জিএসপির শর্ত শিথিল করার অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ
অনলাইন নিউজ ডেক্স
আগামী ২০২৪ সাল থেকে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপির নতুন নিয়মকানুন কার্যকর করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। প্রস্তাবিত নতুন জিএসপি রেগুলেশন অনুসারে বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে থাকছে কঠিন কিছু শর্ত। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হবে বাংলাদেশ। তখন রুলস অব অরিজিনের শর্ত কঠিন হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন নতুন নিয়ম আরোপের ফলে দেশের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এমন পরিস্থিতিতে জিএসপির জন্য প্রস্তাবিত বিভিন্ন শর্ত শিথিলের অনুরোধ জানাতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন-সংক্রান্ত স্টিয়ারিং কমিটির সভাপতি মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে ইউরোপে অবস্থান করছে। গত শনিবার রাতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া প্রতিনিধি দলটিতে আরও রয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান, ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে গঠিত সংস্থা বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন নিহাদ কবির এবং বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল ফারুখ আহমেদ।
প্রতিনিধি দলটি ইউরোপের বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্ক সফর শেষে আগামী ২ এপ্রিল ঢাকায় ফিরবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এর আগে এ সফর-সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপে স্বাক্ষর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ। এতে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতরা প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে ২৭ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত ইউরোপ সফরে করে নতুন জিএসপি নীতির শর্ত নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টের সঙ্গে আলোচনার জন্য অনুরোধ জানান।
এতে বলা হয়, ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশি পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছে। বর্তমানে বলবৎ জিএসপি রেগুলেশনের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী ১০ বছরের জন্য নতুন জিএসপি রেগুলেশন কার্যকর হবে। বর্তমানে জিএসপি রেগুলেশনটি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে পর্যালোচনাধীন রয়েছে। নতুন রেগুলেশনে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠিন শর্ত আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে ২০২৬ সালের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর রুল অব অরিজিনের শর্ত কঠিন করাসহ রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন সদরদপ্তর এবং সদস্য বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারক ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারে কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে শর্ত শিথিল রাখার বিষয়ে অনুরোধ জানাবে। প্রস্তাবিত জিএসপি রেগুলেশনটি বর্তমানে পার্লামেন্টে বিবেচনাধীন রয়েছে, তাই এখনই এ বিষয়ে শর্ত শিথিলের চেষ্টা করা উচিত বলেও উল্লেখ করা হয় এতে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির বছরে এ ধরনের আলোচনায় বাণিজ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার পথ প্রশস্ত হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
কী ধরনের শর্ত আরোপ হতে পারে– এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি নতুন জিএসপি নীতি কার্যকর হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কঠিন শর্তগুলো বাস্তবায়ন হবে ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর। সে ক্ষেত্রে ইইউ থেকে যেসব এলডিসি জিএসপি পায়, তার ৭ দশমিক ৪ শতাংশের বেশি হিস্যা হলে জিএসপি প্লাসের জন্য যোগ্য হবে না সংশ্লিষ্ট দেশ। বাংলাদেশের হিস্যা বর্তমানে প্রায় ২০ শতাংশ। এটি কার্যকর হলে বাংলাদেশের জন্য সমস্যা তৈরি হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, রুল অব অরিজিনের আওতায় বর্তমানে কাপড় আমদানি করে তৈরি পোশাক রপ্তানি করলেও শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ। কিন্তু ২০২৬ সালের পর এ ক্ষেত্রে কাপড় নিজ দেশে তৈরির পর তা দিয়ে উৎপাদিত পণ্যের ক্ষেত্রেই শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাজারটিতে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে ইবিএ সুবিধার (অস্ত্র ছাড়া সবকিছু) অধীনে জিএসপি সুবিধা পায় বাংলাদেশ। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশ হবে বাংলাদেশ। তার পর আরও তিন বছর ইইউর বাজারে জিএসপি বজায় থাকবে। এ সুবিধা আরও কয়েক বছর বাড়াতে কাজ করছে সরকার।
ডোনেট বাংলাদেশ সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।