রেকর্ড গড়া ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত


বেরসিক বৃষ্টিতে খেলা পণ্ড না হলে তামিম ইকবালের ৩৫তম জন্মদিনে আকর্ষণীয় উপহার হতে পারত সিরিজ জয়। সেটা না হলেও টুকটাক উপহার পেয়ে গেছেন অধিনায়ক। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ১৫ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁলেন এ ম্যাচ দিয়ে। মুশফিকুর রহিমের দ্রুততম সেঞ্চুরিতে এক দিনের ম্যাচে ৩৪৯ রান করার রেকর্ডও তো অধিনায়কের জন্য একটি উপহার। বৃষ্টি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় বিলম্বিত করলেও খেরোখাতায় প্রাপ্তি যোগ থাকল অনেক। বৃষ্টি ম্যাচ ভাসিয়ে নিয়ে গেলেও রেকর্ডগুলো মুছে দিতে পারেনি। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো ঢুকে গেছে রেকর্ড সংরক্ষণ বইয়ে। সিলেটে বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল আগে থেকেই। রোববারের পূর্বাভাস পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী ম্যাচ শুরু করাই ছিল শঙ্কায়। কিন্তু ওই যে ‘থ্রি ডব্লিউ’ তত্ত্বে ‘ওয়েদার’ বা আবহাওয়াকে অবিশ্বাসের তকমা দিয়ে রেখেছেন রসিকজন। সিলেটের আবহাওয়ায় গতকাল অবিশ্বাসী তত্ত্বকেই সত্য প্রমাণ করল দু’ভাবে। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ মাঠে গড়াল ঝরঝরে দুপুরে। ভেজা আউটফিল্ডকে পাত্তা না দিয়ে টপঅর্ডার আর মিডলঅর্ডার ব্যাটারদের নান্দনিক ব্যাটিংয়ে রানের পর রান সাজিয়ে ইনিংস শেষ করে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো এক দিনের ম্যাচে সাড়ে তিনশ (৩৪৯) রান উপহার দেন মুশফিকরা। দু’দিন আগেই এই আইরিশদের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড গড়েছিলেন ৩৩৮ রান করে। পরের ম্যাচেই নতুন করে লেখা হলো দলীয় সে কীর্তি। এককথায় রেকর্ড গড়া এই ইনিংসে ব্যক্তিগত মাইলফলকেও ছড়াছড়ি। মুশফিক একাই দু-দুটি মাইলফলক পেয়েছেন। এক দিনের ক্রিকেটে ৭ হাজারি ক্লাবের সদস্য হন অর্ধশতক ছাড়িয়ে। ৬ হাজার ৯৪৫ রান নিয়ে গতকাল খেলতে নেমেছিলেন মুশফিক। ৫৫ রান হতেই তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের পর ৭ হাজারি ক্লাবে ঢোকেন উইকেটরক্ষক এ ব্যাটার। পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসকে শতকে নিয়ে অপরাজিতও থাকেন তিনি। ৬০ বলে ১০০ রান করে দেশের দ্রুততম শতকের মালিক হন। ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬৩ বলে শতক করেছিলেন সাকিব। বিকেএসপি ও জাতীয় দলের অনুজের কাছ থেকে রেকর্ডটি ছিনিয়ে নেন মুশফিক। চোটের কারণে ভারতের বিপক্ষে সিরিজে না খেলা ওপেনার তামিম ফিরেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে। থিতু হয়েও ইংলিশদের বিপক্ষে আউট হয়েছেন তিন ম্যাচেই। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও আউট হয়ে গেছেন শুরুতে। চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে নিয়ে রোববার একান্ত অনুশীলন করে রানের খোঁজে নেমেছিলেন অধিনায়ক। লিটন কুমার দাসের সঙ্গে জুটিও গড়ে উঠেছিল। কিন্তু ৩১ বলে ২৩ রান হতেই ঘটে বিপত্তি। লিটনের ভুলে রানআউট তামিম। ৪২ রানে ওপেনিং জুটি ভাঙলেও দ্বিতীয় উইকেটে জমে ওঠে ব্যাটিং। লিটনের সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্ত ৯৬ বলে ১০১ রানের জুটি করেন। লিটন আউট ৭০ রানে। এই রানে একটি মাইলফলকও পেয়েছেন তিনি। শাহরিয়ার নাফীসের সঙ্গে যৌথভাবে দ্রুততম দুই হাজার রানে পৌঁছালেন লিটন। ৬৪ ম্যাচে ১৯৪৫ রান ছিল তাঁর। ৫৫ রান করতে হতো মাইলফলক পেতে। এক দিনের ক্রিকেটে দুই হাজার রানে যেতে শাহরিয়ার নাফীসেরও লেগেছিল ৬৫ ইনিংস। দুর্দান্ত ছন্দে থাকা শান্ত খেলেন ক্যারিয়ারসেরা ৭৩ রানের ইনিংস। শেষ পাঁচ ইনিংসে তিন ফিফটি শান্তর। অথচ আগের ১৫ ইনিংসে কোনো হাফ সেঞ্চুরি ছিল না তাঁর। ৫৯ বলে ৫০ স্পর্শ করেন তিনি। ইংলিশদের বিপক্ষে ৭০ বলে ৬৬ রান ছিল তাঁর আগের সেরা। শান্তর আউটের সময় দলের রান ছিল ৪ উইকেটে ১৯০। তাওহিদ হৃদয় ও মুশফিকের রেকর্ড গড়া ১২৮ রানের জুটিতে বিরাট সংগ্রহ পায় দল। এক রানের আক্ষেপ নিয়েই শেষ করতে হয় তাওহিদকে। প্রথম ম্যাচে ৯২ করা মিডলঅর্ডার এ ব্যাটার গতকাল করেন ৪৯ রান। কিন্তু সব আক্ষেপ মুছে গেছে ৬ উইকেটে দলের ৩৪৯ রানে।