গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করল কাতার


গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করল কাতার
গাজা উপত্যকায় চলমান গণহত্যা ও মানবিক বিপর্যয়ের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে কাতার। বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)-এ এক শুনানিতে কাতারের প্রতিনিধি বলেন, ইসরাইল ত্রাণকে একটি চাপ সৃষ্টির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে—যার মাধ্যমে তারা সামরিক উদ্দেশ্য অর্জন করতে চায়।২ মে (শুক্রবার) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আল জাজিরা।কাতারের পক্ষে আদালতে উপস্থাপন করেন নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত মুতলাক আল-কাহতানি। তিনি বলেন, ক্ষুধা ও অনাহার আবারও ইসরাইলের একটি সরকারি নীতি হয়ে উঠেছে।আইসিজে’র এই শুনানি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের এক প্রস্তাবের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে ইসরাইলের দখলদারিত্ব ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ওপর তার প্রভাব নিয়ে একটি পরামর্শমূলক মতামত চাওয়া হয়েছে।কাতার, হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তখন ১৩৭টি দেশের সঙ্গে একত্রে ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়।যদিও আদালতের মতামত বাধ্যতামূলক নয়, এটি বৈশ্বিক নীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে এবং ইসরাইলের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, বিশেষ করে তার দখলদারিত্ব ও ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান নিপীড়নের কারণে।আল-কাহতানি বলেন, ইসরাইল গাজার মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা বন্ধ করে একটি প্রজন্মকেই ধ্বংস করে দিচ্ছে। তারা জাতিসংঘসহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করছে—বিশেষত জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সহায়তাকারী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)।তিনি আরও বলেন, ইসরাইল বহুদিন ধরেই জাতিসংঘকে তার উপনিবেশবাদী প্রকল্পের পথে একটি বাধা হিসেবে দেখে এসেছে।গত অক্টোবরে ইসরাইলের সংসদ নেসেট দুটি বিল পাশ করে ইউএনআরডব্লিউএ বন্ধ করে দেয়, ফলে লক্ষাধিক ফিলিস্তিনির জন্য একটি জরুরি জীবনরেখা ছিন্ন হয়।আল-কাহতানি বলেন, একটি অবৈধ দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরাইলের কোনো অধিকার নেই ঠিক করার যে, কোন দেশ বা আন্তর্জাতিক সংস্থা গাজায় প্রবেশ করতে পারবে। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার শুধুমাত্র ফিলিস্তিনি জনগণের, তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের ভিত্তিতে।২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় গণহত্যা শুরু করার পর থেকেই ইসরাইল অঞ্চলটিকে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ করে রেখেছে। মাঝে মাঝে সীমিত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।গত ২ মার্চ ইসরাইল সমস্ত ক্রসিং সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়, এমনকি কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতির শর্তও লঙ্ঘন করে।১৮ মার্চ সেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফের গণহত্যা শুরু করে ইসরাইল।আল-কাহতানি বলেন, দুঃখজনকভাবে, ইসরাইল তার দখলদারিত্ব শেষ করেনি। বরং গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে তাদের গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে। এটি শুধু একটি আন্তর্জাতিক অপরাধ নয়, এটি সেই ‘অপরাধের অপরাধ’, যা মানবতার বিবেককে নাড়িয়ে দেয়।গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় ৬১ হাজার ৭০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা বহু মানুষের কারণে প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।জাতিসংঘ বুধবার জানিয়েছে, গাজা আবারও ক্ষুধা ও অপুষ্টির নতুন ঝুঁকিতে পড়েছে এবং সেখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।