আজ বিশ্ব থাইরয়েড দিবস দেশের ৫ কোটি মানুষ থাইরয়েড আক্রান্ত


দেশের মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষ বিভিন্ন ধরনের থাইরয়েড সমস্যায় আক্রান্ত। সে হিসাবে দেশের পাঁচ কোটি মানুষ এ সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু থাইরয়েডে আক্রান্ত অর্ধেকেরও বেশি মানুষ জানেন না তারা এ সমস্যায় ভুগছেন। আক্রান্তদের বেশির ভাগই গ্রামে বাস করেন। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব থাইরয়েড দিবস ২০২৪। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘থাইরয়েড রোগ, অসংক্রামক রোগ’। ২০০৯ সাল থেকে বিশ্বে দিনটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে উদযাপিত না হলেও থাইরয়েড রোগসংশ্লিষ্ট সংগঠন থাইরয়েড টাস্কফোর্স, বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস) কয়েক বছর নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করছে। এ ধারাবাহিকতায় শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় চিকিৎসকরা জানান, থাইরয়েড গ্রন্থি গলার সামনের দিকে প্রজাপতিসদৃশ একটি গ্রন্থি, যা ঘাড়ের সামনের দিকে শ্বাসনালীর চার পাশে আবৃত থাকে। গ্রন্থিটি ছোট হলেও এর কার্যকারিতা ব্যাপক। শরীরে থাইরয়েড হরমোন কম উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিজম এবং বেশি উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপারথাইরয়েডিজম। থাইরয়েড সমস্যা হলে শরীরে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এ অবস্থায় থাইরয়েডের লাগাম টানতে নবজাতক জন্মের পর দ্রুত থাইরয়েড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে বিপুল জনগোষ্ঠী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। এর মধ্যে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি মানুষ থাইরয়েড জটিলতায় ভুগছেন। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের প্রায় ২ শতাংশ এবং পুরুষদের প্রায় শূন্য দশমিক ২ শতাংশ হাইপারথাইরয়েডিজম (হরমোনের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা) রোগে ভোগেন। আর ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ নারীদের মধ্যে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হারে হাইপোথাইরয়েডিজম (হরমোনের ঘাটতিজনিত) সমস্যা থাকতে পারে। তাছাড়া প্রায় ৭ শতাংশ মহিলা ও পুরুষ সাবক্লিনিক্যাল হাইপোথাইরয়েডিজমে ভুগে থাকেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, নবজাতক শিশুদেরও থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতিজনিত সমস্যা হতে পারে এবং তার হার ১০ হাজার জীবিত নবজাতকের মধ্যে দুই থেকে আটজনের হতে পারে। আবার বাড়ন্ত শিশুদের থাইরয়েড হরমোন ঘাটতিতে ভুগতে পারে। যা শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং পরবর্তী সময়ে মেধার উন্নতি করা সম্ভব হয় না। আবার হরমোনের পরিমাণ স্বাভাবিক থেকেও থাইরয়েডের গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। সাধারণত আয়োডিনের অভাবে গলাফোলা রোগ হয়ে থাকে। এন্ডোক্রাইন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ভ্রুণ অবস্থা থেকে আমৃত্যু থায়রয়েড হরমোনের প্রয়োজন অপরিহার্য। শরীরে এ থাইরয়েড হরমোনের আবার একটা নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। থাইরয়েড হরমোন কম বা বেশি নিঃসৃত হলে শরীরে বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি করে। পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে এ রোগের আধিক্য বেশি দেখা যায়। পুরুষ ও নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যে থাইরয়েড হরমোনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে হরমোনটির তারতম্যের কারণে বন্ধ্যত্ব পর্যন্ত হতে পারে। গর্ভকালীন মা ও গর্ভস্থ শিশুর নানাবিধ জটিলতা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও হরমোনের তারতম্যের জন্য গলগন্ড রোগ, শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, শরীর মোটা হওয়া, ক্ষয় হওয়া, মাসিকের সমস্যা, ত্বকের সমস্যা, হার্টের সমস্যাসহ চোখ ভয়ংকরভাবে বড় হয়ে যেতে পারে। বারডেম জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ফারুক পাঠান বলেন, রোগটি থেকে বাঁচতে হলে আয়োডিনযুক্ত লবণ খেতে হবে। গর্ভাবস্থাসহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে রেডিয়েশন থেকে দূরে থাকতে হবে। ঘ্যাগ বা অন্য কোনো কারণে থাইরয়েড বড় হয়ে গেলে বা ক্যানসার হলে সার্জারির মাধ্যমে কেটে ফেলতে হবে। কোনো শিশু বা বয়স্কদের অবর্ধন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হলে, ঠাণ্ডা বা গরম সহ্য করতে না পারলে, বুক ধড়ফড় করলে, খাওয়া ও রুচির সঙ্গে ওজন গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।