উইটকফ-পুতিন বৈঠক শান্তির ইঙ্গিত, নাকি নতুন কূটনৈতিক কৌশল?
অনলাইন নিউজ ডেক্স

যুদ্ধের বিভীষিকা যখন ইউক্রেনের জনগণকে ক্লান্ত করে তুলছে এবং পশ্চিমা রাজনীতিতে বিভাজন চরমে, ঠিক তখনই হঠাৎ করে নতুন মাত্রা পেল যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া কূটনৈতিক যোগাযোগ। শুক্রবার মস্কোয় প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে চতুর্থবারের মতো বৈঠকে বসলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ।তার এই সফরটি এমন এক সময়ে হলো, যখন ট্রাম্প একদিকে রুশ হামলার নিন্দা করছেন, আবার অন্যদিকে আশা দেখাচ্ছেন একটি ‘চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর’।কে এই স্টিভ উইটকফ?ট্রাম্পের বিশেষ দূত উইটকফ মূলত একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, যিনি নিউ ইয়র্কে দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্প পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তার কোনো কূটনৈতিক বা সামরিক অভিজ্ঞতা না থাকলেও, ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পের প্রতি তার আনুগত্য এবং অর্থনৈতিক দর-কষাকষির দক্ষতা তাকে এই অনানুষ্ঠানিক দূতের ভূমিকায় নিয়ে এসেছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের ‘ব্যক্তিনির্ভর কূটনীতি’র একটি প্রতীক হয়ে উঠেছেন উইটকফ।পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বৈঠক: সাদা টেবিলের বার্তাএদিকে ক্রেমলিনে উইটকফ-পুতিন বৈঠকে দুজনকে সাদা ওভাল টেবিলের বিপরীত পাশে বসার চিত্র মিডিয়ায় ছড়ানো হলেও, আলোচনার বিস্তারিত তথ্য গোপন রাখা হয়েছে।তবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন রুশ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ এবং বিনিয়োগ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ। তিনি আবার ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহলে বেশ পরিচিত মুখ।রয়টার্সের মতে, এই টেবিল শুধু বৈঠকের স্থান নয়, এটি ছিল প্রতীকী—যার একদিকে একজন অব্যবস্থাপনামূলক দূত, অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা একজন কৌশলী রাষ্ট্রনায়ক।একদিকে নিন্দা, অন্যদিকে সমঝোতার ইঙ্গিতউইটকফের আগমনের একদিন আগেই কিয়েভে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ১২ জন নিহত হন। যা নিয়ে ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় স্পষ্ট বার্তা দেন, ‘ভ্লাদিমির, থামো!’অথচ তার কিছুক্ষণ পরই তিনি শান্তি আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেন। এর ফলে মার্কিন প্রশাসনের ভেতরে ও বাইরের কূটনীতিকরা দ্বিধায় পড়েছেন—এটা কি সত্যিই শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ, নাকি ২০২৪ সালের মতো আরও এক ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যাকচ্যানেল’ কৌশল?রুশ দৃষ্টিকোণ ও বিশ্ব রাজনীতিতে প্রতিক্রিয়াএদিকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে অবশ্য উইটকফকে ‘অফিশিয়াল অথরাইজড রেপ্রেজেন্টেটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তবে তার সঙ্গে দিমিত্রিয়েভের হাঁটাচলা এবং আলোচনার সময় উপস্থিতি স্পষ্ট করে যে, মস্কো এই চ্যানেলকে গুরুত্ব দিচ্ছে।ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিক মহলে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে—এই উদ্যোগ কিয়েভকে বাদ দিয়ে কোনো ‘গ্রেট পাওয়ার চুক্তির’ সূচনা কি?স্টিভ উইটকফের মস্কো সফর ট্রাম্প প্রশাসনের ‘অন্যরকম কূটনীতি’র নিদর্শন। এটি কি সত্যিই শান্তির সূচনা, নাকি রাজনৈতিক কৌশলের অংশ, তা নির্ভর করছে পরবর্তী কয়েক দিনের ঘটনাপ্রবাহের ওপর।তবে এটুকু নিশ্চিত যে, এই মুহূর্তে হোয়াইট হাউস ও ক্রেমলিনের মধ্যে যে আলোচনা চলছে, তা যুদ্ধবিরতির চেয়ে অনেক বড় একটি ভূরাজনৈতিক মোড় নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করছে। সূত্র: রয়টার্স
