তিগত এবং দলীয় দুই দিক থেকেই স্বাগতিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ড্রেসিংরুমের গ্রুপিং, সাকিব-তামিমের বিবাদ সামনে চলে আসায় নিজেদের একাট্টা প্রমাণ করতেও জয় চাই। অধিনায়ক হিসেবে বাঁহাতি তামিমের চ্যালেঞ্জটা আরও বেশি। লিটন কুমার দাসের নেতৃত্বে ভারতের বিপক্ষে একদিনের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জেতার পর ইংলিশদের বিপক্ষেও জয় দেখতে চাইবে সবাই। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের জন্যও দ্বিপক্ষীয় সিরিজটি পরীক্ষার। যদিও এই সিরিজকে পর্যবেক্ষকের ভূমিকা নেওয়ার কথা বলে নিরাপদ একটা বলয় তৈরি করে রেখেছেন। কিন্তু জনতার চাওয়ার কাছে এই প্রতিরক্ষা বুহ্য কোনো সুরক্ষাই দিতে পারবে না। কারণ সমর্থকরা মাঠে আসবেন প্রিয় দলের জয় দেখতে, সাকিবের ৩০০ উইকেটের মাইলফলক অর্জনের সাক্ষী হতে। এই সিরিজে সাকিবের মতো মুশফিকুর রহিমও একটা মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে। ওয়ানডে ক্রিকেটে সাতহাজারি রান ক্লাবে পৌঁছাতে উইকেটরক্ষক এ ব্যাটারের আর ১৮৯ রান করতে হবে। অলরাউন্ডার সাকিব তিন ম্যাচে ১৬৫ রান করলেই পৌঁছে যাবেন সাতহাজারি ক্লাবে। সাকিব মুশফিক নিজেদের ব্যক্তিগত রেকর্ডগুলো অর্জন করতে পারলে বাংলাদেশের সিরিজ জয় লেখা হয়ে যেতে পারে এ দুই ক্রিকেটারের পারফরম্যান্সের ভেতর দিয়ে।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।