বিদেশি বিনিয়োগেই হবে বে-টার্মিনাল নির্মাণ


চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় প্রকল্প বে-টার্মিনাল। এর চারটি টার্মিনালই বিদেশি বিনিয়োগে নির্মিত হবে। শুধু এই একটি প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে ১০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে মাল্টিপারপাস টার্মিনালের নির্মাণকাজ চলতি বছরের শেষ নাগাদ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অপর তিন টার্মিনালের নির্মাণকাজও শুরু হবে। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে সময় লাগতে পারে ৪-৫ বছর। ১৩৭তম চট্টগ্রাম বন্দর দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল। চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মোহাম্মদ ফজলুর রহমান মুন্সি মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম বন্দরের বোর্ড সদস্য ও বিভাগীয় প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। বে-টার্মিনাল প্রসঙ্গে রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহায়েল বলেন, ইতোমধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন ৬৬ দশমিক ৮৫ একর জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া নিষ্কণ্টক ৫০০ একর খাসজমি প্রতীকী মূল্যে বন্দোবস্ত দেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভূমি মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় কর্তৃক গেজেটেড ২৬৭ একর সংরক্ষিত বনভূমি গেজেট থেকে অবমুক্ত করার কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্প এলাকায় মামলাভুক্ত ১১৮ একর জমির অধিগ্রহণ প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠানো হয়েছে। বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বে-টার্মিনালের মাল্টিপারপাস টার্মিনালের নির্মাণকাজ চলতি বছরের শেষ নাগাদ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই টার্মিনাল নির্মাণের জন্য আবুধাবি পোর্ট গ্র“প (এডি পোর্টস) ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব দাখিল করেছে। কনটেইনার টার্মিনাল-১ ও ২ নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য যথাক্রমে পিএসএ সিঙ্গাপুর এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চলতি বছরে চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে বলে আশা করছি। চতুর্থ টার্মিনালটি হবে গ্যাস ও অয়েল টার্মিনাল। ইতোমধ্যে এটি নির্মাণের জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ ব্যক্ত করে ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, বে-টার্মিনালের মাস্টারপ্ল্যান হয়ে গেছে। ১২-১৪ মিটার ড্রাফটের চ্যানেল হবে। সব নকশা চূড়ান্ত হয়ে গেছে। বে-টার্মিনালে বন্দর সরাসরি কোনো অর্থ বিনিয়োগ করবে না। পুরোটাই হবে বিদেশি বিনিয়োগে। এখানে ৯ থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে সত্যিকার বন্দর নগরীর রূপ দেখা যাবে ৪-৫ বছর পর। তখন চট্টগ্রাম বন্দর হবে হাব পোর্ট। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে বিদেশি অপারেটর নিয়োগ দিতে সক্ষম হয়েছেন উল্লেখ করে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, এতে বন্দর তথা রাষ্ট্র উপকৃত হবে। বৈদেশিক আয় বাড়বে। জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এক-দেড় বছরের মধ্যে সব ইকুইপমেন্ট চলে আসবে। গতানুগতিক সিস্টেম থেকে বেরিয়ে ল্যান্ডলর্ড সিস্টেমে বন্দর পরিচালনা শুরু করেছি। তিনি বলেন, কোভিড অতিমারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা বিশ্ব অর্থনীতির প্রত্যাশিত গতি মন্থর করলেও চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে তেমন প্রভাব পড়েনি। কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে। রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধিও অব্যাহত আছে। সর্বোচ্চ ২ দিনে জাহাজ লোড-আনলোড শেষ করে পরবর্তী গন্তব্যে ছেড়ে দিচ্ছি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কনটেইনার হ্যান্ডলিং আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এবার ৩২ লাখ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হবে। অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে জেনারেল কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৯ কোটি ১৬ লাখ ৪৯ হাজার টন। এ সময় জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ হাজার ১টি। বিগত বছরে ৪৩ হাজার বর্গমিটার কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহায়েল বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর তিন-চার বছরের মধ্যে নিজস্ব টার্মিনালে অপারেশন শুরু করবে। মাতারবাড়ীতে দ্বিতীয় ধাপে ৭০০ একর জমি অধিগ্রহণের জরিপ কাজ চলছে।