এবার ইউনিয়নে পাল্টাপাল্টি চূড়ান্ত আন্দোলনের ভিত গড়তে চায় বিএনপি


জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। গত জুলাই থেকে বিভিন্ন দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সরব বিএনপি। কিন্তু আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য ও সহিংসতা ঠেকাতে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগও। রাজধানী ও বিভাগের পর আজ থেকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি শুরু হচ্ছে তৃণমূলেও সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ সারাদেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। তৃণমূল পর্যায়ে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের এসব কর্মসূচিকে চূড়ান্ত আন্দোলন গড়ার ভিত্তি হিসেবে দেখছে দলটি। এজন্য নিজ নিজ এলাকা সফর করছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা ওয়ার্ড, গ্রাম আর ইউনিয়ন পর্যায়ে নেতাকর্মীকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। যে কোনো মূল্যে এ কর্মসূচি সফল করতে চান তাঁরা। দলের সর্বোচ্চ হাইকমান্ড থেকেও রয়েছে কঠোর নির্দেশ। আজ একযোগে ইউনিয়নের সব ওয়ার্ড থেকে মিছিল বের করে ইউনিয়ন সদরে একত্রিত হবেন সবাই। সেখান থেকে শুরু হয়ে ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত এই পদযাত্রার নির্দেশ রয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো দেশকেই মিছিলের দেশে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপি হাইকমান্ড। এতে দলীয় কর্মী আর সমর্থকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে সরকারবিরোধী এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনে এর প্রভাব বিস্তার করে, গণবিস্ম্ফোরণ সৃষ্টি করে। তবে এরই মধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়ন-গ্রামে নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির। যার ফলে অনেক নেতাকর্মী এখন এলাকাছাড়া। তবে এর প্রভাব কর্মসূচিতে তেমন পড়বে না বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জনগণ ভয়কে জয় করে ফেলেছে। এখন জনগণের ভয়ে ক্ষমতাসীনরা মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার, হত্যা এগুলো চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করছে। কিন্তু বিএনপি এ কর্মসূচি থেকে সরবে না। বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল, তেল, লবণ, আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য; সার, জ্বালানি তেলসহ কৃষিপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীর মুক্তি ও গণতন্ত্রবিরোধী সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি ছাড়া আরও ৫৪টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন পৃথকভাবে এ কর্মসূচি পালন করবে। নেতারা জানান, চলমান ধারাবাহিক আন্দোলনকে দ্রুত সময়ে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে। এর আগে জনইস্যুতে ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের সমর্থন আদায়ে কাজ করছেন। তাদের সম্পৃক্ত করে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করছেন। একদিকে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে ক্ষমতাসীন দল রোষানলে রয়েছে, অন্যদিকে লুটপাট আর টাকা পাচারের কারণে বিদেশি ঋণ বেড়ে গেছে, দুর্নীতির কারণে ব্যাংকিং খাত, দেশের আর্থিক খাতকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গেছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতও ধ্বংসের মুখোমুখি। এজন্য সব জিনিসের দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে। জনসম্পৃক্ত এ বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে তৃণমূল থেকে আন্দোলন সংগঠিত করতে চায় বিএনপি। মানুষকে এ বিষয়ে আরও সচেতন করে তুলতে চান তাঁরা। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, সামনে এই সংকট আরও বাড়বে। এ রকম একটি সময়ে সরকারি দলের অনেক সমর্থকও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবেন। আর যখন জনগণ নিজের ইচ্ছায়, প্রয়োজনে মাঠে নামার তাগিদ অনুভব করবেন, তখনই চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। এর আগে দলের নেতাকর্মীকে চাঙ্গা রাখতে ঘন ঘন কর্মসূচি দিয়ে ব্যস্ত রাখা হবে, সরকারের নির্যাতন এড়িয়ে বিভিন্ন কৌশলে মাঠে থাকার মনোবল ধরে রাখা হবে বলে দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান। স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, এই দেশটা শুধু বিএনপির নয়, সবার। তাই দেশের প্রয়োজনে, গণতন্ত্রের প্রয়োজনে, জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনে, লুটপাট আর দুর্নীতি বন্ধ করতে সবাইকে একযোগে মাঠে নামতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। তাহলেই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা পাবে। নেতারা অভিযোগ করে বলেন, তাঁদের কর্মসূচির পাল্টা ক্ষমতাসীন দলের কর্মসূচিতে প্রায় প্রত্যেক এলাকায় যেমন রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে, তেমনি চলছে গ্রেপ্তার অভিযান। এরই মধ্যে সারাদেশে তাঁদের দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই গ্রেপ্তার অভিযান ঢাকায়ও চলছে বলে তাঁদের অভিযোগ। অনেক এলাকাতেই নেতাকর্মী বাড়িছাড়া, ঘরছাড়া। তবে যতই নির্যাতন আসুক, সবকিছুকে মোকাবিলা করে কর্মসূচি বাস্তবায়নকে প্রাধান্য দিচ্ছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেসব এলাকা কর্মসূচি সফল করতে পারবে না, সেসব এলাকার কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশনাও রয়েছে দলের হাইকমান্ডের। বিএনপি নেতারা জানান, গত জুলাই মাস থেকে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে এবং সরকারি দলের হামলায় এ পর্যন্ত ১৭ জন নেতাকর্মী মারা গেছেন। এর মধ্যে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৯ হাজার ১১৩ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৫৪২টি মামলা দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২ হাজার ৬০৫ নেতাকর্মীকে। তারপরও দলের ঘোষিত যে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিজ নিজ এলাকার থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীর মনোবল বৃদ্ধিতে তাঁদের সঙ্গে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ পদযাত্রায় বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, গ্রাম, পাড়া-মহল্লা ইউনিটের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং সব শ্রেণি-পেশার জনগণকে স্বতঃস্ম্ফূর্তভাবে যোগ দিয়ে চলমান গণআন্দোলন আরও বেগবান করার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। অন্যান্য দল ও জোট: এদিকে, যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত সরকারের পদত্যাগ এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাসহ ১৪ দফা দাবিতে প্রতিবাদী পদযাত্রা করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। এ ছাড়া ১২ দলীয় জোটের নেতারা নিজ নিজ এলাকায় কর্মসূচি পালন করবেন। পাশাপাশি জোটের উদ্যোগে আগামীকাল বিকেল ৩টায় বিজয়নগর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিকেলে রাজধানীর ভাটারা থানাধীন বাঁশতলা ক্যামব্রিয়ান কলেজের সামনে থেকে পদযাত্রা বের করবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা। একই সঙ্গে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামী। শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ইসলামবিরোধী অধ্যায় প্রত্যাহার, বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য কমানো এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করবে দলটি।