পরবর্তী বৈঠক ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল’: তেহরান


পরবর্তী বৈঠক ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের ওপর নির্ভরশীল’: তেহরান
রোমে শনিবার অনুষ্ঠিতব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার চতুর্থ দফার পারমাণবিক আলোচনা স্থগিত করা হয়েছে। ইরানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আলোচনা কবে অনুষ্ঠিত হবে, তা নির্ভর করবে ওয়াশিংটনের আচরণের ওপর।শুক্রবার (২ মে) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য টাইমস অব ইসরাইল।এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের হুথিদের প্রতি তেহরানের সমর্থনের কারণে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নতুন করে ইরানের তেল খাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এ নিয়ে ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বিচ্ছিন্ন বক্তব্য ও উসকানিমূলক আচরণ’ করার অভিযোগ তোলে।ইরানি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘আলোচনার মধ্যে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা কূটনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধানে কোনো সহায়তা করছে না। যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে আলোচনা কখন হবে, তা ঘোষণা করা হবে।’আলোচনার মধ্যস্থতাকারী ওমান জানিয়েছে, মে মাসের ৩ তারিখে নির্ধারিত চতুর্থ দফার বৈঠকটি ‘লজিস্টিক কারণে’ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, শিগগিরই আরেক দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এই সপ্তাহান্তের বৈঠকটি কখনো চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত ছিল না।’এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ‘এক্স’-এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘ওমান ও মার্কিন মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনার পর আমরা যৌথভাবে চতুর্থ দফার আলোচনা পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, লজিস্টিক ও কারিগরি কারণে।’তিনি আরও বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাতে আমাদের অঙ্গীকারে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং এখন আমরা আগের চেয়ে আরও বেশি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি ন্যায়সংগত ও ভারসাম্যপূর্ণ সমঝোতার দিকে—যার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার নিশ্চিত হবে এবং পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ থাকবে, সেইসঙ্গে ইরানের অধিকার পুরোপুরি রক্ষা পাবে।’ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাঈল বাকাইও বলেছেন, তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা চালিয়ে যাবে এবং এতে তারা ‘‘গম্ভীর ও কঠোর প্রতিশ্রুতি’’ নিয়ে অংশ নেবে।এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি বলেছেন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে ইরানে সামরিক হামলার পথ খোলা থাকবে, তিনি নতুন একটি চুক্তি নিয়ে আশাবাদী। এই চুক্তির লক্ষ্য হবে, তেহরানের পারমাণবিক বোমা অর্জনের পথ বন্ধ করা।২০১৮ সালে তার প্রথম মেয়াদে তিনি ইরানের সঙ্গে করা ২০১৫ সালের বহুপক্ষীয় পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান এবং ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতির আওতায় তেহরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করেন।এর মধ্যে, ইরান ও ইউরোপের তিন দেশ—ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি—রোমে শুক্রবার একটি আলাদা বৈঠকে বসার কথা ছিল, যাতে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের পথ খোঁজা হতো। তবে ইরানি কর্মকর্তারা বৃহস্পতিবার বলেছেন, ওই বৈঠক এখন আর ‘নিশ্চিত নয়।’বুধবার, যুক্তরাষ্ট্র এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাদের তারা ইরানি তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের ‘অবৈধ বাণিজ্যে’ জড়িত বলে দাবি করেছে।এছাড়া, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইয়েমেনের হুথিদের প্রতি সমর্থনের কারণে ইরানকে এর মূল্য চুকাতে হবে। হুথিরা সম্প্রতি লোহিত সাগরে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ‘ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি’ প্রকাশ করে একাধিক জাহাজে হামলা চালিয়েছে।যুক্তরাষ্ট্র মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে হুথিদের লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালাচ্ছে এবং এক হাজারের বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। তবে তেহরান বলছে, হুথিরা স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং তাদের স্লোগান—‘আমেরিকার মৃত্যু, ইসরাইলের মৃত্যু এবং ইহুদিদের ওপর অভিশাপ’—সম্পূর্ণ তাদের নিজস্ব।