গুম ঘরের ময়ূর সিংহাসন ও ইতিহাসের ভয়াবহতা


গুম ঘরের ময়ূর সিংহাসন ও ইতিহাসের ভয়াবহতা
সম্রাট শাহজাহানের রহস্যময় সিংহাসনের সংখ্যা ছিল ৭টি। তবে এদের মধ্যে ময়ূর সিংহাসনই ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও জঁমকালো। বিস্মিত হতে হয় এই ভেবে যে, সে’ সময়ে আগ্রার তাজমহলের চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ ব্যয়ে সম্রাট শাহজাহান নির্মাণ করেছিলেন এই অপূর্ব ময়ূর সিংহাসনটি। এটি ছিল স্বর্ণ, হীরা ও দুর্লভ মরকত মণি খচিত। ১৫৮৭ খ্রিস্টাব্দে স¤্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে পারস্যের মহামান্য সম্রাট আব্বাস তৎকালীন ১ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি হীরা বাদশাহ জাহাঙ্গীরকে উপহার দেন। সম্রাট শাহজাহান এই হীরাটিকেও ময়ূর সিংহাসনে সংযোগ করেছিলেন। ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে পারস্য সম্রাট (বর্তমান ইরান) দুর্ধষু নাদির শাহ দিল্লী আক্রমণ করেন এবং নগরীর প্রায় ৩০ হাজার মানুষকে হত্যা করে দিল্লীর মোগলদের সম্পদ ও ময়ূর সিংহাসনসহ সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যান। ময়ূর সিংহাসনের শেষ পরিণতি অত্যন্ত রহস্যময়। দিল্লীর বাদশাহ আওরঙ্গজেব ১৭০৭ সালে মৃত্যুমুখে পতিত হলে মোগলদের শক্তি হ্রাস পেতে থাকে। এমনি এক প্রেক্ষাপটে এই মহামূল্যবান ময়ূর সিংহাসনটি আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ১৭৩৯ খিস্টাব্দে পারস্য সম্রাট নাদির শাহ ভারতবর্ষ অভিযানকালে লুণ্ঠন করেন। দিল্লী থেকে ফিরে যাবার সময় তিনি বিখ্যাত কোহিনূর হীরাও লুণ্ঠন করেন। এর অবর্ণনীয় সৌন্দর্যে পাগলপারা হয়ে নাদির শাহ এটাকে নিয়ে যান নিজ দেশ পারস্যে। বংশ পরম্পরায় মহারাণী এলিজাবেথের মুকুটে শোভা পাচ্ছে। বর্তমানে এটি লন্ডনের টাওয়ারে রক্ষিত আছে। তবে ইংরেজ আমলে মাঝে মাঝে গুজব উঠতো ময়ূর সিংহাসন টিকে আছে। লর্ড কার্জনের সময় প্রবল গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়, ইরানের শাহের খাজাঞ্চি খানায় ময়ূর সিংহাসন আজো অক্ষত অবস্থায় আছে। ইংরেজ শাসকদের তখন পৃথিবীতে দোর্দন্ড প্রতাপ। তারা খোঁজ লাগালো। কিন্তু খুঁজে পাওয়া গেলো না ময়ূর সিংহাসন। শেষে লর্ড কার্জন নিজে জানালেন, না’ এটি নেই। তবে গবেষকরা মনে করেন ময়ূর সিংহাসনের কোনো টুকরা থাকলে থাকতেও পারে। ময়ূর সিংহাসন এখন আর নেই। তবে তার স্মৃতি এখনো বহাল। কবিতা, মহাকাব্য, গল্প, উপকথা ও গানে এখনো ময়ূর সিংহাসন একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। এখনো রাজকীয়, জমকালো কোনো আসন কিংবা বড় মূল্যবান পদ বোঝাতে আমরা ময়ূর সিংহাসন বলে থাকি। আসুন গুম ঘরের ময়ূর সিংহাসন থেকে আমরা সবাই শিক্ষা নিই।