শান্তি বজায় রাখতে এবার তৃণমূলে আ.লীগ


‘বিশৃঙ্খলার চেষ্টা প্রতিহত করে শান্তি বজায় রাখতে’ ইউনিয়ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ আজ। এতে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগ দেবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও। ইতোমধ্যে জেলা ভাগ করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সমাবেশে অংশ নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশের ৪০ জেলায় দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে ৫৩ কেন্দ্রীয় নেতাকে। যেসব জেলায় কেন্দ্রীয় নেতারা যাবেন না সেখানে জেলা নেতাদের পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ-সদস্যদের অংশগ্রহণে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে রাজধানী ঢাকায় প্রতিটি থানা-ওয়ার্ডে সতর্ক অবস্থানে থাকবেন ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ফাঁকা মাঠ পেলে আবারও নৈরাজ্য ও সহিংসতা করতে পারে। ফলে জনগণের শান্তি এবং জানমালের নিরাপত্তায় তারা মাঠে থাকবেন। এ ধরনের কর্মসূচি নির্বাচন পর্যন্ত চলবে। তবে এগুলো তাদের পালটাপালটি কর্মসূচি নয় বলেও দাবি আওয়ামী লীগ নেতাদের। শুক্রবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকব। ভালোর জন্য প্রস্তুতি নেব, খারাপের জন্য সতর্ক থাকব। বিএনপির সঙ্গে পালটাপালটি নয়, আমাদের নিজস্ব কর্মসূচি আছে। তিনি বলেন, বিএনপি এক বছর ধরে প্রকাশ্যে মাঠে এসেছে, বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে, তারা অনেক বড় বড় কথা বলেছে। আমরা সন্ত্রাসের আশঙ্কায় শান্তি সমাবেশ করছি। যতক্ষণ বিএনপি আন্দোলন করবে, আমরা শান্তি সমাবেশ কর্মসূচি পালন করব। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের জন্য কী করেছে এবং বিএনপি-জামায়াত রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকতে মানুষের সঙ্গে কী আচরণ করেছে সেগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরব। পাশাপাশি আন্দোলনের নামে কেউ যেন সহিংসতা করতে না পারে, জনগণের যানমালের ক্ষতি করতে না পারে, দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক থাকব। তিনি আরও বলেন, আমরা কারও কর্মসূচিতে বাধা দেব না। কাউকে আঘাত করব না। কিন্তু কেউ যদি জনগণের উপর আঘাত করে, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সেটা প্রতিহতের চেষ্টা করব। শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের বছরব্যাপী সাংগঠনিক কর্মসূচির অংশ হিসাবে শনিবার ‘বিএনপি-জামায়াত অশুভ শক্তির সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রমূলক অপরাজনীতির বিরুদ্ধে’ সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘শান্তি সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হবে। দলের কেন্দ্রীয়, জেলা, মহানগর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরা এ সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও দেশবাসীকে শান্তি সমাবেশে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে এ উপলক্ষ্যে আজ দেশের ৪০ জেলায় যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের ৫৩ কেন্দ্রীয় নেতা। ইউনিয়ন পর্যায়ে সমাবেশ ঘিরে জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। প্রতিটি থানা-ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কেএম হোসেন আলী হাসান বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিরাজগঞ্জের ৮২টি ইউনিয়নেও বিএনপি-জামায়াতের দেশব্যাপী নৈরাজ্য-সন্ত্রাসের প্রতিবাদে আমরা শান্তি সমাবেশ করব। এ জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের এমপিরা নিজ নিজ এলাকায় শান্তি সমাবেশ করবেন। জেলার সাবেক নেতৃবৃন্দকে বিভিন্ন থানার ইউনিয়নে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। শহরে মূল সমাবেশে ১৫টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, আমরা শান্তি সমাবেশ করব, কিন্তু বিএনপি-জামায়াত যদি কোনো ধরনের নৈরাজ্য করে তাহলে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রতিহত করা হবে। কোনো ধরনের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সহ্য করা হবে না।’ জেলা নেতাদের পাশাপাশি দলীয় সংসদ-সদস্যরাও নিজ নিজ এলাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার পরই অনেকে এলাকায় চলে গেছেন। কেউ কেউ শুক্রবারও গেছেন। এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি ও শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জগলুল হায়দার বলেন, আমার নির্বাচনি এলাকায় ২০টি ইউনিয়ন রয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক শান্তি সমাবেশ সফল করতে প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে গণসংযোগ করেছেন স্থানীয় নেতারা। প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যাপক সমাগম হবে। প্রতিটি ইউনিয়নে নেতাকর্মীরা রাজপথ দখলে রাখবে। গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগের আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে, সেজন্য এলাকাবাসী বঙ্গবন্ধুকন্যার প্রতি কৃতজ্ঞ। আজকের উপস্থিতির মধ্যে দিয়ে শ্যামনগর-কালিগঞ্জের মানুষ আবারও প্রমাণ করবে, তারা জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নে বিশ্বাসী, শান্তিতে বিশ্বাসী। এদিকে সারা দেশের মতো আজ রাজধানীতেও সতর্ক অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, প্রতিটি থানা ওয়ার্ডে আমাদের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকবেন। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ জানান, শনিবার বিকেল ৩টায় খিলগাঁও জোরপুকুড় মাঠে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।