বিএনপির আন্দোলন জোরদারে তৃণমূলে কেন্দ্রীয় নেতারা


যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা আজ। তৃণমূলে এ কর্মসূচির মধ্য দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হচ্ছে বলে নেতারা জানিয়েছেন। এ লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটগুলো। হাইকমান্ডের নির্দেশে নিজ নিজ এলাকায় উপস্থিত থেকে পদযাত্রায় অংশ নেবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। কর্মসূচি সফল করতে কেন্দ্র থেকে নানা দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। অতীতের মতো শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা করার বিষয়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মূল ব্যানারে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাড়া অন্য কারও ছবি ব্যবহার করা যাবে না। তৃণমূলে পাঠানো এক আদেশে বিষয়টি জরুরিভাবে উল্লেখ করে বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বলা হয়েছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। ‘গ্যাস, বিদ্যুৎ, চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা বাস্তবায়নের’ দাবিতে হবে এই পদযাত্রা। কর্মসূচিকে ঘিরে নেতাকর্মীদের নতুন করে গ্রেফতার শুরু করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। দলটির দাবি, গত তিন দিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে গ্রেফতার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘১০ দফা ও জনগণের জীবিকার বিভিন্ন সমস্যা এবং সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, জনদুর্ভোগের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণআন্দোলন নস্যাৎ করতে সরকার দমনপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-হয়রানি করে আন্দোলনের কর্মসূচি বানচাল করতে চায় সরকার। শনিবার (আজ) দেশব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা ও রোববার (আগামীকাল) ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির পদযাত্রার কর্মসূচিকে পণ্ড করতে নতুন করে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার শুরু করেছে। তবে হামলা-মামলা-গ্রেফতার করে আন্দোলন দমানো যাবে না।’ একাধিক নেতা জানান, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপেদষ্টা, সম্পাদক, সহসম্পাদক ও নির্বাহী কমিটির সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় উপস্থিত থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রায় অংশ নিতে বলা হয়েছে। যাতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের পেয়ে আরও উজ্জীবিত হন। এজন্য অধিকাংশ নেতা ইতোমধ্যে নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন। এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশের নামে পালটা কর্মসূচি দিয়েছে। এজন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি কোনো ধরনের বিবাদে না গিয়ে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি সফল করতে বলা হয়েছে। সব ইউনিয়নে পদযাত্রা হয়েছে কিনা কেন্দ্রীয় দপ্তর তা পর্যবেক্ষণ করবে। এদিকে দপ্তর সূত্র জানায়, বিএনপির নির্বাহী কমিটি, সাবেক সংসদ সদস্য, সংসদ সদস্য প্রার্থী, জেলা ও মহানগর নেতাদেরও কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে তাদের নিজ নিজ এলাকায় উপস্থিত থেকে কর্মসূচিতে অংশ নিতে বলা হয়েছে। এদিকে পদযাত্রা কর্মসূচি সফলে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে তৃণমূল নেতারা। লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়নে একযোগে একই সময়ে পদযাত্রা করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খুব শান্তিপূর্ণভাবে ব্যাপক সমাগমের মধ্য দিয়েই এ কর্মসূচি পালিত হবে। আমার বিশ্বাস এই কর্মসূচিতে জনগণ ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হবে। কারণ এ আন্দোলন এখন বিএনপির আন্দোলন নয়। জনগণের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।’ বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘ইউনিয়ন পর্যায়ের এ কর্মসূচি নিয়ে প্রান্তিক নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। এটিই আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার পতনের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন, গ্রাম পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন পর একটা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পেয়েছে। এতে তারা উল্লসিত। আশা করা যায়, এ কর্মসূচিতে সর্বাধিক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ থাকবে।’ জানা গেছে, আগামীকাল রোববার পূর্বঘোষিত ঢাকা মহানগর উত্তরের পদযাত্রা থেকে আবারও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে। সেক্ষেত্রে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে আবারও পদযাত্রা কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এদিকে সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দল ও জোটের আজকের কর্মসূচি অনেকটা ঢাকামুখী। কারণ হিসাবে নেতারা জানান, বিএনপির মতো তাদের ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি করার মতো সাংগঠনিক অবস্থা নেই। তাই তারা রাজধানীতে কর্মসূচি পালন করবেন। কেউ কেউ আজ পালন না করে আগামীকাল রাজধানীতে পদযাত্রা পালনেরও ঘোষণা দিয়েছে। জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে আজ সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত পদযাত্রা করবে সাতদলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর নতুনবাজারের (বাঁশতলা) প্রধান সড়ক থেকে পদযাত্রা বের করবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি। পদযাত্রাটি বাড্ডা লিংক রোড মোড়ে গিয়ে শেষ হবে। এছাড়া ১২ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা কয়েকটি জেলার ইউনিয়নে পদযাত্রা করবে। এ জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, সিলেট, নড়াইল, নোয়াখালীসহ জোটের শীর্ষ নেতাদের নিজ এলাকার ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করা হবে। গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, চার দলের বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য ও ১৫ সংগঠনের সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোটের পদযাত্রা কর্মসূচি পালনের কথা রয়েছে। এদিকে আজ না করে আগামীকাল বিকাল ৩টায় বিজয়নগর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত পদযাত্রা করবে ১২ দলীয় জোট। ফের যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াত : গত বছরের ডিসেম্বরে সরকার পতনের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট। প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল যুগপৎভাবে পালন করে জামায়াতে ইসলামীও। পরে দলটির আমিরকে গ্রেফতার ও গণমিছিলে হামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়ে কোনো মন্তব্য না করার কারণে বিএনপির সঙ্গে মনোমালিন্য হয় জামায়াতের। এরপর গণঅবস্থান, বিক্ষোভ সমাবেশসহ কয়েকটি কর্মসূচিতে জামায়াতকে মাঠে দেখা যায়নি। তবে আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। ‘শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ইসলামবিরোধী অধ্যায় প্রত্যাহার, বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য কমানো এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে’ এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর অংশ হিসাবে রাজধানীতে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটসহ আরও এক স্থান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করার কথা রয়েছে। একইদিন এ কর্মসূচি পালন যুগপৎ আন্দোলনেরই অংশ বলে জানা গেছে।