খেলাপি ঋণ এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা


# মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা # বিদায়ী বছরের শেষ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের হার নিম্নগামী দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ বেড়ে গিয়েছিল অস্বাভাবিকভাবে। এটি কময়ে আনতে পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে ছাড় দেওয়া হয় ঋণ পরিশোধে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সুবিধার ফলে এখন কিস্তির ৫০ শতাংশ অর্থ জমা দিলে খেলাপি হচ্ছেন না কেউ। এর আগে খেলাপির তালিকা থেকে বাদ পড়তে কিস্তির ৭৫ শতাংশ অর্থ জমা দিতে হতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানামুখী এসব পদক্ষেপ কাজে আসতে শুরু করেছে। সদ্য বিদায়ী বছরের শেষ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের হার ছিল নিম্নগামী। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের চেয়ে ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমেছে ১৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। যদিও বছরের ব্যবধানে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিজ্ঞাপন বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, সদ্য বিদায়ী বছরের শেষ প্রান্তিক (ডিসেম্বর শেষে) শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। বিতরণ করা এসব ঋণের মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। ফলে বিতরণ করা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশই খেলাপি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। যা ছিল মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৭ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। তবে বছরের শেষ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কিছুটা ইতিবাচক ধারায় আসে তার আগের প্রান্তিক থেকে। অর্থাৎ ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণ ছিল নিম্নগামী। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। আর একই বছরের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ কমে দাঁড়ায় এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকায়। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের চেয়ে ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমেছে ১৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারিসহ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শিল্পে উৎপাদন ঠিক রাখতে নানা সুবিধা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আশানুরূপ কমেনি খেলাপি ঋণ। যদিও বছরের শেষ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের হার নিম্নগামী ছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া শর্তের কারণে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হচ্ছে বলে মত তাদের। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর প্রান্তিক থেকে ডিসেম্বর প্রান্তিক পর্যন্ত তিন মাসে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৪১ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। একই সময়ে অর্থাৎ তিন মাসে খেলাপি ঋণ কমেছে ১৩ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। একই সময়ে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) ঘাটতি কমেছে দুই হাজার ৫২০ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ে খেলাপি ঋণের মধ্যে মন্দ ঋণের পরিমাণ ৮৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ বা এক লাখ ৬ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের মধ্যে ৪৬ দশমিক ৭৯ শতাংশই সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোয়। এসব ব্যাংকগুলোর খেলাপির পরিমাণ ৫৬ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২০ দশমিক ২৮ শতাংশ। এটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে বহুগুণ বেশি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে খেলাপির পরিমাণ তিন শতাংশ স্টান্ডার্ড। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফের ঋণের সব অর্থ পেতে সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি ব্যাংকে ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার শর্ত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে ব্যাংক খাতের প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণের কথা ছিল ৮৪ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে সক্ষম হয়েছে ৭৩ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। ঘাটতি রয়েছে ১১ হাজার ৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা বা মোট প্রভিশন ঘাটতির ৮০ শতাংশ। এছাড়া দুই হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে। খেলাপি ঋণের বিষয়ে অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপি কমিয়ে আনতে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগুলো হতে হবে দীর্ঘস্থায়ী। যাতে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ, পুনঃতফসিল, প্রভিশন ঘাটতি কমে আসে। এসব সমস্যা সমাধানে ব্যাংকিং কমিশন করা উচিত। কমিশনের মাধ্যমে এর আগে খেলাপি সমস্যায় সমাধান এসেছিল।