রাজধানীতে স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৫


রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নির্মাণাধীন স্কুল ভবনের রড চুরির অভিযোগে বৃহস্পতিবার আকাশ (১৪) নামে এক স্কুলছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। শুক্রবার এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূলহোতাসহ তিন আসামিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে র‍্যাব-২ গ্রেফতার করে। র‍্যাবের পাশাপাশি ঘটনার সাথে জড়িত আরও দুই আসামীকে সিরাজগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন- মোয়াজ্জেম হোসেন, জহুরুল ইসলাম বাবু (২১) ও আব্দুল বারেকসহ (২৩) মোট পাঁচজন। জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টায় মোহাম্মদপুরের আজিজ মহল্লায় বরাবো মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতর চোর সন্দেহে নিহত ওই স্কুলছাত্রকে আটক করে মারধর করে নির্মাণ শ্রমিকরা। পরে ফুফু তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এ ঘটনায় নিহতের ফুফু মালতী বেগম বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে। তেজগাঁও বিভাগ মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মৃত্যুঞ্জয় দে সজল জানান, ঘটনার পর নির্মাণ শ্রমিকরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মৃতের ফুফু মালতী বেগম মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এছাড়াও, ঘটনার পর থেকে আমরা প্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে তাদেরকে সিরাজগঞ্জ সদর ও মোহাম্মদপুরের আশপাশ এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে নির্মাণাধীন ভবনের সামনে কিশোর ও তার বন্ধুরা মিলে সিগারেট খেতে আসে। এ সময় শ্রমিকরা চোর বলে ধাওয়া করলে সাথে থাকা বন্ধুরা পালিয়ে গেলেও নিহত কিশোরকে আটক করে স্কুলের ভেতর নিয়ে যায়। সেখানে কনট্রাক্টরের উপস্থিতিতে শ্রমিকরা রাতভর রড দিয়ে পিটিয়ে মারধর করে। এক পর্যায়ে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরলে পরিবারের নাম্বার নিয়ে ফুফুকে ফোন দিয়ে বাসায় নিয়ে যেতে বলে। স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করে বলেন, স্কুলের ভেতর কাজ করা শ্রমিকরা মাদক সেবন করে। তারা মাদকাসক্ত অবস্থায় এর আগেও এলাকার বেশ কয়েকজনকে চোর বলে ধাওয়া করেছিলেন। পরে তাদের কনট্রাক্টরকে এ বিষয়ে বললেও তিনি কোনো কর্ণপাত না করে উল্টা এলাকার মানুষকে ধমক দিতেন। মৃতের ফুফু মালতী বেগম জানান, বুধবার রাতে আকাশ বাসায় ফেরেনি। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে একটা নাম্বার থেকে আমাকে ফোন করে জানায়- চুরির সময় আপনার ছেলেকে আমরা আটক করে বেঁধে রেখেছি। একটা রিকশা নিয়ে এসে চুপচাপ স্কুলের ভেতর থেকে তাকে বাসা নিয়ে যান। এ বিষয়ে কেউ জানলে আপনাদের খবর আছে। পরে স্কুলের সামনে থেকে তাকে অসুস্থ অবস্থায় বাসায় নিয়ে গোসল করালে সে আরও অসুস্থ হয়ে পরে। এ সময় আমার ভাতিজা পানি খেতে চাইলে তাকে পানি খাওয়ালে কিছুক্ষণ পরই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে। মৃতের বোন জামাই লিখন মিয়া জানান, বুধবার রাতে বন্ধুদের সাথে বাসা থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেনি। আমরা ভাবছি হয়তো বন্ধুর বাসায় আছে সকাল হলে চলে আসবে। কিন্তু, ভোরের দিকে আমার ফুফু শাশুড়িকে একটা নম্বর থেকে ফোন করে বলে, কাউকে কিছু না জানিয়ে চুপচাপ এসে আমার শালাকে নিয়ে যেতে। আমার শালা তখন প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে কাতরাচ্ছিল। বাসায় নিয়ে দেখি তার শরীরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়ে আছে। তাকে গোসল করানোর পর পানি খেতে চায়। পানি খাওয়ানোর কিছুক্ষণ পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে।