বিদেশ থেকে মানুষ বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে আসবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী


স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিটি জেলা পর্যায়ে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় ও পরামর্শে স্বাস্থ্য বিভাগকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে যাচ্ছি, যেন বাংলাদেশের একটি মানুষও বিদেশে চিকিৎসা নিতে না যায়। আমরা সেদিনের আশা করবো, যেদিন বিদেশ ও আশেপাশের দেশ থেকে মানুষ চিকিৎসা নিতে বাংলাদেশে আসবে। আমাদের চিকিৎসক ও সেবিকারা প্রধানমন্ত্রীর সেই আশা পূরণ করতে পারবেন। আজ শুক্রবার দুপুরে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মিলনায়তনে হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মেডিকেল হাসপাতালগুলোতে যে পরিমাণ শয্যা রয়েছে তার চেয়ে অধিক রোগী ভর্তি থাকছে। আমাদের হাসপাতালগুলো এক হাজার শয্যার উন্নীত করবো। নার্সের সংখ্যা ঠিক থাকলেও ৩০-৪০ শতাংশ চিকিৎসক কম রয়েছেন। করোনার মধ্যে নার্স ও চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মেশিন নষ্ট রয়েছে। এসব মেশিন যাতে মেরামত করে মানুষের সেবায় দেওয়া হয়, সেই ব্যবস্থা করা হবে। যেসব মেশিন মেরামত করা যাবে না সেখানে নতুন মেশিন দেওয়া হবে। তিনি বলেন, তদারকির কারণে এই হাসপাতালের অবস্থা অন্যান্য হাসপাতালের তুলনায় ভালো রয়েছে। রোগীরা সন্তুষ্ট। তারা খাবার পাচ্ছেন, ওষুধ পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় ও পরামর্শে স্বাস্থ্য বিভাগকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে যাচ্ছি। করোনা নিয়ন্ত্রণে টিকা কর্মসূচিতে আমরা প্রমাণ করেছি, বিশ্ববাসী যেটি পারেনি; ভারত, ইউরোপ, আমেরিকা পারেনি; কিন্তু বাংলাদেশ পেরেছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ রোল মডেল। তিনি আরও বলেন, ভারতে ৫ লাখ, আমেরিকায় ১০ লাখ মানুষ মারা গেছে। বাংলাদেশের এত ঘনবসতিতেও ২৯ হাজার মানুষ মারা গেছে। তুলনামূলকভাবে মৃত্যহার অনেক কম। বাংলাদেশে টিকা গ্রহণকারীর হার ৯০ শতাংশ। আর আমেরিকায় টিকা গ্রহণকারীর হার ৫০ শতাংশ। এদিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে। জাহিদ মালেক বলেন, বাংলাদেশের একটি মানুষও যেন বিদেশে চিকিৎসা নিতে না যায়। আমরা সেদিনের আশা করবো, যেদিন বিদেশ ও আশেপাশের দেশ থেকে মানুষ চিকিৎসা নিতে বাংলাদেশে আসবেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই আশা পূরণ করতে পারবেন আমাদের চিকিৎসক ও নার্সরা। চিকিৎসক ও নার্সদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কর্মস্থলে যাতে উপস্থিতি ভালো থাকে। উপস্থিতি ভালো থাকলে সেবা ভালো হয়, হাসপাতালগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকে এবং সবকিছুই ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসার যন্ত্রপাতি যাতে করে ঠিক থাকে, মেরামত হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। রোগীর সঙ্গে স্বজনরা থাকবেন না। স্বজন থাকলে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হয়। রোগীর সঙ্গে যারা থাকে তারা রোগীর সেবা দেবে না, সেবা দেবেন নার্সরা। চিকিৎসকরা সেবা প্রদান করবেন। এই কালচার পরিবর্তন করতে হবে। রোগীকে চিকিৎসক ও নার্সরা সেবা প্রদান করবেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার মানুষকে সেবা দিয়েই মন জয় করতে চায়। বাংলাদেশে আগে এত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ছিল না। মাত্র ৮টা মেডিকেল কলেজ ছিল। এখন সরকারিভাবেই মেডিকেল কলেজ রয়েছে ৩৭টি। আর বেসরকারিভাবে ৭০টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে, অনেক ইনস্টিটিউট হয়েছে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে। এছাড়া প্রতিটি জেলা পর্যায়ে মেডিকেল কলেজের পরিকল্পনা রয়েছে। অনেক জেলায় মেডিকেল কলেজ হয়েছে, বাকি জেলায় কাজ চলছে। দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে ৫টি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ চলছে। আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই সরকার আমাদের স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে, বিদ্যুৎ দিচ্ছে, খাবারের ব্যবস্থা করছে, রাস্তাঘাট দিচ্ছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকতে হবে, ইকবালুর রহিমের সঙ্গে থাকবেন। সামনে নির্বাচন আছে, আপনারা সকলে তার জন্য কাজ করবেন এবং তাকে জয়যুক্ত করবেন। শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষামতায় এনে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. টিটো মিঞা, পরিচালক (এডমিন) অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম প্রমুখ সভায় বক্তব্য রাখেন। এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন।