পিয়াজের বাম্পার ফলনে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষকের মুখে হাসি


চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। উপজেলার পতিত ও অনাবাদি জমিসহ অন্যান্য ফসলের জমিতে চাষ করা হয়েছে এই পেঁয়াজ। বেশ কিছু দিন থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহের কাজ চলছে। বাজারে বেশি দাম পাওয়ার বেশ খুশি কৃষক। পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে এই এলাকার কৃষকদের মধ্যে। প্রথমবারের মতো এবার কৃষকরা ভারতীয় রেড এন ৫৩ জাতীয় পেঁয়াজ প্রণোদনা সহায়তা হিসেবে চাষ করেছে। জমিতে বিঘা প্রতি ৮০ থেকে ১০০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে বলে জানান। প্রথমবার এই চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তাঁরা। এছাড়া পেঁয়াজের চাহিদা বেশি থাকায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের উৎসাহিত ও সহযোগীতা করে যাচ্ছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খরিপ মৌসুমে এ পেঁয়াজ চাষে সরকারি ভাবে প্রণোদনার পাশাপাশি আধুনিক চাষের প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী এবং মাঠ দিবসের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এই উপজেলায় প্রথম,দ্বিতীয়,তৃতীয় পর্যায়ে কৃষক মধ্যে বিনামূল্যে প্রণোদনার এই পেঁয়াজের বীজ, উপকরণসহ ২৮০০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। কৃষকরা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এখন পেঁয়াজ উঠানোর কার্যক্রম চলছে। অনেকে উঠানোর পর বিক্রি করে দিয়েছে। দাম বেশি পাওয়ায় অনেকটা খুশি তাঁরা। গোমস্তাপুর ইউনিয়নের দোষিমনি কাঁঠাল গ্রামের কৃষক সোহান আলী বলেন, তিনি এক বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগ প্রথমে প্রশিক্ষণ দিয়ে বীজ, সার ও চাষাবাদের বিভিন্ন উপকরণ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২ হাজার ৮০০ টাকা পেয়েছেন। তাঁর এই জমিতে ৭০ থেকে ৮০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হবে বলে তিনি ধারণা করছেন। প্রথমবার, গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ চাষ করতে এসে হতাশার মধ্যে ছিলেন তিনি। তবে ১৫ দিন পর পর ছত্রানাশক স্প্রে করতে হয়েছে। তবে তিনি নিরাশা হননি ভাল হয়েছে তাঁর পেঁয়াজের উৎপাদন। পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত জমিতে এই চাষ করবেন বলে তিনি জানান। হোগলা গ্রামের আরেক কৃষক সাদিকুল ইসলাম বলেন, বছরে বিঘায় ১১ হাজার করে অন্যের জমি জমি বর্গা নিয়েছেন তিনি। এই জমি বেশিরভাগ সময় অনাবাদি ও পতিত হয়ে পড়ে থাকত। তিনি ওই জমি কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় লালশাক, ঢেঁড়স, বেগুন, পেঁপে,চিচিঙ্গা, শশা করলা, পুঁইশাক, ডাটা শাক করেছেন। এছাড়া প্রণোদনার এই গ্রীষ্মকালীন এন ৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তিনি প্রথমে ধারণা করেছিলেন দেশি পেঁয়াজমত হবে কিনা! দ্বিধার মধ্যে ছিলেন। তবে কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ভাল হয়েছে। গোমস্তাপুর ব্লকের উপ কৃষি কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, অনাবাদিত ও পতিত জমি পড়ে আছে,যারা পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী ওইসব কৃষককে উৎসাহী করা হয়। তাঁদেরকে প্রথমে প্রশিক্ষন দেওয়া হয়। পরে বীজ, সার, দড়ি, পলিথিনসহ বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হয়েছে। বীজ বপণের পর থেকে তাঁদেরকে সব ধরণের সহযোগিতা করে এসেছি। পেঁয়াজের ফলন ভাল হচ্ছে। কোন কোন জমিতে বিঘায় একশ মণের ওপরে উৎপাদন হচ্ছে বলে তিনি জানান। গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, পেঁয়াজ সাধারণ ঠান্ডা মৌসুমে বেশি চাষাবাদ হয়ে থাকত। বর্তমানে গ্রীষ্মকালীন সময়ে এই ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। অন্যান্য সবজি জাতীয় ফসলের ফাঁকে ফাঁকে এই ফসল চাষাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া পতিত ও অনাবাদি জমিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বীজসহ চাষবাদের জন্য বিভিন্ন ধরণের উপকরণ এবং ২ হাজার ৮০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কৃষকরা নিজের চাহিদা মিটিয়ে সারা বছর পেঁয়াজ চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ এই অঞ্চলে বৃদ্ধি হলে বাজার অস্থিরতা কমে যাবে। তিনি জানান, চলতি মৌসুমে ৮০০ জন কৃষককে পেঁয়াজের এই প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। মৌসুম শেষে পেঁয়াজের সরবরাহ মেটাতে গ্রীষ্মকালীন চাষ প্রসারে সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। এই উপজেলার কৃষকরা চাষবাদ করে উৎপাদন বাড়াতে সক্ষম হয়েছে।