শিকলে বেঁধে ২৫ দিন ধরে তরুণীকে ধর্ষণ, অধরা মাস্টারমাইন্ড ব্যারিস্টার মাসুদ


মোহাম্মদপুরে শিকলে বেঁধে ২৫ দিন ধরে তরুণীকে ধর্ষণের তদন্ত থমকে আছে ঘটনার মাস্টারমাইন্ড ব্যারিস্টার মাসুদকে ঘিরে। এদিকে দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদেও গ্রেফতাররা এ সংক্রান্ত কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই দিচ্ছে না পুলিশকে। তবে রিমান্ডে আসামি সালমা স্বীকার করেছেন, ধর্ষণের ভিডিও সে মাসুদের কাছে পাঠাত। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, সেই ভিডিও মাসুদ ডার্কওয়েবে বিক্রি করে দিতেন। এই বিষয়টি সামনে রেখেও চলছে তদন্ত। অন্যদিকে গ্রেফতার সালমার মোবাইল ফোনটি এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যারিস্টার মাসুদকে আইনের আওতায় আনা এবং সালমার মোবাইল ফোন উদ্ধার করা সম্ভব হলেই খোলাসা হবে ঘটনার সব রহস্য। সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, ঘটনার মাস্টারমাইন্ড ব্যারিস্টার মাসুদ দেশে নাকি বিদেশে- তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। মাসুদ আসলেই ব্যারিস্টার কি না? তার গ্রামের বাড়ি কোথায়? তিনি কোথায় আছেন- সবকিছু নিয়েই ধোঁয়াশায় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এদিকে ওই তরুণীও মাসুদের সম্পর্কে বিষদভাবে তথ্য দিতে পারছেন না। তাছাড়া প্রথমে ভগ্নিপতির মাধ্যমে মাসুদের সঙ্গে পরিচয়ের কথা বললেও ওই তরুণী সেই কথা থেকেও সরে এসেছেন। এখন বলছেন, নিজেই মাসুদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন। তাছাড়া ওই তরুণী মোহাম্মদপুরের ওই ফ্ল্যাটেই নন, ব্যারিস্টার মাসুদের সঙ্গে প্রায় ৭ বছর ধরে নগরী ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকার আরও ৫টি ফ্ল্যাটে থেকেছেন। তার সব খরচ বহন করতেন মাসুদ। ধর্ষণের ঘটনায় তরুণীর করা মামলায় গ্রেফতার চার আসামিকে দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ে ১৬ নম্বর সড়কে ৩৯/৪১ নম্বর প্লটে ১১তলা ভবনের পঞ্চমতলার একটি ফ্ল্যাটে ওই লোমহর্ষক ধর্ষণকাণ্ড ঘটে। গত ২৯ মার্চ রাতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে ওই ফ্ল্যাট থেকে শিকলবন্দি অবস্থায় ভুক্তভোগী এক তরুণীকে (২৩) উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ফ্ল্যাটে তরুণীকে দেখাশোনা করতেন সালমা ওরফে ঝুমুর। পরে চারজনের নাম উল্লে­খ করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন ওই তরুণী। এরমধ্যে সালমা ওরফে ঝুমুর (২৮), আবিদ তাসিন সান (২০), সালমান আহমেদ জয় ওরফে রকি (২৭) ও আতিক রহমান হিমেলকে (২৭) পুলিশ গ্রেফতার করে। ভুক্তভোগী তরুণী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে বৃহস্পতিবার গ্রামের বাড়িতে গেছেন। রিমান্ডে গ্রেফতার সালমা জানিয়েছেন, সানের সঙ্গে তরুণীর প্রেমের সম্পর্কের জেরে ব্যারিস্টার মাসুদের পরিকল্পনায় এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ভুক্তভোগী তরুণী ও গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তরুণীর সঙ্গে সানের প্রেমে বাধা দেওয়া থেকে শুরু করে গোপনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ এবং তরুণীকে পর্নো ভিডিও তৈরিতে বাধ্য করার পেছনে মাস্টারমাইন্ড ছিলেন ব্যারিস্টার মাসুদ। ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার চার আসামিকে ৩ দিন ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেও ব্যারিস্টার মাসুদের বিষয়ে কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। এ ব্যাপারে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আজিজুল হক বলেন, আসামিদের দাবি মাসুদ বিদেশে আছেন। তবে আমাদের ধারণা, তিনি দেশেই আছেন। তাকে আইনের আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি। মাসুদকে গ্রেফতার করা গেলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে, পর্নো ভিডিওগুলো তিনি কী করতেন? ডার্কওয়েবে বিক্রি করেছেন কি না, সেই বিষয়েও তদন্ত চলমান রয়েছে।