‘দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবাইকে নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে’


দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রত্যেক নাগরিককে তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই মৌলিক কাঠামোর পরিবর্তন হবে এবং প্রত্যাশার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে। সেজন্য তরুণদের আরও বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। শনিবার ‘বিশ্ব শান্তি দিবস’ উপলক্ষে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সেন্টার ফর পিস স্টাডিজ আয়োজিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তরুণ সমাজের প্রত্যাশা ও ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা। আলোচনায় তরুণ-প্রবীণ প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ওপর জোর দেন। এ সময় তারা বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবাইকে সচেতন হতে হবে। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে তার দায়িত্ব পালন করতে পারলেই কাঠামোগত পরিবর্তন করা সম্ভব হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হান্নান চৌধুরী। তিনি বলেন, আমরা একটি বৈষম্যমূলক কাঠামোয় বসবাস করছি। এটি বৈশ্বিক এবং স্থানীয় প্রেক্ষিতে হয়ে আসছে। সেজন্য আমাদের শান্তি প্রতিষ্ঠায় মৌলিক কাঠামোগুলোর পরিবর্তন নিয়ে কথা বলতে হবে। উপাচার্য বলেন, আমরা বৈষম্যের দেয়াল তুলে রাখছি। এটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর পাশাপাশি সব ক্ষেত্রেই হয়েছে। তরুণরা সে বাঁধা ভেঙেছে। তরুণরা নতুন প্রত্যাশার বাংলাদেশ বিনির্মাণের সুযোগ তৈরি করেছেন এবং আমাদের এ সুযোগ কাজ লাগাতে হবে। সবার অংশগ্রহণে জুলাই বিপ্লব হয়েছে। এখন শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলেও জানান তিনি। মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের ওপর জোর দিয়ে সমতাভিত্তিক ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে অধ্যাপক ড. আবদুল হান্নান চৌধুরী বলেন, আমাদের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। সেজন্য কাঠামোগত বিদ্যমান বাঁধাগুলো দূর করার ওপর জোর দেন তিনি। আলোচনার শুরুতে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফিয়া জান্নাত অনন্যা বলেন, একটি নৈতিক সংকটের সময় আমাদের সবারই একসঙ্গে কাজ করা উচিত। কোনোভাবেই চুপ থাকা উচিত না বলেও জানান তিনি। দেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রত্যেক নাগরিককে তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই মৌলিক কাঠামোর পরিবর্তন হবে এবং প্রত্যাশার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে। সেজন্য তরুণদের আরও বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। একটি স্বপ্ন তৈরি হয়েছে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ তৈরি হয়েছে জানিয়ে এই শিক্ষার্থী আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও গবেষণার ওপর জোর দেন। এছাড়াও তিনি জাবি ও ঢাবিতে পিটিয়ে হত্যাকে অশিক্ষার্থীসূলভ আচরণ বলে অভিহিত করেন। এরপর আলোচনায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার বিলোপ হয়েছে এবং আমরা তাকে গণঅভ্যুত্থান বলছি৷ প্রত্যাশার বাংলাদেশ বিনির্মাণে তিনি ফ্যাসিস্টদের তৈরি আইন, বিচার ও প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কারে জোর দিয়ে তিনি বলেন, এখানে এখন ব্যক্তির পরিবর্তন হচ্ছে, ব্যবস্থার কোনো পরিবর্তন বা উন্নতি হয়নি। বক্তব্যে তিনি সামগ্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং সংস্কারের ওপর জোর দেন। আলোচনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী প্রাপ্তি তাপসী শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি সবার অংশগ্রহণ এবং সবার জন্য শান্তি নিশ্চিতের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ১৫ বছরের স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামোর কারণে এখনও নিবর্তনমূলক আইনগুলো থেকে গেছে। এ সব আইন বাতিল হবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা দরকার জানিয়ে প্রাপ্তি তাপসী বলেন, আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা, আইনি কাঠামো এবং সাংবিধানিক সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির (ইডব্লিউইউ) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ আদনান বলেন, সবাই নির্বাচন এবং ক্ষমতার নানা পরিবর্তনের কথা বলছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যখাতের পরিবর্তন নিয়ে কেউ কথা বলছে না, এটি বন্ধ করা উচিত। আলোচনায় আসিফ আদনান মানবাধিকার, আইন বিচার এবং মৌলিক অধিকারের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, মৌলিক পরিবর্তনের জন্য আমাদের নিজেদেরকে পরিবর্তন করতে হবে। তাহলে বাংলাদেশকে পরিবর্তন করতে পারবো। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র লেকচারার পারিসা শাকুর। আলোচনা শেষে র‌্যালি এবং বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করা হয়। তরুণদের উপস্থাপনা শেষে প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য তুলে ধরেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) পলিটিক্যাল সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক ড. জসিম উদ্দিন। আলোচনায় তিনি বলেন, রাজনৈতিক মৌলিক পরিবর্তনের জন্য তরুণদের করণীয় বিষয়গুলো স্ব-বিস্তারে তুলে ধরেন। এ ছাড়াও প্রত্যাশার বাংলাদেশ বিনির্মাণে করণীয় বিষয়েও আলোকপাত করেন।